টাকা থাকতেও ফিতের ফাঁসে সৌধ সংস্কার
কেন্দ্রের দেওয়া টাকা পড়ে আছে। কী কী করতে হবে, পরিকল্পনা করেই তার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু স্রেফ লাল ফিতের ফাঁসে আটকেই রাজ্যের ন’টি জায়গার প্রাচীন সৌধ সংস্কারের কাজ শিকেয় উঠেছে।
প্রায় এক বছর ধরে বকেয়া টাকা না-পেয়ে ওই সব প্রাচীন সৌধ সংস্কারের কাজে যুক্ত ঠিকাদারেরা হতাশ। বারবার হেরিটেজ কমিশন, রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব-সহ সরকারের তাবড় কর্তাদের দোরে দোরে গিয়ে বকেয়া টাকা দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। ফল হয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁরা সংস্কারের কাজই বন্ধ করে দিয়েছেন। হেরিটেজ কমিশন সূত্রের খবর, ঠিকাদারেরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় সৌধ সংস্কারের খরচ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি এমনই যে, নতুন করে কোনও সৌধ সংস্কারে হাত দিতে সাহস পাচ্ছেন না কমিশন-কর্তারা। মাঝপথে আটকে যাওয়ায় সংস্কারের কাজও ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।
রাজ্যের যে-ন’টি জায়গায় সৌধ সংস্কারের কাজ শিকেয় উঠেছে, শ্রীরামপুরে ডেনিশ গভর্নর হাউস তার অন্যতম। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত ডেনিশ কলোনি গড়ে উঠেছিল শ্রীরামপুরে। ডেনমার্ক সরকারের সহায়তায় সম্প্রতি সেখানে প্রাচীন শহর চিহ্নিত করে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ডেনমার্কের সহায়তায় ডেনিশ গভর্নর হাউস সংস্কারের পরে সেখানে একটি জাদুঘর গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে সরকারের। বকেয়া টাকা না-মেলায় বছর ঘুরতে চলেছে। সংস্কারের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ঠিকাদারেরা। একই ভাবে বন্ধ রয়েছে নদিয়ার পঞ্চরত্ন শিবমন্দির, হুগলির লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দির, বীরভূমের ইমামবাড়া, হাওড়ার নারায়ণ পাতিহাল, উত্তর দিনাজপুরের তারাসুন্দরী মন্দির ও প্রমথেশ্বর জিউ মন্দির, উত্তর ২৪ পরগনার গোবিন্দ মন্দির এবং বাঁকুড়ার ধারাপাত এলাকার প্রাচীন মন্দির সংস্কারের কাজও।
সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদারেরা জানান, গত বছরের মার্চ থেকে সব মিলিয়ে এক কোটি ২৬ লক্ষেরও বেশি টাকা বকেয়া রয়েছে। একটি ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধারের মতে, “এখানে ছোট ছোট ঠিকাদার কাজ করছেন। প্রাচীন সৌধ সংস্কারের কাজে বিশেষ লাভ থাকে না। ভালবাসা থেকেই অনেক ঠিকাদার এই কাজ নেন। কিন্তু আমাদের পুঁজি কম। ঠিক সময়ে বকেয়া টাকা না-পেলে কাজ চালানো অসম্ভব।”
কিন্তু কেন এমন দেরি?
হেরিটেজ কমিশন সূত্রের খবর, বাম আমল থেকেই তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অধীনে থাকা এই বিভাগে হিসাব রক্ষার জন্য পৃথক কর্মী রাখা হয়নি। ফলে কমিশনেরও অর্থ খরচের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। সব ফাইল তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর ঘুরে যায় অর্থ দফতরে। সেখান থেকে টাকা ছাড়লে তা ফের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর ঘুরে আসে কমিশনে। তবেই ঠিকাদারদের টাকা দেওয়া হয়। কমিশনের কর্তাদের অভিযোগ, হেরিটেজ দফতরের গুরুত্ব অর্থ দফতরের অন্যান্য কাজের চেয়ে অনেক কম। তাই ফাইলের পাহাড়ে ডুবে রয়েছে হেরিটেজ কমিশনের অর্থ সংক্রান্ত ফাইল। আর এই ঢিলেমিতেই কেন্দ্রের টাকা এসে যাওয়া সত্ত্বেও আটকে রয়েছে ঠিকাদারদের বকেয়া মেটানোর কাজ। কমিশনের এক কর্তার মতে, “বকেয়া টাকা ঠিক সময়ে না-মেটালে খরচ তো বেড়ে যায়ই! এতে প্রাচীন সৌধ সংস্কারের উদ্দেশ্যও নষ্ট হয়ে যায়।”
একটি উদাহরণও দিয়েছেন ওই কমিশন-কর্তা। সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের কেলোমালে দু’টি পুরনো শিবমন্দির সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হেরিটেজ কমিশন। কত অর্থ বরাদ্দ করা হবে, তা নিয়ে যথারীতি সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়। ওই কর্তা বলেন, “গত অক্টোবরের বৃষ্টিতে হুড়মুড়িয়ে ওই দু’টি মন্দির ভেঙে পড়েছে। কয়েক মাস দেরি হওয়ায় ওই মন্দির দু’টি সংস্কারের খরচ প্রায় ১০ গুণ বেড়ে গেল।” তবে পরিস্থিতির যে খুব শীঘ্রই পরিবর্তন হবে এবং সংস্কারের কাজও ফের দ্রুত শুরু হবে, সেই ব্যাপারে আশাবাদী তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিব অত্রি ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “ঠিকাদারদের বকেয়া টাকা মেটানোর ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিল। আমরা সেই সমস্যা চিহ্নিত করেছি। খুব শীঘ্রই বকেয়া টাকা মেটানো হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.