ইতিমধ্যেই প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিশু সংসদ চালু হয়েছে। এ বার পড়ুয়াদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণ বাড়াতে উচ্চ প্রাথমিকেও শিশু সংসদ চালু করতে উদ্যোগী হল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সর্বশিক্ষা মিশন। এই শিশু সংসদ চালু করার ব্যাপারে মথুরাপুর ২ ব্লকে কৃষ্ণচন্দ্র হাইস্কুলে চার দিন ধরে শিক্ষকদের নিয়ে হয়ে গেল এক কর্মশালা। ১৭ ফেব্রুয়ারি কর্মশালার উদ্বোধন করেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সচিব অধ্যাপিকা নবনীতা চট্টোপাধ্যায়। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন জেলা প্রজেক্ট অফিসার সুজিত মাইতি।
কী এই শিশু সংসদ? সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংসদের মতোই প্রতিটি ক্লাসে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে নির্বাচন করা হবে কোনও পড়ুয়াকে। একই ভাবে অন্যন্য পড়ুয়ারা ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে খাদ্য, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও শিক্ষা ও পরিবেশ মন্ত্রীকে। প্রতিটি মন্ত্রকের অধীনে একটি স্থায়ী সমিতি থাকবে। তার অধীনে আরও পাঁচ জন করে সদস্য থাকবে। দফতরের কাজে স্থায়ী সমিতিই সক্রিয় ভূমিকা নেবে। বিভিন্ন দফতরের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কি না, তা দেখাশোনা করাই হবে মন্ত্রীদের কাজ। যেমন খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবে মিড ডে মিল বা তার রান্না ঘর পরিষ্কার রয়েছে কি না, পানীয় জল বা সাবান রয়েছে কি না ইত্যাদি দেখা। এ বিষয়ে কোনও গাফিলতি থাকলে তা প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর কথা তার। একই ভাবে শিক্ষা ও পরিবেশমন্ত্রী দেখবে, স্কুল এবং এলাকার পরিবেশ ঠিক রয়েছে কি না। দেওয়াল পত্রিকা ঠিক করে বেরোচ্ছে কি না ইত্যাদি।
এত দিন প্রাথমিকে এই ব্যবস্থা থাকলেও উচ্চ প্রাথমিকে তা ছিল না। এ বার ঠিক হয়েছে, স্কুল বা গ্রাম সংক্রান্ত কোনও সমস্যায় পড়ুয়ারা প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের মাধ্যমে শিক্ষক ও পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবে। আর প্রতি শনিবার প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে একটি পর্যালোচনা সভার আয়োজন করতে হবে।
এই চার দিনের ওই কর্মশালায় ঠিক হয়, স্কুলে শিশু সংসদ গঠনের আগে স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা গ্রাম শিক্ষা সমিতি ও মাতা শিক্ষা সমিতির সদস্যদের সভা ডেকে শিশু সংসদের গুরুত্বের বিষয়ে আলোচনা করবেন। কাউকে প্রধান মন্ত্রী নির্বাচন করতে গেলে ওই শ্রেণির পড়ুয়াদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট পেতে হবে ওই পড়ুয়াকে। ভোটের সময়ে প্রধান শিক্ষক ও পঞ্চায়েত প্রধান উপস্থিত থাকবেন। আর ওই মন্ত্রীসভার মেয়াদ থাকবে এক শিক্ষাবর্ষ। ওই কর্মশালার আয়োজক তথা কৃষ্ণচন্দ্র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, “মথুরাপুর ১, ২ ব্লকের ৭১টি স্কুলের প্রায় ৫০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ওই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন। কলেজের মতো স্কুলেও শিশু সংসগ গঠন করা হবে। যে স্কুলগুলিতে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন হবে না, সেগুলিতেও সংসদ ভূমিকা নিতে পারবে।” নবনীতাদেবী বলেন, “সংসদ গঠন হলে পড়ুয়াদের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে। ছোট থেকেই নেতৃত্ববোধ গড়ে উঠবে। সমাজ সম্পর্কে সচেতনতাও বাড়বে।” |