বদলা না বদল? মাণ্ডবী নদীর তীরে আই লিগে ইস্টবেঙ্গলের এই ডু অর ডাই ম্যাচের শিরোনাম হতেই পারে তিন বছর আগে বাংলার রাজনীতিতে ঝড় তোলা স্লোগানের এই শব্দ দুটোই!
কেন বদলা? তা হলে পিছিয়ে যেতে হবে চার বছর আগে। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে কটকে ফেডারেশন কাপ জিতে এসে টোলগে ওজবে বলেছিলেন, “ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের হাসি মুখটাই ফুটবলার জীবনের প্রাপ্তি।” তার পরের দু’বছরে গঙ্গা দিয়ে যেমন অনেক জল বয়ে গিয়েছে তেমনই দূরত্ব বেড়েছিল ইস্টবেঙ্গল আর তার অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারের। অনুশীলনে সতীর্থ গুরবিন্দরের সঙ্গে হাতাহাতি, ঘরোয়া লিগে হ্যাটট্রিক করেই সবুজ-মেরুন নৌকায় চড়ে বসা, টোকেন নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পরে লাল-হলুদ কর্তাদের সঙ্গে মিটমাট করে ক্লাব পরিবর্তন - এ রকম ঘটনার ঘনঘটার অন্ত নেই টোলগে ওজবের জীবনে। বছরের শুরুতে শহর ছাড়ার আগে এ দিনের গোলদাতা বলে গিয়েছিলেন, “ডেম্পোর জার্সি গায়ে প্রমাণ করে দেব আমি ফুরিয়ে যাইনি।”
কলকাতার তিন প্রধানে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া স্ট্রাইকার এ দিন কি গোয়ার মাটিতে লাল-হলুদের বিরুদ্ধে গোল করে সেই বদলা নিলেন? খেলা শেষে ড্রেসিংরুম থেকে বেরোনোর পথে ফোনে টোলগের কথায় আবার বদলের সুর। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, গোল করে আপনিই তো এ বারের মতো ইস্টবেঙ্গলের আই লিগ জয়ের কফিনে পেরেকটা প্রায় পুঁতে দিলেন। জবাবে টোলগে অবাক করে দিয়ে বলতে শুরু করলেন, “ফুটবলে এ রকম হয়েই থাকে। কেউ আজ জিতবে। কেউ কাল। ইস্টবেঙ্গল অনেক বড় দল। ওদের লাইনচ্যুত করার আমি কেউ নই। আমি কেবল গোলটাই করেছি।” বলেই ফোন কেটে দেন টোলগে। |
|
|
টোলগের (বাঁ দিকে) গোলেই স্বপ্ন শেষ কোলাসোর। |
|
কিন্তু এ দিন শুধুই তিনি গোল করলেন? বদলার রাস্তা ধরেননি! খেলার শুরু থেকেই তো লাল-হলুদ রক্ষণে ঢুকে ধাক্কাধাক্কি করছিলেন গুরবিন্দরের সঙ্গে। লাল-হলুদে থাকার সময় থেকেই তো ইস্টবেঙ্গলের এই পঞ্জাবি স্টপারের সঙ্গে তাঁর ‘অম্ল-মধুর’ সম্পর্ক গোটা কলকাতা ময়দানের কারও অজানা নয়। গোয়ার মাটিতেও যে সেটা ‘ফিল গুড’ পর্যায়ে গিয়েছে তা বলা গেল না। প্রথমার্ধের একদম অন্তিম লগ্নে ডেম্পো মাঝমাঠের একদম ধারে গোয়ার দলটির আফগান স্টপার হারুণ আমিরি ফাউল করলেন গুরবিন্দরকে। আর ডেম্পোর সেই কৌশলী উস্কানিতে সাড়া দিয়ে ফেললেন গুরবিন্দর। উঠে দাঁড়িয়েই আমিরিকে পাল্টা ধাক্কা দিলেন গুরবিন্দর। কাছেই ছিলেন টোলগে। দৌড়ে গিয়ে প্রথমে তিনি কাঁধ দিয়ে প্রথমে ধাক্কা দিলেন গুরবিন্দরকে। কিন্তু রেফারি বিষ্ণু চৌহান কাছে এসে গিয়েছেন বুঝতে পেরেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অভিনয় করতে নেমে পড়লেন। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে বিষ্ণু গুরবিন্দরকে লাল-কার্ড দেখালেও, ছাড় পেয়ে গেলেন আমিরি। হলুদ কার্ড দেখিয়ে তাঁকে সতর্কও করা হল না।
তা সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধে দশ জনের ইস্টবেঙ্গলকে পেয়েও সে ভাবে দাপট বাড়াতে পারেনি ডেম্পো। কেবল সত্তর মিনিটে জোয়াকিমের সেন্টার থেকে হেডে টোলগের গোলটা ছাড়া সে ভাবে দাগ কাটার মতো কোনও মুহূর্ত নেই আর্থার পাপাসের দলের খেলায়।
ম্যাচ শেষে হতাশা লাল-হলুদ কোচ আর্মান্দো কোলাসের গলায়। বলেই দিলেন, “এ বারের মতো আই লিগটা বোধহয় শেষ হয়ে গেল। রেফারির ওই লাল-কার্ডের সিদ্ধান্তেই লড়াই শেষ হয়ে গিয়েছিল আমাদের।” দলের সঙ্গে গোয়ায় যাওয়া ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকারও বলছিলেন, “শনিবারও ক্লাবের তরফে রেফারিং নিয়ে আই লিগের সিইও সুনন্দ ধরকে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। সেই ভোগান্তি কাটল না।” ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক মেহতাব হোসেনের গলাতেও একই সুর। বিমর্ষ গলায় বলছিলেন, “ভাবতে পারেন গুরবিন্দর লাল কার্ড দেখল। আর আমিরি ওকে মেরে পার পেয়ে গেল!” এখানেই না থেমে তাঁর সংযোজন, “আই লিগ জেতাটা কঠিন হয়ে গেল। অসম্ভবও বলা যেতে পারে। তবে শেষ দিন পর্যন্ত আমরা তাড়া করে যাব।”
আগামী শনিবার সামনে মোহনবাগান। ঐতিহ্যের ডার্বি। সেই ম্যাচ জিতে এই ড্যামেজ কন্ট্রোল করা যাবে? শুনে উত্তেজিত আর্মান্দো। বলছেন, “চিডির হ্যামস্ট্রিংয়ে আজ চোট লাগল। জোয়াকিমের নাক ফেটে রক্ত বেরোচ্ছিল। ফুটবলাররা বেশির ভাগ ক্লান্ত। গুরবিন্দরও নেই। লড়াই সত্যিই কঠিন হয়ে দাঁড়াল।”
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, খাবরা, অর্ণব, গুরপ্রীত, সৌমিক, তুলুঙ্গা (রাজু), মেহতাব, লোবো (লেন), জোয়াকিম, চিডি (মোগা), সুয়োকা। |