মহেন্দ্র সিংহ ধোনির যা ‘ভুলোমনা অধ্যাপকের মতো’ চালচলন, তাতে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে নেতৃত্ব থেকে এখনই সরিয়ে দেওয়া উচিত বলছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল।
নিউজিল্যান্ডে ভারত অধিনায়কের দল পরিচালনা দেখে অবাক চ্যাপেলের বক্তব্য, ধোনির নেতৃত্বের পদ্ধতির জন্যই জেতা টেস্ট হাতছাড়া হয়েছে ভারতের। এবং চ্যাপেলের পরামশর্, মাঠে কুঁকড়ে থাকা ধোনির চেয়ে ডাকাবুকো কোহলিকে টেস্টে নেতৃত্বের দায়িত্ব দিলে ভারতীয় ক্রিকেটের উপকারই হবে।
এক ক্রিকেট ওয়েবসাইটে নিজের কলামে চ্যাপেল তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় চাঁচাছোলা ভাষায় ধোনিকে আক্রমণ করেছেন। চ্যাপেলের বক্তব্য, “ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ধোনি দুর্দান্ত অধিনায়ক। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিনিশিং লাইনের ওপারে নিজের দলকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ওস্তাদ। কিন্তু টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসাবে মাঝে মাঝেই ও ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায়। তখন ওকে দেখে মনে হয়, ভুলোমনা কোনও অধ্যাপক যেন পার্কে বেড়াতে বেরিয়েছে।”
ধোনির এমন মানসিকতার জন্যই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট ড্র হয়েছে বলে মনে করেন চ্যাপেল। “ওর এই হাল ছেড়ে দেওয়া আচরণ বিপক্ষের ভাল ব্যাটসম্যানদের অনেক বেশি স্বাধীনতা এবং প্রচুর রান করার সুযোগ এনে দেয়। সে দিন যেমন ম্যাকালাম ও ওয়াটলিং হার বাঁচিয়েছিল। এ রকম পার্টানারশিপ ভারতের বিরুদ্ধে প্রায়ই হয়।”
ধোনিকে টেস্ট নেতৃত্ব থেকে অনেক আগেই সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন চ্যাপেল। তাঁর মতে, “২০১১-১২-য় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজের পরই ধোনিকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। টানা আটটা টেস্ট হারে ভারত। কতটুকুই বা লড়েছিল ওখানে। সেই সময়ে দলকে অনুপ্রাণিত করার কাজও করতে পারেনি ধোনি। যখন ক্যাপ্টেনের এই হাল হয়, তখন তাকে সরিয়ে দেওয়াটাই ভাল রাস্তা।” |
কিন্তু বিরাট কোহলিকেই কেন পছন্দ চ্যাপেলের? তাঁর মতে, “তখন হয়তো ছিল না, কিন্তু এখন একটা সঠিক বিকল্প ভারতের হাতে রয়েছে। সে বিরাট কোহলি। যুব দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা ওর আছে। সবচেয়ে বড় কথা, এখন এই বয়সেই ওর দায়িত্ব নেওয়া উচিত। ও একজন জাত ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেছে। ওয়াকা, বুলরিংয়ে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নিজের ব্যাটিং প্রতিভার প্রমাণও দিয়েছে ও। বিদেশে সাফল্য পেতে গেলে এমন একজন ক্যাপ্টেনই দরকার ভারতের, যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দলের বোলারদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারে।”
তবে চ্যাপেল নিশ্চিত নন যে, কোহলি নিজের ব্যাটিংয়ের মতো তাঁর নেতৃত্বেও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবেন কি না। লিখেছেন, “ও আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান বলেই যে আক্রমণাত্মক ক্যাপ্টেনও হবে, তার কোনও মানে নেই। যেমন রিকি পন্টিং। ব্যাটিংয়ের মতো নেতৃত্বে কিন্তু বেশি সাহসী হওয়ার প্রবণতা ছিল না ওর।” তবে কোহলিকে সাহসী ক্যাপ্টেন হয়ে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন প্রাক্তন অজি অধিনায়ক। তাঁর বক্তব্য, “ইশান্ত শর্মার বাইরের দিকের বলে রক্ষনাত্মক ফিল্ডিং না সাজিয়ে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজাতে হবে ওকে। ফিল্ডিং অনুযায়ী ইশান্ত যদি বল না করতে পারে, তা হলে অন্য বোলারকে বল দিতে হবে ওকে। মাঠে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সাহসী হতে হবে কোহলিকে।” চ্যাপেল মনে করেন, ধোনির চোটের ফলে কোহলির নেতৃত্বের ক্ষমতাকে পরখ করে নেওয়ার ভাল সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন ভারতীয় নির্বাচকরা। এই পরীক্ষায় কোহলি উতরে যেতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার। |