|
|
|
|
পাসোয়ানকে পাশে পাবে, আশায় বিজেপি
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৩ ফেব্রুয়ারি |
ভোটের আগে সমীক্ষার ফলে শুধু নয়, জোটের বিস্তার নিয়েও আশাবাদী এখন নরেন্দ্র মোদীর শিবির। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করায় বিহারে শরিক নীতীশ কুমারকে হারিয়েছে এনডিএ। আশা জাগাচ্ছে সেই বিহারই। বিজেপি-জোটে সামিল হওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করেছেন রামবিলাস পাসোয়ান।
সতর্ক বিজেপি আগাম ঘোষণায় যেতে রাজি না হলেও পাসোয়ানেরই লোকজনশক্তি পার্টির নেতা সুরজ ভান জানিয়েছেন, জোট-ঘোষণা এখন সময়ের অপেক্ষা। বিহারেই ওবিসি-দের মধ্যে কিছুটা প্রভাব রয়েছে, এমন একটি নতুন দলের সঙ্গে আজ সমঝোতা সেরে ফেলেছে বিজেপি। তাদের সঙ্গে একজোটে ৩টি আসনে লড়বে উপেন্দ্র কুশওয়াহার লোক সমতা পার্টি।
রাজনৈতিক ভাবে এটা বড় কোনও ঘটনা না হলেও একে শরিক না পাওয়ার সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতারা। তবে তাঁদের মতে, রামবিলাসকে পাশে পেলে ভোটের আগে সেটা হবে বড় প্রাপ্তি। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলের নেতা হয়েও রামবিলাস যদি বলেন, আদালত বেকসুর জানিয়ে দেওয়ার পরে মোদীকে নিয়ে তাঁর কোনও সমস্যা নেই, তবে সেটা আরও কিছু দলকে পাশে টানার পুঁজি হিসেবেই ব্যবহার করতে পারবে বিজেপি। বস্তুত, জোট-ঘোষণার আগেই তাঁর দলের নেতা সুরজ ভান আজ বলে দিয়েছেন, “আমাদের কাছে নরেন্দ্র মোদী আর কোনও ইস্যুই নয়। কারণ, আদালত তাঁকে ক্লিনচিট দিয়েছে।”
বিজেপি সূত্রের খবর, দু’দিন আগেই বিহারে আসন সমঝোতা নিয়ে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাসোয়ান। সব কিছু চূড়ান্ত হলে আগামী সপ্তাহেই দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে দেখা করে জোটের ঘোষণা করে দিতে পারেন লোকজনশক্তি পার্টির নেতা।
বিহারে এত দিন লালুপ্রসাদ যাদব ও কংগ্রেসের সঙ্গেই আসন সমঝোতা নিয়ে কথা হচ্ছিল পাসোয়ানের। কিন্তু সে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় এখন ভোটের হাওয়া বুঝে বিজেপি-মুখী হয়েছেন তিনি। যদিও কংগ্রেস ও লালুর পক্ষ থেকে এখনও চেষ্টা চলছে পাসোয়ানকে ধরে রাখার। তবে বিজেপি নেতৃত্ব আশাবাদী, খুব শীঘ্রই পাসোয়ানের সঙ্গে সমঝোতা হয়ে যাবে। তাঁর দলের নেতা সুরজ ভান আজ বলেছেন, “বিজেপি-র সঙ্গে লোকজনশক্তি পার্টির জোট হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এই ঘোষণা হবে।”
তবে বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিজেপি নেতারা এ নিয়ে মেপে কথা বলতে চাইছেন।
এই সমঝোতার নেপথ্যে থাকা বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী এ দিন পাসোয়ানের পক্ষে সওয়াল করতে বলেন, “পাসোয়ানের বিরুদ্ধে সিবিআই-কে অপব্যবহার করছে কংগ্রেস।” কেন্দ্রে মন্ত্রী থাকার সময় নিয়োগ কেলেঙ্কারি নিয়ে পাসোয়ানের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
স্বাভাবিক ভাবেই সমীকরণে এই বদল অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে লালু ও কংগ্রেসকে। লালু এ দিন বলেন, “পাসোয়ানের বিপদে আমি তাঁকে সাহায্য করেছি। এখন সাম্প্রদায়িক মোদীর বিরুদ্ধেই আমাদের সকলকে লড়তে হবে। নিশ্চয়ই তিনি বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলানোর মতো কাজ করবেন না।” আর কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “হাওয়ায় ভাসানো খবরের ভিত্তিতে মন্তব্য করব না।”
কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত হয়তো বিজেপি-র সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবেন না পাসোয়ান। আসন নিয়ে দর কষাকষির জন্যই তিনি লালু ও কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছেন মাত্র।
কিন্তু প্রশ্ন হল, ভোটের মুখে এমন কী হল, যে কংগ্রেস-লালুর সঙ্গ ছেড়ে বিজেপি-র সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেন পাসোয়ান? লালুর সঙ্গে বিবাদের সময় তাঁকে সঙ্গে পেতে চেয়েছিলেন নীতীশও। কেন নীতীশের সঙ্গেও গেলেন না তিনি?
এর অন্যতম কারণ, পাসোয়ান অন্তত ১০টি আসনে লড়তে চান এ বার। বর্তমান লোকসভায় তাঁর এক জনও সাংসদ নেই। তাই যথা সম্ভব বেশি আসনে লড়ে নিজে ও নিজের লোকজনদের জেতাতে মরিয়া তিনি। জামুই আসনে ছেলে চিরাগ ও সমস্তিপুর থেকে ভাই রামচন্দ্রকে প্রার্থী করতে চান তিনি। কিন্তু কংগ্রেস ওই আসন দু’টি ছাড়তে রাজি নয়। পাসোয়ানের দাবি মতো আসনও দিতে চায় না তারা। সে কারণেই বিজেপি-র সঙ্গে আসন নিয়ে দর কষাকষি শুরু করেছেন রামবিলাস। নীতীশ-বিদায়ের পর রামবিলাসের চাহিদামতো আসন দিতে অসুবিধে নেই বিজেপি-র। সব মিলিয়ে ৮টির মতো আসনে যাতে সমঝোতা হয়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিজেপি নেতৃত্বের আশা, ভোটের আগে নতুন শরিক জুড়তে শুরু করলে মোদীর পক্ষে হাওয়া আরও জোরালো হবে। তবে ১৯৯৬ থেকে ২০০৯ এর মধ্যে যুক্তফ্রন্ট, এনডিএ এবং ইউপিএ তিনটে জোটেই দেখা গিয়েছে রামবিলাসকে। কেন্দ্রে তিন জোটের মোট পাঁচটি সরকারে মন্ত্রী হয়েছেন তিনি। এ বারে রামবিলাস শেষ পর্যন্ত কোন নৌকোয় পা রাখবেন, জানেন তিনিই। |
|
|
|
|
|