|
|
|
|
সোশ্যাল মিডিয়া কেন অস্ত্র, তর্কে বলিউড
প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত • কলকাতা |
এ দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে ‘জলি এলএলবি’ বলে একটা ছবি বানিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন পরিচালক সুভাষ কপূর। এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ভিডিও আপলোড করে এক নতুন আইনি বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন অভিনেত্রী গীতিকা ত্যাগী।
শনিবার রাতে গীতিকা আনন্দবাজার পত্রিকাকে আরও দু’টো ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে গীতিকা
|
গীতিকা ত্যাগী |
|
সুভাষ কপূর |
উত্তপ্ত গলায় সুভাষকে যৌন হেনস্থার জন্য দোষারোপ করছেন। গীতিকা আরও একটি সাউন্ড ক্লিপও পাঠিয়েছেন সঙ্গে। তাতে একটি স্বীকারোক্তি শোনা যাচ্ছে। গীতিকার দাবি, সেই গলাটা সুভাষেরই।
সুভাষ কপূর এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। কিন্তু টুইটারে ঘটনাটা নিয়ে বলিউডের অনেকেই নিজেদের মধ্যে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছেন। গীতিকা বলছেন, “আইনজীবীর সঙ্গে আমি কথা বলছি। দু’-তিন দিনের মধ্যে এফআইআর করার সিদ্ধান্তটা নেব।”
কিন্তু তার আগে যে প্রশ্নটা নানা মহলে উঠছে, সেটা হল পুলিশের কাছে না গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও আপলোড করার অর্থ কী? গীতিকা যদি এফআইআর না করেন, তা হলে কি ইউটিউব ভিডিওর ভিত্তিতে পরিচালকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব?
আইনজীবী মহলে এ ব্যাপারে দু’রকম মতই রয়েছে। তরুণ তেজপালের ঘটনায় ই-মেলকে হাতিয়ার করেই সক্রিয় হয়েছিল পুলিশ। পরে অভিযোগকারিণী এফআইআর করেন। বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণী কারও নাম না করে একটি ব্লগে নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গড়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। যদিও তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। এবং তখনও ওই ব্লগকে ভিত্তি করে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করতে পারে কি না, তা নিয়ে দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল আইনি জগৎ।
গীতিকার এই ঘটনার ব্যাপারে মুম্বইয়ের নামী আইনজীবী বিভব কৃষ্ণ কিন্তু বলছেন, এ ভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করার প্রবণতা ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে। তরুণ তেজপাল বা বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের মামলার সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। “যা দেখানো হচ্ছে তা তো সত্যি না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরিচালক চাইলে অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারেন।”
গীতিকা পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন, “মামলা করে দেখাক। তা হলে ও আরও ঝামেলায় পড়বে।” তাঁর অভিযোগ, ২০১২-র ২৮ মে মাঝরাতে নেশার ঘোরে সুভাষ তাঁকে কুপ্রস্তাব দেন। এর দু’দিন পর ৩০ মে, গীতিকা তাঁর দুই বন্ধু দানিশ রাজা এবং অতুল সাভারওয়ালকে (‘আওরঙ্গজেব’ ছবির পরিচালক) নিয়ে সুভাষের কাছে যান। সেই কথোপকথনের ভিডিওই গীতিকা আনন্দবাজারে পাঠিয়েছেন বলে দাবি। গীতিকার আরও দাবি, “২৯ মে রাতে সুভাষের স্ত্রী ডিম্পল খারবান্দা আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। পুলিশে অভিযোগ না জানানোর জন্য উনি বারংবার অনুরোধ করেছিলেন আমাকে।” গোটা ঘটনাটার সঙ্গে কাস্টিং কাউচের কোনও যোগ নেই বলেও দাবি করেছেন গীতিকা।
বিষয়টা এখানেই এক প্রস্ত মিটে গিয়েছিল। কিন্তু গত ২৩ নভেম্বর তরুণ তেজপালের ঘটনাটা দেখে উত্তেজিত হয়ে সুভাষ কপূরের নাম করে টুইট করেন অতুল। গীতিকার দাবি, “পরের দিনই ডিম্পল আমাকে এসে বলেন, আমি যেন অতুলকে অনুরোধ করি টুইটগুলো ডিলিট করতে। আমার পাঠানো অন্য ভিডিওতে শুনতে পাবেন সে কথা।” ২৫ নভেম্বর গীতিকার সামনেই অতুলের সঙ্গে দেখা করেন ডিম্পল আর সুভাষ। গীতিকার দাবি, তাঁর আপলোড করা প্রথম ভিডিওটা ছিল সেই মিটিংয়ের।
কিন্তু নভেম্বর মাসের ভিডিও এত দিন পর আপলোড করা হল কেন? গীতিকার বক্তব্য, “আমি তিন মাস অপেক্ষা করেছিলাম। কারণ আমার ফিল্ম ‘হোয়াট দ্য ফিশ’ ২০১৩-র ১৩ ডিসেম্বর মুক্তি পায়। পরবর্তী ছবি ‘ওয়ান বাই টু’ মুক্তি পায় ৩১ জানুয়ারি। ভিডিওগুলো আগে রিলিজ করে আমি সস্তার প্রচার কুড়োতে চাইনি।”
এখন বলিউডে শুরু হয়ে গিয়েছে ঝগড়া। ‘পান সিংহ তোমর’-এর পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়া টুইটারে বলেছেন: “যদি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এতটুকু হৃদয় থাকে, তবে যেন তারা অতুল সাভারওয়ালকে বয়কট করে। ও সুভাষ কপূরের মানহানির দুষ্টচক্রে জড়িত।”
উত্তরে অতুল বলছেন, “কে কী বলছে, তাতে আমার মাথাব্যথা নেই। আমার বিশ্বাস আমার কাছে। এই ইন্ডাস্ট্রি পুরুষশাসিত। এখানে কোনও মহিলা এই ধরনের অভিযোগ আনলে, তার বিরুদ্ধেই কুৎসা রটানো হয়।”
দানিশ রাজার প্রতিক্রিয়া, “গীতিকা আর সুভাষ দু’জনেই আমার বন্ধু। আর কখনওই কাউকে বয়কট করার ডাক দেওয়া ঠিক নয়।” তবে দানিশ অবশ্য আর একটা কথাও বলছেন। তাঁর দাবি, “গীতিকা যখন প্রথম এই ঘটনাটা জানায়, তখন যৌন হয়রানির কথা বলেনি। কিন্তু দু’দিন পরে অতুলের সামনে গীতিকা দাবি করে যে, ওকে জোর করা হয়েছিল। কিন্তু তখনও ও এটা বলেছিল যে, সুভাষকে জোর দিয়ে বারণ করার পরে সুভাষ থেমে গিয়েছিল। তা হলে এটা যৌন হয়রানি হল কোথায়?”
গীতিকার উত্তর, “দানিশ আমাকে বলেছিল, আমার মামলাটা নাকি দুর্বল। ভেবেছিলাম ও আমার সত্যিকারের বন্ধু। এ বার যখন মামলা করব, তখন ওর নাম ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দেব।”
নিশ্চুপ এক জনই। তিনি সুভাষ কপূর। |
|
|
|
|
|