|
|
|
|
আডবাণীর বিবাহবার্ষিকীতেও সেই মোদী বিনে গীত নাই
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি
২৩ ফেব্রুয়ারি |
তিক্ততার দিন এখন অতীত। এতটাই অতীত যে, নিজের ৫০তম বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও নরেন্দ্র মোদীর ভূয়সী প্রশংসায় মুখর হলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।
আগামী পরশু অর্থাৎ ২৫ তারিখ, আডবাণীর বিবাহবার্ষিকী। কিন্তু আজ রবিবারেই অনুষ্ঠান হল। বাড়ির পিছনের লনে সুসজ্জিত সামিয়ানা। হলুদ-গোলাপি-সবুজ কাপড়ে মোড়া মণ্ডপে পিয়ানো বাজাচ্ছেন শিল্পী ব্রায়ান সাইলাস। উপবিষ্ট শ্রোতাদের মধ্যে রয়েছেন সুষমা স্বরাজ-অরুণ জেটলি থেকে শুরু করে নানা স্তরের দলীয় নেতা। দিল্লির রাজ্যসভাপতির পদ থেকে অপসারিত বিজয় গোয়েল যেমন আছেন, তেমন রয়েছেন বিহারের রবিশঙ্কর প্রসাদ। দিল্লির উপরাজ্যপাল নাজীব জঙ্গ উপস্থিত হয়েছেন আডবাণীর জন্য বাদশা আকবরের আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস উপহার নিয়ে। উস্তাদ আমজাদ আলি খানও হাজির।
মোদী অবশ্য সশরীরে নেই। আজ পঞ্জাবে তাঁর সভা রয়েছে। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ মোদীর সঙ্গে প্রতিটি প্রচার সভায় থাকার চেষ্টা করেন। ফলে তিনিও আজ পঞ্জাবে। তবে মোদী ফোন করে আডবাণীকে শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি। দলীয় আবহে সার্বিক ভাবেই একটা বড় পরিবর্তন এসেছে বলে দলীয় সূত্রে মানছেন অনেকেই।
নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে মেনে নিতে প্রথমে একেবারেই রাজি ছিলেন না আডবাণী। |
|
মনমোহিনী সাজে মোদী তখন লুধিয়ানার এক সমাবেশে। রবিবার রয়টার্সের তোলা ছবি। |
এখনও আরএসএস না-চাইলেও তিনি নিজে লোকসভায় গুজরাত থেকে ভোটে লড়তে চাইছেন। সংঘ পরিবারের ইচ্ছা মেনে রাজ্যসভায় যেতে এখনই প্রস্তুত নন তিনি। কিন্তু আগের চেয়ে এখনকার সময়ের তফাৎটা হল, মোদীকে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে আডবাণী গ্রহণ করে নিয়েছেন অনেকটাই। আডবাণীর কথায়, “আমার নিজস্ব মত যা-ই থাক, দল যখন সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমি দলের এক জন অনুগত সৈনিক হিসাবে সেই সিদ্ধান্তকে মেনে চলতেই শিখেছি।” ফলে আডবাণীর বিবাহবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে পিয়ানোর ঐকতান বিজেপি নেতারা আজ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন।
কাল সুষমা স্বরাজের আমন্ত্রণে আডবাণী কিছু ক্ষণের জন্য দলীয় অফিসে গিয়ে দু’টি জিলিপি খেয়ে এসেছিলেন। তেমনই আজ নিজের বাড়িতে তিনি বিভিন্ন রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বারবার মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আডবাণী বলেছেন, “এক জন মানুষের সফল হতে গেলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছাশক্তি। সেটা অকৃত্রিম ভাবেই রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে।” আডবাণীর বক্তব্য, “আমার অনুমান, কংগ্রেসের জন্য সবচেয়ে খারাপ ফলাফল অপেক্ষা করছে এ বার। আর সবচেয়ে ভালটা বিজেপির জন্য।”
প্রাথমিক ভাবে বিজেপি-র দলীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে মোদী কতটা ভূমিকা পালন করবেন আর কতটা করবেন না, তা-নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। এখন পরিস্থিতি যা, তাতে গোটা দলে মোদীই শেষ কথা। বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার ভাষায়, বিভিন্ন ভোট সমীক্ষা বলছে বিজেপি ২০০ অতিক্রম করবে। আর এই পুরো আসন-বৃদ্ধির সম্ভাবনার পিছনে যে প্রধান চরিত্রটি রয়েছেন তিনি হলেন মোদী। সুতরাং মোদী বিনে গীত নাই! মোদী আজকাল প্রতিদিন সকালে জেটলিকে আর রাতে রাজনাথ সিংহকে ফোন করেন। সাংগঠনিক ক্ষেত্রে কী হবে আর কী হবে না, তার খুঁটিনাটিতে নাক না-গলালেও মোদ্দা নীতিগত লাইনটি মোদীই নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। দিল্লিতে বিজয় গোয়েলকে সরিয়ে রাজ্যসভার সদস্য করা হবে কি না, অথবা পটনায় কাকে প্রার্থী করা হবে এ সব ব্যাপারে কিন্তু মোদীর ছাড়পত্র ছাড়া রাজনাথ বা অরুণ জেটলি এক পা-ও এগোচ্ছেন না। নির্বাচনী প্রচারে বিজ্ঞাপনের ভাষা থেকে শুরু করে কোন সংস্থাকে তা দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে আলাদা কমিটি থাকতে পারে। কিন্তু সেখানেও শেষ কথা মোদীই। এ বার নির্বাচন সমীক্ষা যদি ভ্রান্ত প্রমাণ হয়, তখন পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারে। কিন্তু আপাতত বিজেপি মানে নরেন্দ্র মোদী এমনটাই বলছেন বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা। প্রমোদ মহাজন ভোটের সময় ‘কার্পেট বম্বিং’-এর কৌশল তৈরি করেছিলেন। যেখানে একসঙ্গে ১২ জন নেতা বিভিন্ন রাজ্যে প্রচারে নামতেন। এ বারই প্রথম ভোট যেখানে বিজেপি-র অন্য কোনও নেতা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সেই প্রাসঙ্গিকতা পাচ্ছেন না। রাজ্যস্তরে শিবরাজ সিংহ চৌহান বা রমন সিংহ অথবা বসুন্ধরা রাজের ভূমিকা বেশি। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মোদীর পর কিন্তু থেকে যাচ্ছেন শুধু মোদীই। |
|
|
|
|
|