প্রস্তাবিত অমৃতসর-দিল্লি-কলকাতা শিল্প করিডরের হাত ধরে কানাডার লগ্নি মানচিত্রে গুরুত্ব বাড়ছে রাজ্যের। বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় গন্তব্য হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে কলকাতা, আসানসোল এবং দুর্গাপুর।
সম্প্রতি দু’দিনের কলকাতা সফরে এসে ভারতে কানাডার হাই কমিশনার স্টুয়ার্ট বেক বলেন, “রাজ্যে ১৬টি কানাডীয় সংস্থা ইতিমধ্যেই কাজ করছে। শিল্প করিডর প্রকল্পে কাজের সুযোগ আরও বাড়বে। উৎপাদন শিল্প, পরিকাঠামো ও কৃষিতে লগ্নির পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতেও কানাডীয় সংস্থাগুলি তৈরি।”
পঞ্জাবের লুধিয়ানা থেকে পশ্চিমবঙ্গের ডানকুনি পর্যন্ত যে-ফ্রেট করিডর তৈরি হওয়ার কথা, মূলত তাকে ভিত্তি
|
স্টুয়ার্ট বেক |
করেই অমৃতসর-দিল্লি-কলকাতা শিল্প করিডর গড়তে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। শিল্পায়নের জন্য চিহ্নিত করেছে ২০টি শহরকে। যার মধ্যে কলকাতাছাড়া রয়েছে আসানসোল এবং দুর্গাপুরও। আর এই করিডরে লগ্নির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে তা বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যেই নিজেদের দেশের সংস্থাগুলিকে নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটি গড়তে চলেছে কানাডা। যাতে পরিকাঠামো, উৎপাদন শিল্প, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগের পথ মসৃণ হয়। যে- সাত রাজ্যের উপর দিয়ে এই করিডর তৈরি হবে, সেই সব রাজ্য সরকারের সঙ্গেও সমন্বয় রাখবে এই কমিটি।
কিন্তু কমিটি গঠনের আগে রাজ্যগুলি সরেজমিনে ঘুরে দেখতে চায় কানাডা সরকার। সেই সূত্রেই এই নিয়ে তৃতীয় বার পশ্চিমবঙ্গে পা রাখলেন বেক। অর্থ তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে আলোচনার পর বেক জানান, রাজ্যের আর্থিক উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এখানে লগ্নি প্রস্তাব দেবে কানাডীয় সংস্থাগুলি।
১০০ কোটি ডলারের দিল্লি-মুম্বই শিল্প করিডর প্রকল্পে টাকা ঢালতে যে সব দেশি-বিদেশি সংস্থা এগিয়ে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে কানাডার সংস্থাও। বেক জানান, সেখানে কেন্দ্র, বিভিন্ন রাজ্যের সরকার এবং সংস্থাগুলির নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রাখার লক্ষ্যে ওয়ার্কিং কমিটি তৈরি করেছেন তাঁরা। সেই একই কারণে এবং একই আদলে এ বার ওয়ার্কিং কমিটি গড়তে চান অমৃতসর-দিল্লি-কলকাতা শিল্প করিডরের জন্যও।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি অমৃতসর-দিল্লি-কলকাতা শিল্প করিডর উন্নয়ন নিগম তৈরির জন্য সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। ঠিক হয়েছে নিগমের ৪৯% অংশীদারি কেন্দ্রের হাতে থাকবে। বাকিটা থাকবে সাত রাজ্য এবং হাডকো-র হাতে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওই করিডর ধরে তৈরি হবে উৎপাদন শিল্পের সাতটি স্বয়ংসম্পূর্ণ তালুক। যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রস্তাবিত গোয়ালতোড় শিল্প তালুকও। বেক জানান, এ ধরনের পরিকাঠামো প্রকল্পে টাকা ঢালতে এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে তাঁর দেশের সংস্থাগুলি আগ্রহী।
পশ্চিমবঙ্গে কানাডার ১৬টি সংস্থা ইতিমধ্যেই ব্যবসা করছে। যার মধ্যে রয়েছে বিমান ও ট্রেন তৈরির সংস্থা বম্বার্ডিয়ার, খনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ওয়েন্কো, ইঞ্জিনিয়ারিং উপদেষ্টা সংস্থা আরডব্লিউডিআই, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদক ইওগেনজ্ ফ্রুজ, প্রাণী সম্পদ সংস্থা পোলার জেনেটিক ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও। বেকের কথায়, “জল শোধন সংক্রান্ত গবেষণায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসু-র সঙ্গে কাজ শুরু করছে অ্যালবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতা পুরসভা ও হাওড়া পুরসভার সঙ্গে কাজ করার জন্যও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।” শিল্প করিডর প্রকল্পের হাত ধরে আগামী দিনে রাজ্যে কানাডীয় সংস্থার কাজের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে বলেই তাঁর দাবি। |