রামপুরহাট মহকুমায় গত কয়েক বছর ধরে মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে। শনিবার গভীর রাতে এই মহকুমার নলহাটি থানার কুরুমগ্রামে ফের চুরি হয়েছে। এই গ্রামের ভট্টাচার্য বাড়ির শ্যামরায় মন্দিরের একটি নয়, পর পর দু’টি দরজার তালা ভেঙে দুষ্কৃতীরা পাথরের দু’টি বিগ্রহ-সহ বেশ কিছু কাঁসা পিতলের বাসন নিয়ে পালিয়েছে। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, আগের মন্দিরগুলিতে চুরির মতোই এ ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু কোনও কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। কেউ ধরাও পড়েনি।
গত চার বছর ধরে রামপুরহাট মহকুমায় একের পর এক প্রাচীন মন্দিরগুলি থেকে তালা ভেঙে কখনও দামি পাথরের বিগ্রহ, কখনও বিগ্রহের গয়না, থালা-বাসন চুরি হয়েছে। আবার কখনও প্রণামী বাক্স ভেঙে টাকা-পয়সাও চুরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৩ জুলাই নলহাটি থানার তেজহাটি গ্রামের রাধারমন মন্দির থেকে বিগ্রহ-সহ লক্ষাধিক টাকার গয়না চুরি হয়েছিল। |
২০১৩ সালের ৫ অগস্ট ওই একই থানার মেহেগ্রামে শিব মন্দির থেকে আস্ত একটা শিবলিঙ্গ চুরি যায়। তারও আগে কুরুমগ্রামের একটি শ্যামরায় মন্দির থেকে বিগ্রহ চুরি হয়। এই মহকুমার রামপুরহাট, মুরারই, নলহাটি, মাড়গ্রাম, ময়ূরেশ্বরএই পাঁচটি থানা এলাকার বহু মন্দিরে চুরি হয়েছে। এই চুরিগুলির মধ্যে ময়ূরেশ্বর থানার বীরচন্দ্রপুর গ্রামের প্রাচীন বাঁকা রায় ও জগন্নাথ মন্দির, তারাপীঠ, নলহাটির মতো তীর্থস্থানগুলিও পড়ছে। ঘটনা হল কোনও ক্ষেত্রেই পুলিশ কোনওটারই কিনারা করতেই পারেনি। চুরি যাওয়া বিগ্রহ বা গয়না, আসবাবপত্র চুরি উদ্ধারও করতে পারেনি। স্বাভাবিক ভাবেই একের পর এক মন্দিরে চুরির ঘটনা কিনারা করার ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশন করেছেন বাসিন্দারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে কুরুমগ্রাম ভট্টাচার্য বাড়ির শ্যামরায় রাধারাণি মন্দির থেকে চুরি গিয়েছে রাধারানি, বংশীবদন এবং গোপালের প্রাচীন অষ্টধাতুর মূর্তি। মন্দিরের সেবাইত ব্রজনাথ ভট্টাচার্য, গোরাচাঁদ ভট্টাচার্য, শ্যামল ভট্টাচার্যরা বলেন, “যত দূর জানি, প্রাচীন এই মন্দিরের সঙ্গে গ্রামের দোল, নবান্ন-সহ বিভিন্ন পালাপার্বন জড়িত। রবিবার ভোরে মন্দির দুয়ারে জল দিতে গিয়ে দেখতে পাওয়া যায়, মন্দিরের লোহার এবং কাঠের দু’টি দরজার তালা ভাঙা। মন্দিরের ভিতরে শ্যামরায় বিগ্রহ পড়ে থাকলেও অন্য তিনটি বিগ্রহ পাওয়া যায়নি এবং কিছু বাসন চুরি গেলেও কোনও গয়না চুরি যায়নি।” বঙ্গীয় পুরোহিত সমাজের জেলা সম্পাদক রতন ভট্টাচার্য বলেন, “একের পর মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে। অথচ অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। তা হলে পুলিশ প্রশাসন কী করছে?” এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্র কাজ করছে বলে তিনি দাবি করেন। রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কোটেশ্বর রাও বলেন, “পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। দেখা যাক কী হয়!” |