|
|
|
|
মরুভূমিতে এক মহাতারকা |
জনমানবশূন্য কচ্ছের রানে অমিতাভ চালাচ্ছেন গাড়ি। পিছনে ক্যামেরা নিয়ে
পরিচালক সুজিত সরকার।
লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত। |
বিস্তীর্ণ পাঁচ হাজার বর্গ কিলোমিটার মরুভূমি।
তার মাঝে অমিতাভ বচ্চন।
আর একটা জিপ।
স্টিয়ারিং হুইলের পিছনে তিনি নিজেই। নেই কোনও সারথি, বাউন্সার বা সুরক্ষারক্ষী।
ওয়াইল্ড, ওয়াইল্ড ওয়েস্টের এই পটভূমিতে তিনি একাই নায়ক।
একটাই লক্ষ্য।
এই মরুভূমির মধ্যে কোথাও যদি একটা ‘ওয়াইল্ড অ্যাস’ খুঁজে বের করতে পারেন।
‘ওয়াইল্ড অ্যাস’ অর্থাত্ ক্ষুর। যে জন্তুর উল্লেখ পাওয়া যায় মুঘল সম্রাট আকবর আর জাহাঙ্গিরের শিকার কাহিনিতে। সেই জন্তুর খোঁজে গুজরাত পর্যটনের বিজ্ঞাপন শ্যুট করতে গিয়েছিলেন অমিতাভ। লিটল রান অব কচ্ছ-এ। জানুয়ারি মাসের শেষে টানা দশ দিনের শ্যুটিং। পরিচালক সুজিত সরকার। আমদাবাদের কিছু অংশে শ্যুটিং সেরে তাঁরা চলে গেলেন লিটল রান অব কচ্ছ-য়ে। তার পর ভবনগর।
|
|
লিটল রান অব কচ্ছ-এ সুজিত সরকার ও অমিতাভ বচ্চন। |
এর আগে গুজরাত পর্যটনের জন্য অগুন্তি বিজ্ঞাপন শ্যুট করেছেন অমিতাভ। তবে কোনও দিনই এ রকম ভাবে শ্যুটিং করা হয়নি তাঁর। “মনে হচ্ছিল ডেভিড অ্যাটেনবরো-র ট্র্যাভেল শো শ্যুট করছি। বস নিজে গাড়ি চালাচ্ছেন। আর আমরা ওঁর পিছনে অন্য একটা গাড়িতে ক্যামেরা নিয়ে,” বলছেন সুজিত।
বাদামি রঙের মাটি ফেটে চৌচির। আর তার মাঝে ধুলো উড়িয়ে ছুটছে অমিতাভের জিপের চাকা। কখনও ব্ল্যাক বাক স্যাংচুয়ারি। কখনও বা ওয়াইল্ড অ্যাসের খোঁজে। মাঝে মধ্যে সঙ্গী বলতে কৃষ্ণসার হরিণ, গাধা, ঝাঁকে ঝাঁকে পেলিকান আর পরিযায়ী পাখি।
আর এই ছবিকেই ক্যামেরাবন্দি করছেন সুজিত। তিনি পিছনে অন্য এক গাড়িতে। সেখানে তাঁর সঙ্গী এক ক্যামেরাম্যান, ফোকাস পুলার আর গাড়ির চালক।
কাকভোর থেকে শ্যুটিং শুরু। মাইলের পর মাইল ধরে মরুভূমি। অন্য সময় অমিতাভকে নিয়ে আউটডোর শ্যুটিং করার ঝামেলা অনেক। ফ্যানদের উত্সাহের শেষ নেই। ফোটোগ্রাফ, অটোগ্রাফ সবের প্রচুর চাহিদা।
কিন্তু মরুভূমি তো একেবারেই নিরালা। প্রায় জনমানবশূন্য। যাকে বলে গুজরাতের দিকশূন্যপুর। কোনও মোবাইল ফোন কাজ করে না সেখানে। জিপিএস-ও নেই। “জানতাম অমিতাভস্যর গাড়ি চালাতে ভীষণ ভালবাসেন। কিন্তু মুম্বইতে তাঁর সুযোগ কোথায়? এই সাফারি শ্যুটিংয়ে মনে হল বসের সেই সাধটা মিটল। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে শ্যুটিং করেছেন বস। কিন্তু এ জায়গায় এই প্রথম,” বলছেন সুজিত।
একদিন শ্যুটিং করতে করতে এমন জায়গায় পৌঁছে যান তাঁরা, যেখান থেকে কোনও দিক চেনা যাচ্ছিল না। চার দিকে শুধু ‘ফ্ল্যাট ল্যান্ড’। “আমি ওয়াকিটকিতে স্যরকে বললাম আর চালাবেন না। কিন্তু উনি শুনলেন না। শুধু বললেন, ‘ফলো মি। আই’ল টেক ইউ’। বস যখন এমন নির্দেশ দিচ্ছেন তখন আমাকে তো ফলো করতেই হবে। আর সত্যি বলছি এমন সব শুট পেয়ে গেলাম যা ভাবতেই পারিনি,” বলছেন সুজিত।
সে রাতেই বোধহয় শ্যুটিং সেরে এসে টুইটারে অমিতাভ লিখেছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। “একটা গোটা দিন গুজরাতের ‘ছোটে রান’য়ে কাটিয়ে ফিরলাম। ফ্লেমিংগো আর ওয়াইল্ড অ্যাস সারা দিন খুঁজে বেড়ালাম... অনেকেরই অদ্ভুত অদ্ভুত সব ধারণা আছে ‘ওয়াইল্ড অ্যাস’ সম্বন্ধে। কিন্তু এটা আসলে খুব শান্ত আর সুন্দর দেখতে জন্তু। লাজুক আর খুব দ্রুত গতি তার! বিরল প্রজাতির এই জন্তুর নামটা ইংরেজিতে যদিও ঠিকঠাকই শোনায়, কিন্তু যেই না হিন্দিতে তর্জমা করা হবে, অমনি সেটা কেমন যেন অশ্লীল শুনতে লাগে।”
শ্যুটিং শেষে ফিরে আসতেন একটা রিসর্টে। সেখানেও বাইরের লোকের ভিড় নেই। সন্ধেবেলা ব্লগ লেখা সেরে তার পর আবার ইউনিটের সঙ্গে আড্ডা দিতে বসতেন অমিতাভ।
আজকাল নাকি তিনি সুজিতকে একটা নতুন নামে ডাকতে শুরু করেছেন। সুজিত নয়। পরিচালককে তিনি ডাকেন ‘এই সুজিত’ বলে। “এই সুজিত, এ বার কী পোশাক পরব আমি তোর বিজ্ঞাপনে?” এ ভাবেই নাকি বচ্চন সম্বোধন করেন পরিচালককে। এই বিজ্ঞাপনের জন্য যে ক’টা বুট পরেছেন, সেগুলো সব ক’টাই তাঁর নিজের ওয়ার্ড্রোব থেকেই নিয়ে এসেছিলেন। তার সঙ্গে নিজের আলমারি থেকে চামড়ার একটা জ্যাকেটও। কত দিন গল্প করতে করতে উনি শ্যুটিংয়ের প্ল্যানটাও নিজে সাজিয়ে দিতেন। সুজিত বললেন, “বস ডেকে আমায় বলেছেন: ‘এই সুজিত, এখানে সানরাইজটা নিলে ভাল লাগবে।’ আমি বলেছি: ‘অত সকালে আপনি উঠবেন?’ উনি বলেছেন: ‘ঠিক উঠে যাব।’”
রিসর্টে অমিতাভের রুমের বাইরে একটা ট্রেডমিল সেট করে দেওয়া হয়েছিল। “খোলা আকাশের নীচে জিম করে তার পর পৌঁছে যেতেন শ্যুটিং করতে,” বলছেন পরিচালক।
আর খাওয়াদাওয়া? স্থানীয় খাবার নাকি তাঁর খুব পছন্দের। “ইউনিট যে সাধারণ খাবার খেত, সেটাই উনি খেতেন। তবে টক দইটা ওঁর খুব পছন্দের,” বলছেন পরিচালক।
সামনে সুজিত সরকার নির্মিত আরও দু’টো বিজ্ঞাপনে দেখা যাবে অমিতাভকে। একটিতে তিনি সেজেছেন সাদা ভূত! অন্যটির স্ক্রিপ্ট লেখা চলছে। তবে এ সবের মধ্যে আরও একটা খবর রয়েছে। এই কলকাতাতেই সুজিতের পরের ছবির শ্যুটিং করতে আসবেন অমিতাভ। সঙ্গে ইরফান। ছবির নাম ‘পিকু’। বাবা-মেয়ের গল্প। “ইচ্ছে আছে জুন-জুলাই নাগাদ ফিল্মটা শুরু করার। তখন হয়তো মুম্বই-দিল্লিতে শ্যুটিং সারব। কলকাতার ডেটগুলো এখনও ঠিক হয়নি। তবে ছবির অধের্কটাই কলকাতাতে শ্যুট করব।”
গুজরাতে যেমন তিনি খুঁজে খুঁজে বেশ নতুন নতুন লোকেশন বের করেছেন, কলকাতাতেও কি তাই করবেন? এ নাগাদ কলকাতায় শ্যুট করা হিন্দি ছবির লোকেশনগুলো বহুল ব্যবহৃত। ‘পিকু’তে কী করবেন? “ওটা পর্যটনের ছবি নয়। গল্প অনুযায়ী লোকেশন ঠিক করব। তবে এটুকু বলতে পারি যে, একই জায়গায় শ্যুট করব না আমি,” বলছেন পরিচালক।
আর কাস্টিং? প্রথমে শোনা গিয়েছিল পরিনীতির নাম। তার পর সোনম। এখন শোনা যাচ্ছে যে দীপিকা পাড়ুকোনকে দেখা যাবে অমিতাভের মেয়ের ভূমিকায়। সে বিষয়ে অবশ্য সুজিতের মুখে কুলুপ। শুধু বললেন, “এই নিয়ে কোনও কিছুই এখনও ঠিক হয়নি। হলেই জানাব!”
তবে এ সব শ্যুটিংই হবে সমতল ভূমিতে। এখন অবশ্য সুজিতের মন জুড়ে শুধুই ‘মরু’ অভিযান।
সেটার ঘোরে তিনি এখনও আচ্ছন্ন। |
|
|
|
|
|