রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ৪...
র্ম নাকি শ্রেষ্ঠ আফিম। আর সে-ধর্ম আগাপাশতলা যদি যৌনতার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তা হলে যা দাঁড়ায় আর কী! শুধু যৌনতা-মাখা বাণী দেওয়া নয়, সাধারণ চুমাচাট্টি থেকে অসাধারণ ‘ওসবকিছু’র বন্দোবস্তও যখন করে দেন স্বয়ং ভগবান, রচনা করেন সেক্সের অভয়ারণ্য তখন তা কামবুভুক্ষু মানুষকে টেনে আনবেই। মোরে আরও আরও আরও দাও কাম! গ্রিক ফিলোতেস, রোমান কিউপিড, হিন্দু মদনদেব এঁরা টেক্কাই পাননি কলির এই ভগবানের কাছে! ভগবান শ্রী রজনীশ। ওরফে, ‘সেক্স গুরু’ ওশো।
অপার যৌনতাই ছিল তাঁর মুক্তির মূল মন্ত্র। কোনও ঢাকঢাক-গুড়গুড়’এ বিশ্বাস করতেন না তিনি। জাঁদরেল সাংবাদিককুলকে থতমত করে দিতে পারতেন সটান পালটা প্রশ্নে ‘আই অ্যাম আ স্পিরিচুয়াল প্লেবয়! ইজ দেয়ার সামথিং রং?’ ১৯৭০ থেকে ১৯৭৪ মুম্বই, তার পর সাত বছর পুণে। ক্রমশ বাড়ছিল তাঁর আশ্রমের পরিধি, বিলিতি আর মার্কিন অনুগামীর সংখ্যা। শোনা যায়, এ সময় থেকেই তাঁর বক্তৃতায় নাকি দার্শনিক ব্যাখ্যার বদলে ক্রমশ জায়গা করে নিতে থাকে ‘নোংরা’ চুটকি। আধ্যাত্মিকতা আর যৌনতার ককটেল যে পাশ্চাত্যের কাছে প্রাচ্যের সবচেয়ে আকর্ষক বিজ্ঞাপন, তত দিনে তা হাতে-গরম বুঝে গিয়েছেন। ১৯৮১ সালে আচার্য রজনীশের পদধূলি পড়ল মার্কিন মুলুকে। ওরেগন-এ গড়ে উঠল নতুন আশ্রম ‘রজনীশপুরম’।
তার পর যত কাণ্ড রজনীশপুরমেই। ওপর-ওপর দেখলে কখনও হালকা সুর, কখনও হার্ড মিউজিকের সঙ্গে উত্তাল নাচ কখনও বক্তৃতা, কখনও অনুগামীদের কপালে আঙুল ঠেকিয়ে প্রশান্তির তরঙ্গ প্রেরণ। কিন্তু লোকে বলতে লাগল রজনীশের আশ্রম যৌনতার মুক্তাঞ্চল। যে খুশি, যার সঙ্গে খুশি, যখন খুশি, যে ভাবে খুশি শুতে পারে! সেখানে যে কেউই চাইলে নাকি মাসে নব্বই জনের সঙ্গেও সঙ্গম করতে পারে! এ সব অভিযোগ তাঁর দিকে ছুটে এলে, তিনি হাসিমুখে বলে গিয়েছেন ‘লেট সেক্স বি আ প্লেফুলনেস, আ ফান। আফটার দি ইনভেনশন অব পিল, ইট্স নট আ প্রবলেম।’ শুধু সেক্সের চাষ নয়, তাঁর আশ্রম ছিল ড্রাগের আড়ত, এ অভিযোগও ওঠে। ড্রাগের পক্ষেও ছিল তাঁর স্পষ্ট সওয়াল ‘ইফ ইউ ক্যান নট প্রোভাইড মেডিটেশন, ইউ শুড প্রোভাইড মেডিসিন’। উলটে তিনিই অভিযোগ করেছেন, প্রত্যেক হাসপাতালে একটি ঘর থাকা উচিত যেখানে গেলে মানুষ ড্রাগ্স নিতে পারে, সব সরকারেরই দায়িত্ব প্রত্যেকের জন্য একটু প্রশান্তির বন্দোবস্ত করা! রজনীশপুরমে আর ছিল অগাধ মার্কিন ডলারের আনাগোনা। সাংবাদিকরা তো তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘রোল্স রয়েস গুরু’! যে কেউকেটারা এই ‘নব্য সন্ন্যাস’-এ দীক্ষা নিতেন, তাঁদের সৌজন্যে রজনীশের ব্যক্তিগত রোল্স রয়েসের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছিল নিরানব্বইতে!
সেঞ্চুরিও আসত অচিরেই, যদি না অতি লোভে অতি সাহসী হয়ে মানুষ মারার খেলায় সচেষ্ট হতেন তিনি আর তাঁর ডান হাত: মা আনন্দ শীলা। ওরেগন প্রদেশের ওই এলাকার চোদ্দো আনা নিয়ন্ত্রণ তত দিনে রজনীশ-ভক্তদেরই হাতে। স্বভাবতই অধিকাংশ পুরনো বাসিন্দাই, উড়ে এসে জুড়ে বসা এই সন্ন্যাসীদের কাণ্ডকারখানা দু’চক্ষে দেখতে পারতেন না। আর ঠিক তখনই মার্কিন কাউন্টি নির্বাচন। অতএব রজনীশপুরমের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গেলে চাই চূড়ান্ত ক্ষমতা নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে হবে, বিরোধীরা যাতে ভোট দিতে যেতেই না পারে। সিধে পথ, বিষ মেশাও খাবারে! প্ল্যান ফুলপ্রুফ করতে পরীক্ষামূলক ভাবে ছড়ানো হল বিষ স্যালমোনেলা ব্যাকটিরিয়া। বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়লেন শয়ে-শয়ে মানুষ। শুরু হল তদন্ত। মার্কিন মুলুকে ভগবানের সাজানো বাগান শুকোতে আর বিশেষ সময় লাগেনি।
পাততাড়ি গুটিয়ে দেশে ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। জেল হয়েছিল শীলার। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সেই শীলা কি জবানই একে-একে তাঁর ঝুলি থেকে বেড়াল বের করেছে। এক দিন বলিউড ও সংসার ছেড়ে বিনোদ খন্না তাঁর বাগানের মালি হয়েছিলেন, তাঁর শিষ্যত্ব নিয়েছিলেন মহেশ ভট্ট, পরভিন বাবি। গুণমুগ্ধতার সার্টিফিকেট দিয়েছেন মনমোহন সিংহ কি ম্যাডোনা, কপিল দেব কি টম ক্রুজ, দলাই লামা কি ফেদেরিকো ফেলিনি। পঞ্চান্নটি ভাষায় অনূদিত তাঁর বই। বেস্টসেলারও। মৃত্যুর পরও পুণেয় তাঁর আশ্রম রমরমিয়ে চলছে। তবু কেচ্ছার দাগ কি মুছেছে এতটুকু? ‘গুরু’ হয়েছেন বটে, ‘ভগবান’ কি হতে পেরেছেন জব্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের প্রাক্তন অধ্যাপক শ্রী চন্দ্রমোহন জৈন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.