রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ৩...
নিরামিষ পোলাও হল সোনার পাথরবাটি। পোলাও নিরামিষ হতে পারে না, কারণ ‘পল’ অর্থাত্‌ মাংস আর ‘অন্ন’ মিলে পলান্ন বা পোলাও।
যতই আমরা পোলাও-কোপ্তা-কাবাব এক নিশ্বাসে বলি, প্রথম জনের কাছে বাকি দুইজনা শিশু। পোলাও কোথায় ছিল না আর কবে ছিল না! পোলাওয়ের সাম্রাজ্য বিস্তারের কাছে আলেকজান্ডার থেকে হিটলার কেউ দাঁড়াতে পারবে না। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে পশ্চিম এশিয়া, মধ্য এশিয়া থেকে পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা অবধি পোলাওয়ের বিস্তৃতি ছিল নানা দেশে হরেক নামে। তার ইতিহাসও বেশ গোলমেলে। শুধু আলেকজান্ডার নিয়েই দু’রকম গল্প আছে। তাঁর জীবন-কাহিনিতে শ্বশুরবাড়ির খাতিরদারির কথা লেখা আছে। তিনি যখন ব্যাকট্রিয়া (বর্তমানে ইরান, স্ত্রী রোক্সানার জন্মস্থান) যান, পোলাও খাইয়ে তাঁকে আপ্যায়ন করা হয়। অন্য গল্প বলে, আলেকজান্ডার মারকান্দা (বর্তমান সমরকন্দ) জিতে নেওয়ার পর ওঁর জন্যে যে রাজভোজের আয়োজন করা হয়, সেখানে পোলাও পরিবেশন করা হয়। সৈন্যের দল সেখান থেকে পোলাও রান্নার আদবকায়দা জেনে দেশে ফিরে ম্যাসিডোনিয়ায় পোলাও চালু করে। তবে পোলাও রান্নার কলাকৌশল প্রথম লিপিবদ্ধ করেন আবু ইব্ন সিনা নামে এক মধ্য-এশীয় পণ্ডিত। তাই উজবেক আর তাজিকরা পোলাও-পিতা হিসাবে আজও তাঁকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে রেখেছে।
ভারতবর্ষের ‘পোলাও’ বা ইংল্যান্ডের ‘পিলাফ’ এসেছে পারস্য থেকে। সে দেশে ভাতের রকমারি রান্না হয়। তার একটা ‘পোলো’। পোলো রান্না হত মাংসের সুরুয়ার সঙ্গে আধসেদ্ধ ভাত ফুটিয়ে আর পরে মাংস যোগ করে। সেখান থেকেই ‘পোলাও’ শব্দের উত্‌পত্তি। পারস্য থেকেই ‘পোলো’ কথাটা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। পিলাভ, পিলাফি, আবার কোথাও পালোভ হিসেবে, যদিও রান্নার পদ্ধতি সব দেশেই প্রায় একই রকম।
ভারতের পোলাও-সাম্রাজ্যের মুকুটহীন বাদশা আকনি পোলাওয়ের জন্মস্থান যদিও কাশ্মীর, এই পোলাওয়ের সঙ্গে আকবর বাদশার নাম জড়িয়ে। আকবরই প্রথম মুঘল বাদশা যিনি কাশ্মীর জয় করেন। কাশ্মীর হয়ে ওঠে তাঁর আর তাঁর পরের দুই বাদশার প্রিয় বিশ্রামের জায়গা। তাঁদের পছন্দের প্রভাব সেখানকার রান্না-ঘরানার ওপরও পড়ে। সুদূর পারস্যে জন্মানো আকনি, কাশ্মীরের রসুইখানায় ঢুকে পড়ল নিজেকে মুঘল বাদশাদের স্বাদ অনুযায়ী উলটে পালটে নিয়ে। দই দিয়ে জাঁক দেওয়া মাংসের সুরুয়ার সঙ্গে কাশ্মীরি জাফরান মিশে এই পোলাও ভারতীয় নাগরিকত্ব পায়। আইন-ই-আকবরিতেও জায়গা করে নিয়েছিল আকনি পোলাও।
বিরিয়ানি আর পোলাওয়ে মূল তফাত: বিরিয়ানিতে মাংস ও চাল স্তরে স্তরে সাজিয়ে রান্না হয়, আর পোলাওতে ভাত আর মাংস মিশিয়ে। সে জমানার লখনউ ছিল পোলাওয়ের আঁতুড়ঘর। সেখানকার ভোজনবিলাসী রইসদের কাছে সেনা ও সাধারণ মানুষের খাদ্য বিরিয়ানি ছিল ‘মলগোবা’ বা ঘ্যঁাট, কারণ তাতে মশলা ও সবজির আধিক্য। তাঁদের কাছে পোলাও ছিল রান্না আর শিল্পের এক আলাদা নিদর্শন। লখনউয়ের আনারদানা পোলাওতে প্রত্যেকটা চাল অর্ধেক লাল আর অর্ধেক সাদা থাকত। দস্তরখানে ছড়ালে মনে হত রঙিন জহরত রাখা আছে। নওরতন পোলাও তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত নবরত্ন পাথরের মতো ন’টি রঙের চাল মিশিয়ে। নবাব সালারজঙ্গ-এর খাস বাবুর্চির মাস-মাইনে ছিল বারোশো টাকা, শুদ্ধু পোলাও রান্নার জন্য!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.