|
|
|
|
|
|
|
এলভিসের নকল |
পলি নেলসন
আমেরিকা |
এটা এলভিস প্রেসলি সম্বন্ধে কোনও গল্প নয়। এটা চাক ওয়ালেশ, ওর বউ ক্যারল আর আমার গল্প। ক্যারলের আমার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপার আছে, সেগুলো যে-ভাবে ঘটা উচিত, সে-ভাবে ঘটে না, আর তাই বাস্তবে ক্যারল চাকের স্ত্রী হল।
স্কুলে আমাদের সিনিয়র ইয়ারের ঠিক পরেই ক্যারল অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ল। এটা সত্যি যে, এইট্থ গ্রেডের পরে ক্যারলের সঙ্গে আমি কখনও ডেটিংয়ে যাইনি। তবু আমি হয়তো ওকেই বিয়ে করতাম, সে যতই আমার অ্যাকাউন্টেনসি স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা থাকুক না কেন। আর এটাও জানতাম যে বাচ্চাটা কোনও ভাবেই আমার ছিল না, কারণ জুনিয়র স্কুলে এমন একটা কাণ্ড ঘটানোর পক্ষে আমি একটু বেশিই ভদ্র ছিলাম। তবে চাক ওয়ালেশ তেমন বান্দা ছিল না। ক্যারল স্বীকারও করেছিল, বাচ্চাটা চাকেরই। বিয়েটা তাই ওর সঙ্গেই হওয়া উচিত।
এই হল সংক্ষেপে চাক ওয়ালেশ। কলেজে দ্বিতীয় বছরে আমাদের রাগবি টিমের সিনিয়র কোয়ার্টারব্যাক তামারা নিউসাম কুঁচকির পেশিতে চোট লাগিয়ে পরের চারটে খেলায় সাইডলাইনে বসে থাকে। মাঝখান থেকে গোটা মরশুমটায় ভাল খেলে সব কৃতিত্ব নিয়ে যায় চাক। আবার বছরের শেষে যখন স্কুলের মিউজিকালের জন্য এক জন ভারী গলার লিড সিঙ্গারের প্রয়োজন হয়ে পড়ল, তার ওপর পিটি বয়েড বিসলির ল্যারিনজাইটিস হল, তখন আপনাদের এই লেখককে না-দিয়ে সুযোগটা কাকে দেওয়া হল জানেন? সেই চাক ওয়ালেশকে!
আমাকে ভুল বুঝবেন না। এ কথাটা স্বীকার করতেই হবে, তখন থেকেই ওর কণ্ঠস্বর ছিল একটু অন্য রকম। গভীর, গাঁক-গাঁক করছে, আর সামান্য জড়ানো। চাক-ই সব সময় সুন্দরী মেয়েদের মন পেত, এমনকী ক্যারলেরও। আমি হাত তুলে দিলাম। মেয়েদের জন্যই ও ক্লাসের প্রেসিডেন্ট হয়েছিল। বুদ্ধি নয়, চেহারাটাই ছিল ওর ওপরে ওঠার চাবিকাঠি। টাইট জিন্স আর ডাকটেল-কাট চুল।
তবে ও-সব ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে। এখন আমার বয়স হয়েছে, তাই ওগুলো ভুলে যাওয়াই ভাল। হাইস্কুল শেষ হতেই চাকের বাবা ছেলেকে পারিবারিক ব্যবসায় ঢুকিয়ে দিল।
আমি কলেজে গেলাম। ভালই ফল করছিলাম। এমন সময়, আমার বাবা গমকলের ভেতর নিজের পা-টা ঢুকিয়ে সেটাকে ছেঁটে ফেলল, আর মা-ও আক্রান্ত হল বিরল একটা রোগে। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে আমায় বাড়ি ফিরে আসতে হল। স্টিমসনে কাজ করার একটাই জায়গা ছিল: ওয়ালেশদের স্কুলবাসের বডি ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট।
|
|
২ |
আমি আদৌ কোনও সার্টিফায়েড পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট গোছের কেউ নই, তবে সংখ্যার ব্যাপারে আমার বিশেষ একটা ক্ষমতা ছিল। স্কুল গেম্সের দিন থেকেই চাকের সেটা জানা ছিল। তা ছাড়া, আমি চারটে কমিউনিটি কলেজ ক্লাসে সবচেয়ে ভাল ফল করেছিলাম। ওয়ালেশ বাস কোম্পানি আমাকে তাদের উদ্ভাবনী বিভাগের মাথায় বসিয়ে দিল।
একটা স্কুলবাসের বডি কী ভাবে তৈরি হয়, আপনারা জানলে অবাক হয়ে যাবেন। এটা কেবল বাচ্চাদের বসার ক’টা ধাতব গদিওলা সিট, হলুদরঙা পেন্ট আর মস্ত লালরঙা ফ্ল্যাশারের ব্যাপার নয়। তবে এই গল্প স্কুলবাসের উদ্ভাবন, ডিজাইন বা কনস্ট্রাকশন সম্পর্কে নয়।
এই গল্পটা চাক ও তার এলভিসকে নকল করা সম্বন্ধে। আমি ঠিক বলতে পারব না কেন, তবে ও আমার থেকে এখানে বেশি দিন আছে বলেই বোধ হয়, কোম্পানির প্রেসিডেন্ট হবার পর থেকেই বাসের বডি তৈরি সম্বন্ধে ওর কোনও আগ্রহ রইল না। শেষ ক’টা বছর বলতে গেলে ওর বকলমে আমিই কোম্পানিটা চালাচ্ছি। তার একটা কারণ, এ ব্যাপারে আমি ওর থেকে ঢের বেশি বুঝি। কিন্তু মূল কারণ, চাক ওয়ালেশ মনে করে ও এলভিস হতে পারে।
ও বড় জুলপি রাখতে শুরু করল, আর আমি যেমন প্রকৃতির নিয়মেই চুলটাকে সাদা হতে দিই, তা না করে ও নিজের চুলে কলপ দিতে শুরু করল। জঘন্য ব্যাপার। আমি কপালের ওপরের রোল করা চুল বা দাড়ির কথা বলছি না। বলছি ওর শার্টের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসা বুকের লোমের কথা। ও হ্যঁা, চাক অফিসে টাই পরে আসাও ছেড়ে দিয়েছিল, দু’বছর আগে ওর বাবা ব্যবসা থেকে অবসর নেওয়ার পরে। চাক যদি কোম্পানির মাথা না হত, তবে ও যা করছে, তাতে কিছুতেই পার পেয়ে যেত না।
এ বছরের কোম্পানি-পিকনিকে চাক হাজির হল সাদা ও সোনালি চকমকে স্যুটে, সঙ্গে তিন জন ব্যাক-আপ সিঙ্গার আর আস্ত একটা রিদ্ম-ব্যান্ড। কোম্পানির লোকেরা ওকে শাবাশি দিতে লাগল, উঠে দাঁড়িয়ে ওকে অভিনন্দন জানাল সত্যি, কিন্তু এর অর্থটা কী? এই লোকটার জন্যে তাদের বছরে দুশো সাড়ে একষট্টি দিন কাজ করতে হয়।
আর ক্যারল! সে এই কোম্পানি-ফাংশনে এল একটা ছোট্ট স্কার্ট পরে, দু’ধারে নেটের কাজ লটপট করছে। সেও চিত্কার করে স্বামীকে উত্সাহ জোগাচ্ছিল। তবে এটা তো করতেই হত, ওই লোকটার সঙ্গে ওকে বছরে তিনশো পঁয়ষট্টি দিন কাটাতে হয়, কোনও ছুটিছাটা ছাড়াই। আর ও এখনও ডাকসাইটে সুন্দরী। চল্লিশের ওপরে খুব কম মহিলাই তার মতো স্বচ্ছন্দে পুড্ল স্কার্ট পরতে আর প্লাটিনাম-রঙা চুল নিয়ে ঘোরাফেরা করতে পারে। তবে চাক ওয়ালেশের পক্ষে ক্যারল একটু বেশিই কেতাদুরস্ত, তাই ও যখন স্টেজের তলায় মাথা ঝঁুকিয়ে জিজ্ঞেস করল আমি ওর সঙ্গে লাঞ্চ সারতে ইচ্ছুক কি না, তখন বুঝলাম, চাকের সঙ্গে দিনের পর দিন থেকে ও ক্লান্ত হয়ে উঠেছে। এও উপলব্ধি করলাম, একে অন্যের দুঃসহ শূন্য জীবন আমরা পূর্ণ করে তুলতে পারি।
|
৩ |
এটা আমাকে একটা মতলব আঁটতে প্ররোচিত করল। আমি ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছিলাম, সামনের মার্চে ‘হুবহু এলভিস সাজো’ কনটেস্টের জন্য চাক ফর্ম জমা দিয়েছে। চাক-ই পৃথিবীতে একমাত্র লোক নয় যাকে এলভিসের মতো দেখতে। আরও একশো ছত্রিশ জন ফাঁপানোচুলোও নিজেকে এলভিসের মতো দেখতে বলে মনে করে। এটা ছিল এলভিসদের মধ্যে এলভিস-তম হয়ে ওঠার লড়াই, চুলোয় যাক সব্বাই!
এত দিন কোম্পানিতে কাজ করার ফলে আমার আঠারো সপ্তাহের ছুটি জমা হয়েছিল। তার থেকে দু’হপ্তার ছুটি চাইলাম ‘এলভিস কনটেস্ট’-এর সময়ে। একটা কালো কলপ কিনলাম আর এলভিসের পছন্দের স্যাটারডে নাইট স্পেশাল স্নাব-নোজ রিভলভার জোগাড় করে ‘এলভিস কনটেস্ট’-এর হোটেলেই ঘর বুক করলাম। অবশ্যই নিজের নামে নয়, আর কনটেস্টেও নাম দিলাম না।
ফন্দিটা মন্দ ছিল না। প্রায় নিখুঁত বললেই চলে। কল্পনা করুন, একশো সাঁইত্রিশ জন নকল এলভিস ঘুরে বেড়ানো একটা শহরে পুলিশ চারদিকে এলভিসের মতো দেখতে একটা লোককে খঁুজে বেড়াচ্ছে, আর এক জন এলভিস-নকলকে খুনের দায়ে।
কে আর লোকটার বর্ণনা দিতে পারত! আমাকে কষ্ট করে লুকিয়ে থাকতেও হল না, শুধু গ্র্যান্ড বলরুমে ঢুকে বন্দুকটা বার করে আমার সেই বিশেষ এলভিসকে তাক করে গুলি চালালাম, তার পর বন্দুকটা ফেলে অন্য কোনও এলভিস কোমরের একটা ঝটকা দেওয়ার আগেই বাইরে বেরিয়ে এলাম। প্লেনে চড়ে স্টিমসনে ফিরে ছদ্মবেশ ছেড়ে পরের দিন কাজে যোগ দিলাম।
আরে, এখানে ও কে? সেই চাক ওয়ালেশ, এলভিস-সাজো কনটেস্টের তৃতীয় রানার-আপ। ছুটি কেমন কাটালাম, সে প্রশ্নটা কেউ করতে পারে ভেবে আমার দুশ্চিন্তার কোনও কারণ ছিল না। বরাবরের মতো এ বারও সবার চোখ ছিল চাকের উপরেই।
সে তখন সকলের কাছে কনটেস্ট আর খুনের গল্প করে বেড়াচ্ছে। শোনা গেল, এলভিস নাম্বার টু যে লোকটা খুন হয়েছিল, তাকে আরও তিনটে স্টেটে সিরিয়াল মার্ডারের জন্যে খোঁজা হচ্ছিল। যে বুলেটটাতে তাকে খুন করা হয়েছিল, সেটা চাককেও স্পর্শ করে যায়, আর এখন সেই লাকি-চাকিকে পুরো ঘটনাটায় এক জন নায়কের সম্মান দেওয়া হচ্ছে। খবরের কাগজে, নিউজে ওর ছবি। সবাই ওকে এক জন সুপারস্টারের মতো দেখতে শুরু করেছিল, বিশেষত ক্যারল।
ক্যারল আমাকে ওদের এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধটাও করে বসল। এলভিস কনটেস্ট হোটেল এত পাবলিসিটি পেয়েছে যে তারা নায়ক ও তার সুন্দরী স্ত্রীকে তাদের হানিমুন স্যুইটে এক সপ্তাহ থাকার সুযোগ দিয়েছে। নিখরচায়। |
(সংক্ষেপিত)
ছবি: সায়ন চক্রবর্তী।
অনুবাদ: সুপ্রিয় বসাক। |
|
|
|
|
|