দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চললেও আদালতের রায়ের খবর পৌঁছয়নি সরুগ্রামের নির্ভয়ার বাবা, মা-র কাছে। তাঁদের ছোট মেয়ের ধর্ষণকারীদের শুক্রবার সাজা শোনানো হবে, তা জানতেন না তাঁরা। মোবাইল ফোনে বিচারকের নির্দেশের খবর পেয়ে বাবা কাঁদতে শুরু করলেন। তিনি বারবার বলছিলেন, “আর কোনও মা-বাবার কোল যেন এ ভাবে খালি না হয়।”
এদিন কোচবিহার জেলা অতিরিক্ত দায়রা জজ সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দম্পত্তির ছোট মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের দায়ে অমল বিশ্বাস নামে এক যুবকের ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন। অভিযুক্ত নিবারণ মণ্ডলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ফালাকাটার ধনীরাম পঞ্চায়েতের সরুগ্রামে ছোট্ট জমির উপর দম্পতির বাড়ি বলতে দরমার বেড়া দেওয়া দু’টি ছোট ঘর। আর খড়ের দু’টি ঘর। বর্তমানে স্ত্রী, ছেলে, ছেলের স্ত্রী এবং নাতিকে নিয়ে সংসার। দিনমজুরি করে সংসার চলে। ছেলে কাজে কেরালায় থাকেন। নিহত তরুণীর বাবা জানান, ২০১০ সালে দুই মেয়ে, এক ছেলে, ছেলের স্ত্রী, নাতিকে নিয়ে ভরা সংসার ছিল। ছোট মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সংসারের কাজের জিনিসপত্র আনতে সে প্রায়ই বাড়ির পাশের একটি মুদির দোকানে যাতায়াত করত। ওই মুদির দোকানের মালিকের আত্মীয় ঘোকসাডাঙার অমল সেখানে আসত। দোকান থেকেই মেয়ের সঙ্গে অমলের পরিচয়। তারপর মোবাইল ফোনের নম্বর দেওয়া নেওয়া। সেখান থেকেই সম্পর্ক এগিয়ে যায়। তিনি বলেন, “ওই ক’টা দিনের কথা কোনও দিন ভুলব না। মেয়ে সকালে বাড়ি থেকে বার হয়ে যায়। আর ফেরেনি। ভাবতে পারিনি, কেউ ভালবাসার নাম করে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করবে।” তাঁর স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলে, “চোখ বুঝলেই মেয়ের মুখ ভেসে উঠত। আজ এর বিচার হয়েছি।”
বাসিন্দারা জানান, এদিন তরুণীর বাবা সকালেই বার হয়েছিলেন কাজের খোঁজে। বাড়ির অন্য সদস্যরাও কাজে গিয়েছিলেন। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যর ডাকে সকলে বাড়ি ফেরেন। তখনই ফোনে সব জানতে পারেন, মেয়ের খুনিদের আজ সাজা হয়েছে। তার পর আর কান্না ধরে রাখতে পারেনি পরিবারের কেউই। |