সরকারি হাসপাতালে একটি পেসমেকার-চক্রের খোঁজ পেল কলকাতা পুলিশ। সস্তায় পেসমেকার দেওয়ার নাম করে রোগীদের ঠকিয়ে হাজার হাজার টাকা আদায় করে ওই চক্র। তবে এ ক্ষেত্রে এটি আন্তঃরাজ্য দালালচক্র কি না, তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। প্রতারণার অভিযোগে বৃহস্পতিবার সোদপুরের ঘোলা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের নাম শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি গত এক বছর ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, রসায়নে স্নাতক বছর ষাটের শুভাশিসবাবুর একাধিক পরিচয় রয়েছে। তাঁর কাছ থেকে দু’টি ভিন্ন পরিচয়পত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি কখনও কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর, কখনও আবার শুল্ক দফতরের অফিসার পরিচয়ে বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ। এর আগে ২০০৪ সালে শুল্ক দফতরের অফিসার পরিচয়ে বটতলা থানায় তাঁর নামে একটি প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৩-র অক্টোবর মাসে প্রসূন জোতদার নামে এক ব্যক্তি টালা থানায় শুভাশিসবাবুর নামে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, আরজিকরের হৃদ্রোগ বিভাগে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন তাঁর একটি পেসমেকারের প্রয়োজন হয়। তখনই শুভাশিসবাবুর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, শুভাশিসবাবু তাঁকে অত্যন্ত কম খরচে ভাল পেসমেকার এনে দেবেন বলেছিলেন। এ জন্য ২৫,০০০ টাকা চেয়েছিলেন তিনি। সে টাকা দেওয়ার পরেই শুভাশিসবাবু বেপাত্তা হয়ে যান বলে অভিযোগ। এমনকী তাঁর দেওয়া মোবাইল নম্বরেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, শুভাশিসবাবুর দেওয়া ফোন নম্বরটি আদতে সল্টলেকের বাসিন্দা এক শিক্ষকের। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, প্রায়ই তাঁকে ফোন করে অনেকে শুভাশিসবাবুর সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন।
সম্প্রতি মুচিপাড়া এলাকায় ফের পেসমেকার পাইয়ে দেওয়ার নামে একটি প্রতারণার ঘটনা ঘটে। তার তদন্তে নতুন করে নামে গোয়েন্দা বিভাগের ছিনতাই দমন শাখা। পুলিশ জানায়, টানা ১৫ দিন দু’জন সাব-ইনস্পেক্টর নজরদারি চালান। এর পরেই সন্দেহ যায় শুভাশিসবাবুর দিকে। তবে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়, মুচিপাড়ার ঘটনাটিতেও ধরা পড়া এই প্রৌঢ়ই জড়িত কি না। পুলিশের একাংশের ধারণা, একটি বড় মাপের আন্তঃরাজ্য দালাল-চক্র শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই কাজ করে বেড়াচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আগে এমনই অভিযোগে বর্ধমান থেকে একটি দালাল-চক্র ধরা পড়েছিল। তারাও সস্তায় পেসমেকার বা অস্ত্রোপচার করিয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করত। পুলিশের অনুমান, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বাঙুর হাসপাতালেও এই চক্রটি সক্রিয়। পুলিশ এ-ও জেনেছে যে, এই চক্রের সঙ্গে শুভাশিসবাবু ছাড়াও বেশ কয়েক জন যুক্ত। তাদের খোঁজ চলছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরও। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে অনেকে ঘুরে বেড়ান। এর মধ্যে থেকে দালালদের বার করা অসম্ভব। তা পুলিশই করতে পারে। পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতর যৌথ ভাবে কী করে রুখতে পারে, ভাবনা চলছে।” |