অগ্নিবিধির বালাই নেই সরকারি হাসপাতালেই
পেরেছে অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল। কিন্তু আমরি কাণ্ডের পরেও সরকারি হাসপাতালগুলিই অগ্নি নির্বাপণের বন্দোবস্ত করে উঠতে পারেনি!
ঢাকুরিয়ায় আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে ৯০ জনের মৃত্যুর পরে কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করে দমকল ও পুলিশ দেখেছিল, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ন্যূনতম সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। অগ্নি সুরক্ষা বিধি রূপায়ণে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই মেয়াদের মধ্যে শহরের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা করে ফেলেছে। কিন্তু সেই বিধি কার্যকর হয়নি সরকারি হাসপাতালগুলিতে। এই পরিস্থিতিতে কোনও সরকারি হাসপাতালে আগুন লাগলে বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দমকলকর্তারা।
দমকলের সুপারিশ ছিল:
• সব হাসপাতালের প্রতিটি ভবনের নীচে জলাধার গড়তে হবে।
• আগুন লাগলে রোগীদের তাড়াতাড়ি সরানোর জন্য রাখতে হবে আপৎকালীন নির্গমন পথ।
• সব ভবনের প্রতিটি তলায় নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে হবে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র। চাই প্রশিক্ষিত অগ্নি নির্বাপণ কর্মীও।
• বেসমেন্টে কিছু মজুত করা যাবে না।
• কিছুই রাখা চলবে না সিঁড়ি বা লিফটের কাছে।
• প্রতিটি ঘরে চাই স্প্রিংকলার।
• বসাতে হবে আগুন-ঘন্টি।
• নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পরীক্ষা করাতে হবে।

প্রায় সব বেসরকারি হাসপাতাল অগ্নি নির্বাপণের জন্য বিশেষ সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়। সরকারি হাসপাতালে পুরো বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করে পূর্ত দফতর এবং দমকল বিভাগ। বিভিন্ন হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য বেসরকারি সংস্থা থাকলেও অগ্নি নির্বাপণের বিষয়টি দেখার কর্মী নেই। দমকলের নিয়মিত পরিদর্শনও হয় না। দমকল জানাচ্ছে, বিভিন্ন ঘরে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র বসানো ছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলিতে তাদের অন্যান্য সুপারিশ মানা হয়নি।
হাসপাতালে অগ্নি সুরক্ষা নিয়ে শুক্রবার দমকল ও ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কর্মাসের যৌথ আলোচনাসভায় এই সব প্রসঙ্গ ওঠে। একটি বেসরকারি হাসপাতালের সিইও রূপালি বসু বলেন, “সব হাসপাতাল, নার্সিংহোমে উন্নত অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা দরকার। চাই নিয়মিত নজরদারিও।”
দমকল তাদের সুপারিশ রূপায়ণে সরকারি হাসপাতালগুলিকে বাধ্য করাতে পারছে না কেন?
দমকলের ডিরেক্টর জেনারেল দুর্গাপ্রসাদ তারেনিয়া জানান, সরকারি হাসপাতালে অগ্নি-নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। দমকলেরই এক কর্তা বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরকে জোর করার মতো ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থায় গাফিলতির জন্য আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।” দমকলকর্তাদের অভিযোগ, আমরি কাণ্ডের পরে সরকারি হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরকে। কিন্তু প্রতি বারেই ‘টাকা নেই’ বা ‘পূর্ত দফতর ঠিকমতো কাজ করছে না’ বলে অজুহাত দিয়ে দায় এড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্তারা কী বলছেন?
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “কাজ হচ্ছে না, তা নয়। দমকলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে যা যা করণীয়, তা করছি। সব হাসপাতালেই ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার রাখা হয়েছে। কিন্তু ‘ফায়ার এসকেপ’ বা জলাধার তৈরি করতে তো সময় লাগবে। হাসপাতাল বন্ধ রেখে সেই কাজ করা যাবে না। রোগীর বিপুল চাপ সামলে ধীরে ধীরে বিষয়টি সামলাতে হবে। সেটাই করছি।”
২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে আমরির অগ্নিকাণ্ডের পরে শহরের হাসপাতালগুলিতে অগ্নি-নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শুরু হয় নজরদারিও। পুলিশ ও দমকলের যৌথ কমিটি গড়ে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নজরদারি দুর্বল হয়েছে। দমকলের খবর, এই সময়ের মধ্যে অনেক বেসরকারি হাসপাতালই অগ্নি নির্বাপণের বন্দোবস্ত করেছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলি তিমিরেই রয়ে গিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.