রাজ্য সরকারের সম্মতি না-নিয়েই ট্রেড লাইসেন্সের ফি বাড়িয়ে চরম বিপাকে পড়েছে শিলিগুড়ি পুরসভা। ২০১২ সালের অগস্ট মাসে পুর কর্তৃপক্ষ ট্রেড লাইসেন্সের ফি কাঠামো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতো টাকা জমা নেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। অথচ শুক্রবার পুরসভার বোর্ড মিটিঙে বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দল তৃণমূল ও সিপিএম একযোগে আপত্তি তোলায় ট্রেড লাইসেন্স ফি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে। রাজ্যের অনুমোদন ছাড়া বাড়তি ফি নেওয়ার কারণে তা ব্যবসায়ীদের ফেরত দিতে ১ কোটি টাকার বেশি লাগতে পারে।
ওই ট্রেড লাইসেন্স-এ বাড়তি ফি নিয়েই অনেকটা সময় ঘুরপাক খায় পুরসভার বোর্ড মিটিং। আলোচনার সময়, বর্ধিত হারে ফি-র সমর্থন এবং বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে শাসক দল এবং বিরোধী কাউন্সিলরদের মধ্যে বির্তক শুরু হয়। কিছু পরেই তা তুমুল হট্টগোলে পৌঁছে যায়। সে সময়েই ফি বাড়ানোর নিয়ম নিয়ে পুর আইন খতিয়ে দেখতে শুরু করেন পুরসভার চেয়ারম্যান অরিন্দম মিত্র। তাঁর কথায়, “পুর কর্তৃপক্ষ যে ভাবে ট্রেড লাইসেন্স ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রূপায়ণ করেছেন, তা নিয়ম মেনে হয়নি।”
চেয়ারম্যানের ঘোষণার পরেই বিরোধী বাম এবং তৃণমূল কাউন্সিলররা ট্রেড লাইসেন্সের বর্ধিত ফি বাতিল করে, সংগ্রহ করা অতিরিক্ত ফি ফেরত দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। ৪৭ আসনের শিলিগুড়ি পুরসভায় বর্তমান কংগ্রেস বোর্ড সংখ্যালঘু। তাঁদের কাউন্সিলর সংখ্যা ১৪ জন। তৃণমূলের ১৫ এবং বামেদের ১৮ জন কাউন্সিলর রয়েছে। ভোটাভুটি হলে হার নিশ্চিত জেনে কংগ্রেসের কয়েকজন কাউন্সিলর তুমুল আপত্তি তোলেন। শেষে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তের প্রস্তাব মেনে সাত দিন পরে ফের একটি জরুরি বোর্ড মিটিং ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী ১ মার্চের সেই সভায় শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কী করণীয় তাই নিয়েই আলোচনা হবে বলে ঠিক হয়েছে।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলর মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “যে সময়ে এই অবৈধ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তখন জোটের বোর্ড ছিল। তৃণমূলের বর্তমান দলনেতাও তাতে স্বাক্ষর করেছেন।” পুরসভায় তৃণমূলের দলনেতা কৃষ্ণ পাল বলেন, “সে সময়ে আমরা শুধুমাত্র মদের দোকান, পানশালা, হোটেল সহ বড় প্রতিষ্ঠানের ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে কংগ্রেসি বোর্ড সকলের ক্ষেত্রেই ফি বাড়িয়েছে। কোনও নিয়মের ধার ধারেনি। আইনও মানেনি।” ট্রেড লাইসেন্সের মতো জট তৈরি হয়েছিল পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়েও। কর্মীদের দৈনিক হাজিরা ১৭৩ থেকে ২০০ টাকা করার প্রস্তাবে তৃণমূল এবং বাম কাউন্সিলররা সমর্থন জানায়। তৃণমূলের অস্থায়ী কর্মী সংগঠন রাত প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেয়র সহ কাউন্সিলরদের ঘেরাও করে রাখে। ১ মার্চের সভায় ফের মজুরির সিদ্ধান্ত পাশ করার আশ্বাসে ঘেরাও তুলে নেওয়া হয়। দুটি বিষয় নিয়েই মেয়র বলেছেন, “ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে তৃণমূল সদস্যরাও সমর্থন করেছিলেন। কী হয়েছে তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টিও তোলা হবে।” |