বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েছেন তিন মোটরবাইক আরোহী। লুকিং গ্লাসে দেখতে পান মন্ত্রীর গাড়ির চালক। দুর্ঘটনাটি ঘটে তাঁদের গাড়ির পিছনেই। পাশের আসনে বসা মন্ত্রীকে তা জানান চালক। কালবিলম্ব না-করে তাঁকে গাড়ি ঘোরানোর নির্দেশ দিলেন মন্ত্রী।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে মন্ত্রী নিজেই নেমে পড়লেন উদ্ধারকাজে। শুধু তা-ই নয়, অ্যাম্বুল্যান্স বা অন্য গাড়ির জন্য অপেক্ষা না-করে নিজের গাড়িতে তুলে আহতদের নিয়ে গেলেন হাসপাতালে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দ্রুত চিকিৎসারও ব্যবস্থা করলেন। মন্ত্রীর এই প্রকৃত জনসেবক ভূমিকার সাক্ষী থাকল কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। মন্ত্রীর নাম রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার বেলা তখন ১১টা। ডোমজুড়ের একটি সরকারি অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীববাবু যাচ্ছিলেন বিধানসভায়। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে সুন্দরপাড়া স্টপ সবেমাত্র পার করেছেন। তার কয়েক সেকেন্ড পরেই ওই সড়কে ঘটে মোটরবাইক দুর্ঘটনা। আর সেটাই লুকিং গ্লাসে দেখতে পেয়েছিলেন মন্ত্রীর গাড়ির চালক হিমাংশু মাইতি। |
পুলিশি সূত্রের খবর, চেঙ্গাইল থেকে মোটরবাইকে উনসানিতে ফিরছিলেন শেখ রিয়াজ্জুদিন নামে এক যুবক। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দিদি জাহানারা বেগম আর চার বছরের ভাগ্নি সুহানা খাতুন। সুন্দরপাড়ায় ডিভাইডারের কাটা অংশ দিয়ে সাঁতরাগাছি-রবীন্দ্র সদন রুটের একটি বাস ঘোরানো হচ্ছিল। পুলিশ জানায়, এ ভাবেই প্রতিদিন ওই কাটা অংশ দিয়েই সাঁতরাগাছি থেকে কলকাতার সব বাস ঘোরানো হয়। কিন্তু এ দিন বাসটি ঘোরাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। সজোরে ধাক্কা মারেন সামনের রিয়াজুদ্দিনের মোটরবাইকে। সেই ধাক্কায় রিয়াজ-সহ তিন জনই ছিটকে পড়েন নয়ানজুলিতে।
নিজের গাড়ির চালকের কাছ থেকে সব শুনে বিধানসভায় না-গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে নেন রাজীববাবু। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, নয়ানজুলিতে পড়েছে মোটরবাইকটি। ভিড় জমে গিয়েছে। মন্ত্রী তাঁর এক দেহরক্ষী নুরুল হুদা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আহতদের উদ্ধারে নেমে পড়েন। বাসচালককে ধরার জন্য পাঠিয়ে দেন নিজের অন্য রক্ষী মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসকে।
মন্ত্রীর কথায়, “ওখানে গিয়ে দেখি, আহত তিন জনের মধ্যে শিশুটির মুখ থেঁতলে গিয়েছে। মাথা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। রাস্তার এক পাশে বসে আছেন আতঙ্কিত এক মহিলা। আর এক যুবক রাস্তায় পড়ে গোঙাচ্ছেন। আমি প্রথমে শিশুটিকে কোলে করে নিজের গাড়িতে তুলে দিই। অন্য দু’জনকেও তুলতে বলি।” মন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা বাস-সহ চালককে আটক করে। পরে বাসচালককে গ্রেফতার করা হয়।
সেচমন্ত্রী জানান, তিনি আহতদের গাড়িতে তোলার পরেই রাস্তা যতটা সম্ভব যানজট মুক্ত রাখার নির্দেশ দেন পুলিশকে। ফোন করে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে হাওড়া হাসপাতালে থাকতে বলেন। তার পরে নিজের গাড়ির হুটার বাজিয়ে রওনা দেন হাওড়া জেলা হাসপাতালের দিকে। সেখানে আহতদের ভর্তি করিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করে তবেই হাসপাতাল ছাড়েন মন্ত্রী।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস রায় বলেন, “শিশুটি এবং তার মামার আঘাত কিছুটা গুরুতর। মহিলার আঘাত কম। নিখরচায় সব রকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৯ সালে সংসদে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় জখম এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের ব্যাগ থেকে ওষুধ বার করে আহতের প্রাথমিক শুশ্রূষা করে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। এ দিন রাজীববাবুও দলনেত্রীর দেখানো পথেই হাঁটলেন। উদ্ধারের কোনও কৃতিত্বই দাবি করেননি তিনি। বলেন, “এটা আমার কর্তব্য। বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা আমাদের দলনেত্রীর আদর্শ। সেই আদর্শে বিশ্বাসী হয়েই এ কাজ করেছি।” |