অন্ডাল বিমানবন্দরের কাজ কতটা এগলো, তা খতিয়ে দেখতে চাঙ্গি বিমানবন্দরের কর্ণধার স্বয়ং আসছেন সিঙ্গাপুর থেকে। রাজ্যে প্রথম বেসরকারি বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগটিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতা কতখানি মিলছে, চাঙ্গি বিমানবন্দরের সিইও লিং লিয়াংসং তা-ও যাচাই করবেন বলে ইঙ্গিত। এ মাসের ২৭ তারিখে তাঁর কলকাতায় পৌঁছানোর কথা।
অন্ডালে বেসরকারি বিমানবন্দর গড়ে তুলছে যে সংস্থা, সেই বেঙ্গল এরোট্রপলিস প্রাইভেট লিমিটেড (বিএপিএল)-এর অন্যতম অংশীদার সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি। গত সেপ্টেম্বরে অন্ডালে গিয়ে নির্মীয়মাণ বিমানবন্দরকে কাজী নজরুল ইসলামের নামে নামাঙ্কিত করে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে লিয়াংসং-ও উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু পরিকাঠামোর কাজ শেষ
হয়ে গেলেও অন্ডালে বিমান পরিষেবা শুরু করা যায়নি। কারণ, জমি-জট এখনও বহাল। উপরন্তু বিদ্যুতের হাই-টেনশন লাইন সরানো হয়নি। বিমানবন্দর লাইসেন্সও পায়নি। এ সব নিয়েই চাঙ্গি কিছুটা অসন্তুষ্ট। মূলত স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওই অসন্তোষের কথা সেপ্টেম্বরে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর।
এ হেন প্রেক্ষাপটে চাঙ্গি-কর্তার আসন্ন সফর স্বভাবতই আলাদা মাত্রা পেয়েছে। সমস্যার কারণ কী?
অভিযোগ, প্রকল্প-এলাকায় এখনও কিছু জমি রয়ে গিয়েছে, যেগুলির মালিকেরা রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের হাতে জমি তুলে দিয়েও অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি তৈরি করছেন। ওঁদের সংখ্যা খুব বেশি না-হলেও এতে বিএপিএল অসুবিধায় পড়ছে। এ-ও অভিযোগ, সুরাহা চেয়ে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য বিশেষ মেলেনি। উপরন্তু কিছু জমি রয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে। বিমানবন্দরে ঢোকার প্রধান রাস্তাটির আশপাশেও ফৌজি জমি। সেগুলো হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও রাজ্যের সহায়তা চেয়েছিল চাঙ্গি। তাদের আর্জি ছিল, রাজ্য সরকার সেনা-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুক। কার্যত তেমনও কিছু হয়নি।
ফলে জমি ঘিরে জটিলতা রয়ে গিয়েছে। বোঝার উপর তারের আঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে হাই-টেনশন বিদ্যুৎ লাইন। কী রকম?
সংস্থা-সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন বিমানবন্দরের রানওয়ের মাথার উপর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হাই টেনশন লাইন গিয়েছে। তা না-সরালে ওখানে বিমান ওঠা-নামা অসম্ভব। কিন্তু এ জন্য অনুরোধ জানিয়েও বণ্টনের তরফে সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে এখন বিএপিএল’কে গাঁটের টাকা খরচ করে তার সরাতে হচ্ছে।
সংস্থা-সূত্রের খবর, বিএপিএলের স্থানীয় অফিসারদের কাছ থেকে এ সমস্ত কিছুই চাঙ্গি-কর্তৃপক্ষের কানে গিয়েছে। এবং তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, রাজ্য প্রশাসনের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া মুশকিল আসান অসম্ভব। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের আক্ষেপ, “সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে তাই অনুরোধ করা হয়েছিল, প্রশাসন যেন পাশে দাঁড়ায়। তা-ও অসুবিধে পুরো মেটেনি।” বস্তুত পরিকাঠামো তৈরি হয়েও দীর্ঘ দিন অন্ডাল যদি চালু না-হয়ে এ ভাবে পড়ে থাকে, তা হলে উদ্যোগটির সঙ্গে চাঙ্গি সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে বলেও আশঙ্কা দানা বেঁধেছে কোনও কোনও মহলে। নতুন বিমানবন্দর প্রকল্পে চাঙ্গির শেয়ার প্রায় ২৬%।
এমতাবস্থায় আসছেন চাঙ্গি-কর্তা। রাজ্য সরকারের কী বক্তব্য?
প্রশাসনের কাছ থেকে এ প্রসঙ্গে বিশেষ কিছু বক্তব্য মেলেনি। রাজ্যের এক আধিকারিক শুধু বলেন, “সমস্যা মীমাংসার চেষ্টা হচ্ছে।” সেপ্টেম্বরে অন্ডাল বিমানবন্দরের অনুষ্ঠানে চাঙ্গিকে সহযোগিতার আশ্বাসদানের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী তাদের এ রাজ্যে বেশি বিনিয়োগ করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সে ব্যাপারে আলোচনা করাই লিয়াংসঙের সফরের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে বিএপিএলের তরফে সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে। বিএপিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পার্থ ঘোষের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর লগ্নি-প্রস্তাব খতিয়ে দেখতেই চাঙ্গির সিইও আসছেন। রাজ্য সরকারের বেশ কয়েক জন আধিকারিকের সঙ্গে ওঁরা দেখা করবেন।”
নবান্নের খবর: রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে লিয়াংসঙের। তা ছাড়া তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। যদিও সেই সাক্ষাৎ আদৌ হবে কি না, এখনও চূড়ান্ত হয়নি। |