হেলিকপ্টার ও ছোট বিমানে নিয়মিত যাত্রী-পরিষেবা চালু রাখতে হলে পেশাদার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে উপযুক্ত পরিচালন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। যে কারণে কয়েকটি রাজ্যে বিমান পরিবহণের খুঁটিনাটি দেখভালের জন্য পরিবহণ দফতরের আলাদা শাখা রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তা নেই। অথচ সরকারি উদ্যোগে রাজের বিভিন্ন প্রান্তে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হয়ে গিয়েছে।
এমতাবস্থায় এই বিমান পরিবহণের সার্বিক দায়িত্ব এক বেসরকারি সংস্থার হাতে ন্যস্ত করতে চাইছে রাজ্য। বেঙ্গল এরোট্রপলিস প্রাইভেট লিমিটেড (বিএপিএল) নামে সংস্থাটিকে ইতিমধ্যে এই মর্মে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিএপিএল-ও বিষয়টিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রসঙ্গত, বিএপিএল-ই অন্ডালে গড়ে তুলছে রাজ্যের প্রথম বেসরকারি বিমানবন্দর। পাশাপাশি এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারি কপ্টার পরিষেবার বেশ কিছু কাজও সামলাচ্ছে তারা।
কেন্দ্রীয় সংস্থা পবনহংসের কাছ থেকে সাত আসনের একটি হেলিকপ্টার ভাড়ায় নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মাসে ৪০ ঘণ্টার জন্য। মন্ত্রী-আমলাদের ব্যবহারের সময়টুকু বাদ দিয়ে সেটা মোটামুটি বসেই থাকছিল। তাই সেটিকে দিয়ে সাধারণ যাত্রী পরিবহণ শুরু হয়েছে। পবনহংসের কপ্টারটি বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে নিয়মিত গঙ্গাসাগর-মালদহ-দুর্গাপুর-শান্তিনিকেতনে যাতায়াত করছে।
এ বার তার গন্তব্য-তালিকায় আরও সংযোজন হল। শুক্রবার রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র কলকাতা-হলদিয়া হেলিকপ্টার চালানোর কথা ঘোষণা করেছেন। মাসে দুই মঙ্গলবার সেটি হলদিয়া যাবে। আর বাকি দুই মঙ্গলবার যাবে সুন্দরবনের পাখিরালয়ে। উপরন্তু মালদহ থেকে বালুরঘাটে যাত্রী পরিবহণও শুরু হবে। “এত দিন হেলিকপ্টার কলকাতা থেকে মালদহ হয়ে বালুরঘাট যাচ্ছিল। কিন্তু তাতে চেপে মালদহের লোক বালুরঘাটে যেতে পারছিলেন না। এখন মাত্র পাঁচশো টাকা দিয়ে তাঁরা হেলিকপ্টারে বালুরঘাট যেতে পারবেন।” বলেন মদনবাবু।
এ ভাবে বিভিন্ন রুটে উড়ান চালু হওয়ায় ভাড়ার চল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে মাসে প্রায় ৩৬ ঘণ্টাই হেলিকপ্টার উড়ে বেড়াচ্ছে। বাড়ছে উপযুক্ত পরিকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা। ইতিমধ্যে এক দিন শান্তিনিকেতনে নেমে কপ্টারের চাকা মাটিতে বসে গিয়ে বিভ্রাটও দেখা দেয়। তার পরে পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিকাঠামো তৈরির জন্য পবনহংসের তরফেও রাজ্যের উপরে চাপ আসছে। ঘটনা হল, হেলিপ্যাড নির্মাণ বা আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য মুহুর্মুহু সরবরাহের মতো উড়ান-পরিষেবায় একান্ত জরুরি বেশ কিছু কাজ রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের আয়ত্তের বাইরে।
অগত্যা বিএপিএল-কে দিয়েই সেগুলো করাতে চাইছে রাজ্য সরকার। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা সংস্থাটি অন্ডালে যে বিমানবন্দর বানাচ্ছে, সেখানে এখনও বিমান পরিষেবা চালু না-হলেও কলকাতা থেকে সপ্তাহে দু’দিন হেলিকপ্টার যাতায়াত করছে। বিএপিএলের ম্যনেজিং ডিরেক্টর পার্থ ঘোষ বলেন, “হেলিকপ্টারের টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে বিপণনের যাবতীয় দায়িত্ব রাজ্য সরকারের হয়ে আমরাই সামলাচ্ছি। বিমান পরিবহণে আরও সহায়তা চেয়ে সরকারের দেওয়া প্রস্তাবটি গ্রহণও করতে আমরা আগ্রহী। সরকারকে তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।” পার্থবাবুর দাবি, “চাঙ্গি সঙ্গে থাকায় আমাদের উন্নতমানের বিশেষজ্ঞ-দল রয়েছে। বিমান পরিবহণের খুঁটিনাটি ব্যাপারে আমরা রাজ্যকে সাহায্য করতেই পারি।”
এ দিকে কলকাতা থেকে কোচবিহার ও বাগডোগরায় ছোট বিমান চালাতে চেয়ে রাজ্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে বেঙ্গালুরুর এক বিমানসংস্থা। উল্লেখ্য, বাগডোগরায় নিয়মিত নৈশ উড়ান চালু করতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগী হয়েছিলেন। স্পিরিট এয়ার নামে বেঙ্গালুরুর সংস্থাটি সেই সুবিধাই নিতে চাইছে বলে সূত্রের খবর। স্পিরিটের আট আসনের একটা বিমান আপাতত কলকাতা বিমানবন্দরে রাখা আছে। সেটা কখনও-সখনও পূর্ণিয়া, জামশেদপুর, রাঁচি বা বোকারোয় যাতায়াত করে।
সরকারের কী বক্তব্য?
নবান্ন-সূত্রের খবর: কোচবিহারে যে রানওয়ে রয়েছে, তাতে ছোট বিমান অনায়াসে ওঠা-নামা করতে পারে। স্পিরিট এয়ারের প্রস্তাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। |