ভূস্বর্গে ধরা পড়েছিলেন ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল। প্রায় এক বছর ধরে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন মামলা দায়ের হয়েছে সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে। এত দিনে তারই একটি মামলায় শাস্তি হল তাঁর। এই প্রথম।
কর্মীদের প্রাপ্য টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা না-দেওয়ায় শুক্রবার সুদীপ্তের তিন বছর কারাদণ্ড হয়েছে। এ দিন বিধাননগর আদালতে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে নেন। তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বিচারক শাস্তি ঘোষণা করেন। তিন বছর কারাবাস ছাড়াও সারদা-প্রধানের ১০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে ওই মামলায়।
পুলিশ জানায়, গত ১৮ ডিসেম্বর পিএফ ইনস্পেক্টর খোকন দে সল্টলেকের সেক্টর-৫ থানায় সুদীপ্তের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে জানান, সারদা-কর্তা তাঁর সংস্থা ‘বেঙ্গল মিডিয়া’র কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে তিন লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা জমা দেননি। সেই মামলায় সুদীপ্ত ছাড়াও ওই সংস্থার কর্মী কুণাল ঘোষ, দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও সোমনাথ দত্তকে গ্রেফতার করা হয়। বিধাননগরের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে চার্জ গঠন হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। সে-দিন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা আদালতে অভিযোগ করেন, পুলিশ অভিযুক্তদের বক্তব্য না-শুনে একতরফা ভাবে চার্জ গঠন করেছে। কী অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হল, অভিযুক্তেরা তা শুনতেই পাননি।
তার কয়েক দিন পরে পুলিশ আদালতে আবেদন জানায়, অভিযুক্ত সুদীপ্ত বিচারকের কাছে দোষ স্বীকার করতে চান। এ দিন সারদা-প্রধানকে নিজের দোষ স্বীকার করার সুযোগ দেয় আদালত। বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট স্বাতী মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে দাঁড়িয়ে সুদীপ্ত বলেন, তিনি ‘মিডিয়া’র ব্যবসায় ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু ওই ব্যবসা থেকে তাঁর রোজগার হচ্ছিল না। মিডিয়া ব্যবসার সব কিছুর দেখভাল করতেন কুণাল ঘোষ। তাঁর বন্ধু সোমনাথও সেখানকার কর্মী ছিলেন। অন্য কর্মী দেবযানী যাবতীয় চেক তৈরি করতেন। সুদীপ্ত জানান, তিনি শুধু চেকে সই করতেন।
সারদা-কর্ণধার একই সঙ্গে বিচারককে জানান, তিনি কাউকে দোষ দিতে চান না। সব দোষ এবং যাবতীয় দায়ভার তিনি নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন। তাঁকে যেন যত দূর সম্ভব ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বিচারক তাঁর ১০ হাজার টাকা জরিমানা করায় সুদীপ্ত বলেন, শ্যামল সেন কমিশন জানিয়েছে, এখন তাঁর একটি বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমের স্বত্বাধিকার রয়েছে। সেই সংস্থা বিক্রি করে তিনি জরিমানার টাকা মেটাতে পারবেন কি না, বিচারকের কাছে তা জানতে চান সারদা-প্রধান। বিচারক জানান, তিনি সেটা করতে পারেন। পুলিশ জানায়, পিএফ মামলায় কুণাল, দেবযানী, সোমনাথদের বিচার শেষ হয়নি। |
এ দিন সারদা কাণ্ডের অন্য দু’টি মামলার শুনানি ছিল বিধাননগরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অপূর্বকুমার ঘোষের আদালতে। একটি সারদার কর্মীদের বেতন না-মেটানোর মামলা। তাতে মূল অভিযুক্ত সুদীপ্তই। এ দিন সেই মামলার চার্জ গঠন করা হয়। সুদীপ্ত আদালতে জানান, তিনি নির্দোষ।
অন্যটি আমানতকারীদের প্রতারণা করার মামলা। তাতেও এ দিন চার্জ গঠন করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। মামলার অন্যতম অভিযুক্ত অরবিন্দ সিংহ চহ্বাণের আইনজীবী আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল বাংলা লিখতে বা পড়তে পারেন না। মামলার বিভিন্ন সাক্ষী কী সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁর জন্য সেটা হিন্দিতে অনুবাদ করে দেওয়া হোক। পরবর্তী শুনানি ৭ মার্চ। |