ঘোড়া বলে ব্যঙ্গে হইচই, ইস্তফা চার দলত্যাগীর
দু’দিন ধরে কটাক্ষের চোটে তাঁদের অতিষ্ঠ করে দিয়েছিলেন বাম বিধায়কেরা। তাঁদের আর্জি মেনে ট্রেজারি বেঞ্চের শেষ সারিতে আলাদা বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন স্পিকার। সেই আসনে বসে তাঁদের কেউ কথা বললেই বাম আসন থেকে চিৎকার আসছিল, “স্যর, ঘোড়া কথা বলছে!” কানে হেডফোন দিয়ে কারও চোখ বুজে এলেই আবার আবেদন, “ঘোড়া ঘুমোচ্ছে স্যর!” বারংবার অভিযোগের জেরে বারদুয়েক স্পিকারকেও তাঁদের মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে হয়েছে! শেষ পর্যন্ত বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনে বিধায়ক-পদ থেকে ইস্তফাই দিয়ে দিলেন দলত্যাগী চার বিধায়ক।
রাজ্যসভার ভোটে ক্রস ভোটিং করে তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থন করেছিলেন মোট ৬ জন বিধায়ক। কংগ্রেসের তিন ও বামেদের তিন জন। তার মধ্যে আরএসপি-র অনন্তদেব অধিকারী, দশরথ তিরকি, ফরওয়ার্ড ব্লকের সুনীল মণ্ডল এবং কংগ্রেসের সৌমিত্র খান শুক্রবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। কংগ্রেসের আরও দুই দলত্যাগী বিধায়ক সুশীল রায় ও ইমানি বিশ্বাস অবশ্য এখনও ইস্তফা দেননি। যার জেরে শাসক দলের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। তাদের প্রশ্ন, ইমানি ও সুশীল কংগ্রেসের দুই তুলনামূলক শক্ত ঘাঁটি মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার বিধায়ক বলেই কি পুনর্নির্বাচনের ঝুঁকি নিতে দ্বিধায় ভুগছে তৃণমূল? ওই দু’জনকে বাদ দিয়েও চার জন বিধায়কের ইস্তফার পরে আপাতত রাজ্য বিধানসভায় পাঁচটি আসন শূন্য হল। এবং সবক’টিই দলত্যাগের কারণে। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়ে আগেই ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন শান্তিপুরের বিধায়ক অজয় দে।
আর্থিক প্রলোভনেই পাঁচ বিধায়ক রাজ্যসভায় শাসক দলকে ভোট দিয়েছেন বলে সরব ছিল বিরোধী শিবির। কোতুলপুরের বিধায়ক সৌমিত্র অবশ্য তার আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তবে খাতায়-কলমে কংগ্রেস বিধায়ক হিসাবেই তাঁর নাম নথিভুক্ত ছিল। রাজ্যসভার ভোটে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ থেকেই এ বারের অধিবেশনে অভিনব কৌশল নিয়েছিলেন বাম বিধায়কেরা। অসংসদীয় শব্দ প্রয়োগ না-করে, ব্যক্তিগত আক্রমণে না-গিয়ে দলত্যাগী বিধায়কদের দেখলেই তাঁরা শুধু ‘স্যর, ঘোড়া’ বলে হইচই করেছেন! এমন কটাক্ষের মুখে দৃশ্যতই বিব্রত দেখিয়েছে দলত্যাগীদের! ইস্তফার পরে এ দিন তাঁদের পাশে নিয়েই পরিষদীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব বিধানসভা চত্বরে বলেছেন, “রাজ্যের উন্নয়নের কাজকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটের আগে এঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। মানুষের হয়ে কাজ করতে নিজের নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের সঙ্গে কথা বলে বিধায়ক পদে তাঁরা ইস্তফা দিলেন।”
স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র দেওয়ার আগে এ দিন বিধানসভায় নিজের ঘরে ডেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলত্যাগী বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেন। তৃণমূল সূত্রের ইঙ্গিত, চার জন এ দিন বিধায়ক-পদ ছেড়ে দিলেও গাজোলের সুশীল ও সুতির ইমানি এখনই ইস্তফা দিন, মুখ্যমন্ত্রীই তা চান না। রাজ্যসভায় শাসক দলের পক্ষে ভোট দিলেও এঁরা কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও তৃণমূলে যোগ দেননি। কংগ্রেস অবশ্য আগেই ওই দু’জনকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সাসপেন্ড করেছে। বাকি চার জনের ইস্তফার পরেও এই দু’জনকে নিয়ে আপাতত জটিলতা রয়েই যাচ্ছে।
দলবদলের এই আবহ অব্যাহত থেকেছে বিধানসভার বাইরেও। তৃণমূল ভবনে এসে এ দিনই কোচবিহার পুরসভার ৪ জন বাম এবং মেদিনীপুর পুরসভার তিন জন কংগ্রেস কাউন্সিলর আনুষ্ঠানিক ভাবে শাসক দলে দিয়েছেন। কোচবিহার ও মেদিনীপুর, দু’টি পুরসভাই এখন তৃণমূলের পরিচালনাধীন। কোচবিহারে বিরোধী বাম শিবির থেকে সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের দু’জন করে কাউন্সিলর এ দিন দল বদল করায় তৃণমূলের শক্তি আরও বাড়ল।
মেদিনীপুরেও কংগ্রেসের ৬ জনের মধ্যে তিন কাউন্সিলর দল বদলানোয় তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি হল। এ ছাড়াও, ঘাটাল পুর এলাকার কংগ্রেসের ১৮ জন পদাধিকারী যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। দলত্যাগীদের স্বাগত জানিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ইঙ্গিত দিয়েছেন, কার্শিয়াঙের প্রাক্তন জিএনএলএফ বিধায়ক শান্তা ছেত্রীও তাঁর অনুগামীদের নিয়ে শীঘ্রই শাসক দলে যোগ দেবেন। জিএনএলএফের আরও দুই প্রাক্তন বিধায়ক আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
উজ্জীবিত মুকুলবাবু বলেছেন, “লোকসভা ভোটের আগে যে ভাবে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিরা আমাদের দলে আসছেন, তা ইঙ্গিতবাহী। কারণ মানুষ চাইছেন বাংলায় তৃণমূল আরও বিস্তৃত হোক। অন্য দলের জনপ্রতিনিধি, নেতা-কর্মীরা যত বেশি আমাদের দলে যোগ দেবেন, ততই আমাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি হবে।” আর এক প্রবীণ বাম নেতার মন্তব্য, “শুনেছি রঘু ডাকাত চিঠি দিয়ে ডাকাতি করতে আসত! এখন তৃণমূল ব’লে ব’লে দল ভাঙাচ্ছে! এক দিন ফল বুঝবে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.