মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার ছাড়পত্রের আশায় কলকাতা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিল কাঁকিনাড়া হাইস্কুলের ৪১৩ জন পড়ুয়া। কিন্তু তাদের মাধ্যমিকে বসার অনুমতি দেয়নি হাইকোর্ট। প্রতিবাদে ওই ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখায় আদালতে, ভাঙচুর করে আইনজীবীদের গাড়ি। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে অভিযোগ জানাতে যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হয় কালীঘাটে। পুলিশ হাজরা মোড়ে তাদের আটকায়। পুলিশকর্তারা তাদের সরিয়ে দেন।
শুক্রবার সকাল থেকে ওই ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তের এজলাসের বাইরে অপেক্ষা করছিল। পরীক্ষায় বসার অনুমতি মেলেনি জেনেই তারা এজলাসের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশবাহিনী অনেক চেষ্টায় তাদের আদালতের বাইরে বার করে দেয়। পড়ুয়ারা আদালতের গেটে বিক্ষোভ চালাতে থাকে। আইনজীবীদের গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। তার পরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে সন্ধ্যা সওয়া ৬টা নাগাদ হাজরা মোড়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। জানিয়ে দেওয়া জানায়, এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা যায় না।
পড়ুয়ারা হাজরা মোড়ে বসে পড়ে। পুলিশকর্তারা তাদের বোঝান, বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর এক্তিয়ারভুক্ত। তাই তাদের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেই দেখা করা উচিত। আধ ঘণ্টা ধরে পুলিশের সঙ্গে বচসার পরে বিক্ষোভকারীরা হাজরা মোড় থেকে চলে যান। এই বিক্ষোভের ফলে ওই মোড়ে যানবাহন চলাচল কিছুটা ব্যাহত হয়।
কী নিয়ে বিক্ষোভ ওই ছাত্রদের?
আদালত সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার ওই স্কুলের পরিচালন সমিতি হাইকোর্টে মামলা করে বলেছিল, ৪১৩ পড়ুয়া পরীক্ষা দিতে পারবে বলে জানিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তাদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়নি। ফলে তারা অ্যাডমিট কার্ড পাচ্ছে না এবং পরীক্ষায় বসতেও পারছে না। আদালত তাদের মাধ্যমিকে বসার অনুমতি দিক। পরীক্ষায় বসতে চেয়ে ওই স্কুলের তিন ছাত্রছাত্রীও আলাদা ভাবে হাইকোর্টে মামলা করে। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত বলেন, যে-সব পড়ুয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর পায়নি, শুধু তারাই আদালতে আবেদন করতে পারত। স্কুলের পরিচালন সমিতি এমন আবেদন করতে পারে না। তা ছাড়া পরিচালন সমিতি যথেষ্ট সময় পেয়েও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে দরবার করেনি। এটা তাদের গাফিলতি।
পর্ষদ সূত্রের খবর, ওই স্কুলের পরিচালন সমিতি ৮৮৩ জন ছাত্রছাত্রীর নাম তাদের কাছে পাঠিয়েছিল রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়ার জন্য। পর্ষদ সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে জানতে পারে, ৪১৩ জন ছাড়া আর সকলেই সময় পার হয়ে যাওয়ার পরে ওই স্কুলের দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। নবম বা দশম শ্রেণিতে ভর্তি হতে গেলে যে-সব নিয়মকানুন মানা দরকার, তাদের ক্ষেত্রে পরিচালন সমিতি তা মানেনি। বরং পরীক্ষায় বসতে অসুবিধা হবে না বলে আশ্বাস দিয়ে তাদের ভর্তি করে নিয়েছে। এই অবস্থায় পর্ষদ জানিয়ে দেয়, ৮৮৩ জন ছাত্রের মধ্যে ৪৬৭ জন এ বার মাধ্যমিকে বসতে পারবে না। বাকি ৪১৬ জনের জন্য স্কুল ঠিক সময়ে আবেদন করলে তারা মাধ্যমিকে বসতে পারবে। কিন্তু স্কুল ওই ৪১৬ জনের জন্যও ঠিক সময়ে পর্ষদের কাছে আবেদন করেনি। তাই পর্ষদ তাদেরও পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি।
তিন পড়ুয়া নিজেরাই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে। তাদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেন বিচারপতি। বাকি ৪১৩ জন নিজেরা হাইকোর্টে আবেদন করেনি। তাদের জন্য হাইকোর্টে যায় স্কুলের পরিচালন সমিতি। সেই জন্যই বিচারপতি তাদের আবেদন খারিজ করে দেন।
অ্যাডমিট কার্ড না-পাওয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে রিজেন্ট পার্ক থানার একটি স্কুলেও। পুলিশ জানায়, ওই এলাকার বিদ্যা নিকেতন হাইস্কুলের ১৯ জন ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড পায়নি। তাদের অভিভাবকেরা হাইকোর্টে যান। এ দিন হাইকোর্ট সেই মামলা খারিজ করে দেওয়ায় তাঁরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অ্যাডমিট কার্ড না-পাওয়ায় পিকনিক গার্ডেন স্কুলের কিছু পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকেরাও বিক্ষোভ দেখান।
কী বলছেন পর্ষদ-কর্তারা?
পর্ষদের কর্তা প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, ঠিক ভাবে পরীক্ষায় বসার আবেদনপত্র পূরণ করা সত্ত্বেও মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড পৌঁছয়নি, এমন কোনও ঘটনা কোথাও ঘটেনি। পরীক্ষার্থীরা স্কুলের মাধ্যমে পরীক্ষা দেয়। স্কুলের তরফে কোনও ভুল হয়ে থাকলে পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড পেতে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু সে-ক্ষেত্রে পর্ষদের কিছু করার নেই। |