ও পার বাংলার বাগেরহাট থেকে মায়ের সঙ্গে বেনাপোলে এসেছিল ন’বছরের ছোট্ট তিতির।
মাথায় কালো ফেট্টি, তাতে লেখা ‘অমর একুশে’। গালে সবুজের মধ্যে লাল বৃত্ত। ফেরার সময়ে উর্দিধারীর হাত ধরে বলে গেল, ‘ধন্যবাদ।’
ধন্যবাদ ওই বাংলার লড়াকুদের, ধন্যবাদ এই বাংলার বন্ধুদের, ধন্যবাদ বাহান্নর অমর শহিদ সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, শফিউরকে একুশে ফেব্রুয়ারি দুই বাংলার ব্যারিকেডে আছড়ে পড়া জনসমুদ্রের মনের কথা ছিল বোধ হয় এ-ই।
গত এক দশক ধরে এই দিনটিতে সামান্য সময়ের জন্য দুই দেশের গেট খুলে দেওয়ার যে প্রথা চালু হয়েছিল, এ বার অবশ্য তা ভেঙে গিয়েছে। বাংলাদেশ গেট খুললেও নিরাপত্তার কারণে ভারত খোলেনি। ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ দুই দেশ আলাদা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। বাংলাদেশের অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা বেনাপোলের মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। এ পারে পেট্রাপোলে অনুষ্ঠানের দায়িত্বে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। |
সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বনগাঁর বিধায়ক-পুরপ্রধানদের নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী নো ম্যান্স ল্যান্ডে ও পারের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অন্য প্রান্তে এ দেশের দুই বাংলা মৈত্রী সমিতির মঞ্চে শুরু হয়, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...।’ পরে যখন বাংলা ব্যান্ড ‘ভূমি’ মঞ্চে ওঠে, কয়েক ফুটের মধ্যে ব্যারিকেডের সামনে চলে এসেছেন শয়ে-শয়ে বাংলাদেশি। ‘বারান্দায় রোদ্দুর’-এর সুরে-তালে ব্যারিকেডের দু’ধারে নাচতে শুরু করেন পুরুষ-নারী নির্বিশেষে দু’দেশের মানুষ। ও পারের তরুণী তানিয়া সুলতান চেঁচিয়ে ওঠেন, “আমরা কিন্তু আপনাদের থেকে খারাপ নাচি না!”
জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “এখন বিধানসভা চলছে। কিন্তু আমরা যে সুখে-দুঃখে সব সময়ে ভাইয়ের পাশে থাকব, সে বার্তা পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রী আমায় এখানে পাঠিয়েছেন।” দু’পারের উচ্ছ্বাসে আপ্লুত ‘ভূমি’র সৌমিত্র বলেন, “রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুষ্ঠানে গোটা পৃথিবীর সামনে গান করেছি। কিন্তু সীমান্তে দাঁড়িয়ে গাইছি আর দুই বাংলার মানুষ তাল দিচ্ছেন, এমন অনুভূতি কখনও হয়নি।” দলের আর এক সদস্য সুরজিৎ বলেন, “তিন বার বাংলাদেশ গিয়েছি। কিন্তু দুই বাংলার সামনে গাওয়া এই প্রথম।”
ঢাকায় একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন পলি মৈত্র। অফিসে ছুটি মঞ্জুর হয়নি। তবু জেদ করে সীমান্তে এসেছিলেন। “চাকরি গেলে যাবে, কিন্তু না এসে থাকতে পারলাম না” বলে গেলেন পলি। বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আসা দশম শ্রেণির ছাত্রী নিশাত সারমিন তানিয়া বলে গেল, “ঢাকায় একুশের অনুষ্ঠানে কখনও তো যাওয়া হয়নি। একুশ বলতে সীমান্তে দু’পারের মানুষের এই আত্মীয়তাটাই আমি বুঝি।” |