লোকসভা ভোটের আগে প্রত্যাশিত ভাবেই লক্ষ্মণ-বধের ঝুঁকি নিল না আলিমুদ্দিন! তমলুকে গিয়ে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তিন সদস্যের হেনস্থা ও তার পূর্বাপর ঘটনা খতিয়ে দেখতে আপাতত তদন্ত কমিটি গড়ারই সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। রাজ্য ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটি থেকে ওই তদন্তকারী দলে কারা থাকবেন, কে তাঁদের নেতৃত্ব দেবেন, সে সব ঠিক করার ভার দেওয়া হয়েছে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকে। দল ছাড়তে চেয়ে লক্ষ্মণ শেঠ যে চিঠি দিয়েছেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্তও ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠ নেতা কানু সাহুর দাবি খারিজ করে আলিমুদ্দিন জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছে, জেলা কমিটির ভার আপাতত প্রশান্ত প্রধানের হাতেই থাকছে। ঘটনাপ্রবাহে আলিমুদ্দিনের ধীরে চলো নীতিই স্পষ্ট।
তমলুকে তিন দিন আগের ঘটনার দু’টি রিপোর্ট নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় সবিস্তার আলোচনা হয়েছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে। সে দিন লক্ষ্মণ-অনুগামীদের হাতে নিগৃহীত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব সরেজমিন যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, তার সঙ্গেই আলোচনায় এসেছিল ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্তবাবুর বিবরণ। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যাবে না বলে ঠিক করলেও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অধিকাংশ সদস্যই মনে করছেন, তাড়াহুড়ো করে কোনও পদক্ষেপ করলে লক্ষ্মণ-শিবির আরও অস্ত্র পেয়ে যেতে পারে। লোকসভা ভোটের আগে যার ফলে দলকে আরও বেকায়দায় পড়তে হতে পারে পূর্ব মেদিনীপুরে। তার চেয়ে কমিটি গড়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ ঠিক করাই ভাল বলে বিমানবাবুরা মনে করছেন। তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ ও তাঁর অনুগামীদের দুর্নীতি এবং দল-বিরোধী কাজের অভিযোগের তদন্ত করতে যে দুই সদস্যের কমিটি গড়া হয়েছিল, তা-ও বহাল থাকছে। তবে তিন দিনের আগের নিগ্রহের পরে কমিটি কী ভাবে জেলায় গিয়ে তদন্ত চালাবে, তা নিয়ে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের মধ্যেই আশঙ্কা আছে। আপাতত বিমানবাবুর নির্দেশ, এখনই ওই কমিটিকে জেলায় যেতে হবে না।
তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে কেন, তার কৈফিয়ত চেয়ে দল ছাড়তে চাওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন লক্ষ্মণবাবু। তারও ফয়সালা এখন করা হচ্ছে না। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “সদস্য পুননর্বীকরণের মেয়াদ ৩১ মার্চ পর্যন্ত। তাই সময় আছে। আগে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হোক।” প্রকাশ্যে প্রশান্তবাবুর বিরুদ্ধে বলে কানুবাবু যে শৃঙ্খলা ভেঙেছেন, তা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্ব একমত। তবে লোকসভা ভোটের আগে প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় কানুবাবুর বিষয়টিও কমিটির কোর্টে ঠেলা হয়েছে। সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, পূর্ব মেদিনীপুরের দুই আসনেই লোকসভায় অলৌকিক কিছুর আশা তারা করছে না। তাই মেপে পা ফেলে লক্ষ্মণ-বধই উপযুক্ত কৌশল বলে তারা মনে করছে। |