দেনার দায়ে বাংলাকে বামেরা দেউলিয়া করে দিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বাম আমলের ঋণের ভার কেন তাঁর সরকারকে বইতে হবে, সেই প্রশ্নকে লোকসভা ভোটের প্রচারেও ব্যবহার করছেন তৃণমূল নেত্রী। ঋণ করার জন্য সিপিএম এবং ঋণ করায় সম্মতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের শাসক দল কংগ্রেসকে নিশানা করছেন তিনি। এই আক্রমণের মোকাবিলায় এ বার তৃণমূল সরকারের দু’বছর ৮ মাসের ঋণ পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করতে চলেছে বামেরা। বিধানসভার এ বারের বাজেট অধিবেশনেই এই পাল্টা আক্রমণের কৌশল স্পষ্ট করে
দিয়েছে তারা।
তৃণমূলের বক্তব্য, বামেদের রেখে যাওয়া দু’লক্ষ কোটি টাকা ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে তাদের সরকারকে। যদিও বামেদের দাবি, ২০১১ সালের ১৩ মে বামফ্রন্ট সরকার বিদায় নেওয়ার দিন রাজ্যের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, আগের জমানার ঋণের সুদ বাবদ মেটাতে হচ্ছে ৪৯,০৮৩.০৪ কোটি টাকা। মূলধন শোধ করতে হয়েছে ১৯,১৮২.৭৮ কোটি টাকা। রাজ্যের কোষাগার থেকে ঋণ ও সুদ মেটানোর জন্য টাকা কেটে না নেওয়া হলে উন্নয়নের কাজে আরও বরাদ্দ করা যেত, এই যুক্তিই তুলে ধরছে শাসক দল। এর মোকাবিলায় তৃণমূল জমানার ঋণ-তথ্য নিয়ে পাল্টা সরব হচ্ছেন বাম নেতৃত্ব। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন বিধানসভায় বলেছেন, “বর্তমান সরকারের আড়াই বছরে ঋণের বহর ৫৫ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছে। এখনই যদি ৫৫ হাজার কোটি হয় এবং এই হারেই চলতে থাকে, তা হলে পাঁচ বছরের শেষে কত দাঁড়াবে? পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষেই ওই অঙ্ক ১ লক্ষ কোটি ছাড়িয়ে যাবে, এখনই বোঝা যাচ্ছে!” সূর্যবাবুদের আরও বক্তব্য, ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি ঋণ বামফ্রন্টের ৩৪ বছরে। তৃণমূল সরকার যদি এখনকার হারে ঋণ করতে থাকে, ১০ বছর ক্ষমতায় থাকলে তারা কী রেকর্ডে পৌঁছবে? বিধানসভার বাইরে এ বার প্রচারেও এই প্রশ্ন তুলে নিয়ে যাবে বামেরা।
ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক উদয়ন গুহ এর সঙ্গেই যোগ করেছেন, ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি শুধু বাম জমানার ৩৪ বছরের হিসাব নয়। স্বাধীনতার পরে ৬৪ বছরে রাজ্যের মোট ঋণ ওই পরিমাণে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া বর্তমান ব্যবস্থা অনুযায়ী, ঋণ নেই, এমন কোনও রাজ্যই নেই! কিন্তু তৃণমূল সরকার যে রকম বেপরোয়া ভাবে ধার করছে, তাতে কয়েক বছরের মধ্যে রাজ্যের স্বাভাবিক সব কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে! অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু অবশ্য তাঁদের জমানার ঋণ নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেননি। তাঁর বক্তব্য, “আমরা শৃঙ্খলা মেনেই ধার করছি। আমরা এফআরবিএম (আর্থিক শৃঙ্খলা ও বাজেট নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন) লঙ্খন করিনি। ঋণ করছি নিয়ম মেনে। এটাই আমাদের সরকারের আর্থিক শৃঙ্খলা!” বিধানসভার ছবিতেই স্পষ্ট, ঋণ নিয়ে এই প্রশ্ন-পাল্টা প্রশ্ন এ বার লোকসভা ভোটের আসর গরম করতে চলেছে! |