|
|
|
|
মহিলা স্বনির্ভরতায় ‘মুক্তিধারা’ পশ্চিম মেদিনীপুরে নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম |
পুরুলিয়ায় সাফল্য মিলেছে। এ বার পালা পশ্চিম মেদিনীপুরের।
জঙ্গলমহলের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্প ‘মুক্তিধারা’র সূচনা হচ্ছে আজ শনিবার। দুপুরে লালগড় ব্লক-সদরে এক অনুষ্ঠানে প্রকল্পের সূচনা করবেন স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। প্রতিটি গোষ্ঠীর দলনেত্রীদের হাতে প্রশিক্ষণের শংসাপত্র ও ব্যাঙ্কঋণের অঙ্গীকারপত্র তুলে দেওয়া হবে ওই অনুষ্ঠানে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে জঙ্গলমহলের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতে এই প্রকল্প চালু হবে। ধীরে ধীরে জঙ্গলমহলের সর্বত্র প্রকল্পের সুফল ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দু’টি ব্লকে ‘মুক্তিধারা’র পাইলট প্রজেক্ট রূপায়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। প্রাথমিক ভাবে বিনপুর ১ (লালগড়) ও ঝাড়গ্রাম ব্লকের ৪৭টি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে এই প্রকল্পে সাহায্য করা হবে। প্রশাসন সূত্রে খবর, বিনপুর ১ (লালগড়) ব্লকের রামগড় পঞ্চায়েতের ২৬টি ও লালগড় পঞ্চায়েতের ১০টি স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী এবং ঝাড়গ্রাম ব্লকের পাটাশিমুল পঞ্চায়েতের ৬টি ও সাপধরা পঞ্চায়েতের ৫টি স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীকে ওই প্রকল্পের জন্য বাছা হয়েছে। গত ৬-২০ ফেব্রুয়ারি ওই স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীভুক্ত মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এরপর জেলা গ্রামীণ উন্নয়ন নিগম (ডিআরডিসি)-এর মাধ্যমে গোষ্ঠীগুলিকে সর্বনিম্ন এক লক্ষ টাকা করে ব্যাঙ্ক-ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। ওই টাকায় মুড়ি ভেজে, ছাগল পালন করে কিংবা মুরগি-খামার করে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের আয়ের পথ সুগম করা হবে। ইতিমধ্যে এলাকা নির্বাচন, স্বনির্ভর গোষ্ঠী নির্বাচন, কী ভাবে কাজ শুরু হবে, তার প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। ‘মুক্তিধারা’ প্রকল্পটি ঠিক কী? গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে যে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠিত হয়েছিল, এটা তারই বর্ধিত রূপ। যেখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছ থেকেই জানতে চাওয়া হবে, তাঁরা কী করতে চান। সেই কাজেই সাহায্য করবে প্রশাসন। তবে তা করা হবে উন্নততর পদ্ধতিতে। অর্থাৎ কেউ ধান চাষ করতে চাইলে তাঁকে এসআরআই পদ্ধতিতে ধান করতে বলা হবে, যিনি লাউ চাষ করেন, তাঁকে উন্নতি পদ্ধতিতে মাচার উপর লাউ চাষ করতে বলা হবে। নিয়মিত প্রতিটি দফতরের আধিকারিকেরা গ্রামে গিয়ে পরামর্শ দেবেন। প্রথমে এই প্রকল্প চালু করার জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাঁরা যাবতীয় কাজ দেখভাল করবেন, ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, এমনকী টাকার হিসেবনিকেশও শেখাবেন তাঁরা। যাবতীয় খরচের জন্য কম সুদে ব্যাঙ্ক ঋণেরও ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। সুদের হার ৭ শতাংশ। নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করতে পারলে ৩ শতাংশ ঋণ ছাড়ও রয়েছে।
মুক্তিধারা চালুর পর পুরুলিয়ার বলরামপুর থানার পুরুডি গ্রামের ‘স্বাতী’ মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রচুর উন্নতি করেছে। গোষ্ঠীর সদস্য ঝর্না প্রামাণিকের কথায়, “২০০৬ সালে দল গড়া হয়েছিল। তখন থেকে মিড ডে মিলের রান্না কাজ করেছি। এটা হবে, সেটা হবে, শুনলেও কিছুই হয়নি। হয়েছিল বলতে, দু’টি গ্রেডিং। তাতে আবর্তনীয় তহবিল হিসাবে ব্যাঙ্কে ২০ হাজার টাকা জমা পড়েছিল। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে মুক্তিধারা চালু হয়। তারপরই সব বদলে গেল।” ৯১ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। আবর্তনীয় তহবিলের ২০ হাজার মিলিয়ে তা ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকা হয়। তা দিয়ে ছাগল চাষের পাশাপাশি এসআরআই পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন। ধান তোলার পরেই টম্যাটো, বেগুন, আলুর মতো সব্জি চাষ। ঝর্নাদেবীর কথায়, “এখন আমরা সব্জি বিক্রির টাকায় প্রতি মাসে সুদের টাকা মিটিয়ে দিই। আসলেরও কিছু কিছু মিটিয়ে দিচ্ছি।” এই প্রকল্পে প্রাণিপালন, মৎস্য দফতর, সেচ থেকে শুরু করে সব দফতরের প্রতিনিধিরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন পাইলট প্রজেক্ট এলাকায়। ফলে তাদের থেকে পরামর্শ পেতেও সুবিধা হচ্ছে।
এ সব শুনে উৎসাহিত লালগড়ের কল্পনা মাহাতো, নমিতা সরেনরা। পুরুলিয়ার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের বক্তব্য, “লালগড়ের দলের সদস্যরা অনেক আগে থেকেই নানা কাজে যুক্ত ছিল। এঁরা আমাদের থেকেও ভাল করতে পারব। আমরা তো মুক্তিধারা হওয়ার পর, এ সব জেনেছি।” কল্পনা, নমিতাদের কথায়, “পুরুলিয়ার সকলের কাছে যা শুনলাম, তা এখানে হলে আমরাও অনেক কিছু করতে পারব। সেচের সুবিধে পেলে, যা করতে চাই, তাতে সাহায্য করলে, আমরাও পিছিয়ে থাকব না।” দলের সদস্যদের এই শপথই ভরসা জেলাশাসকের। জেলাশাসকের কথায়, “আশা করি, এখানেও সাফল্য আসবে। সাফল্য এলেই ধীরে ধীরে জঙ্গলমহলের সর্বত্র মুক্তিধারাকে ছড়িয়ে দিতে চাই।” |
|
|
|
|
|