|
|
|
|
নাজিমুদ্দিনকে হেফাজতেই চাইল না পুলিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা সমর মাইতি খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত শেখ নাজিমুদ্দিনকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদনই জানাল না পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে মহিষাদল থেকে গ্রেফতারের পরে শুক্রবার নাজিমুদ্দিনকে হলদিয়া মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। পুলিশ ধৃতকে হেফাজতে না চাওয়ায় এসিজেএম দেবকুমার সুকুল ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে গিয়েছি। আর তাকে হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।”
সমর-খুনে এই নিয়ে ৯ জন গ্রেফতার হল। ধৃত নাজিমুদ্দিন অবশ্য দাবি করেছেন, এই খুনের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। এ দিন হলদিয়া আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বছর ষাটেকের নাজিমুদ্দিন বলেন, “এক মহিলার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই সমর মাইতি খুন হয়েছেন। |
|
হলদিয়া আদালতে শেখ নাজিমুদ্দিন। —নিজস্ব চিত্র। |
এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। আমিও জড়িত নই। ঘটনার সময় আমি রেয়াপাড়ায় ছিলাম।” সমরবাবুর বাবা নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা বাদল মাইতি অবশ্য এ দিনও বলেন, “ছেলেকে খুনে নাজিমুদ্দিন প্রতক্ষ্য ভাবে জড়িত। ও এখন মিথ্যে বলছে।”
নাজিমুদ্দিন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও সমর মাইতি খুনের পর থেকে তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করছেন, দলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। এ দিনও তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই। ও ধরা পড়ায় আমরা খুশি।”
গত ৪ ফেব্রুয়ারি নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের তেরপেখ্যা বাজারে আততায়ীর গুলিতে খুন হন বয়াল-২ পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান সমরবাবু। নিহতের বাবা নাজিমুদ্দিন-সহ ২০ জনের নামে অভিযোগ জানান। সেই তালিকায় সিপিএম নেতা অশোক গুড়িয়ার নাম ছিল। ঘটনার রাতেই অশোকবাবু-সহ ৪ জন গ্রেফতার হন। তারপর দফায় দফায় অভিযুক্তেরা ধরা পড়লেও নাজিমুদ্দিনের হদিস মেলেনি।
সমর-খুনের পর প্রায় ১৫ দিন বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে ছিলেন নাজিমুদ্দিন। তাঁর খোঁজে পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও কলকাতা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। নাজিমুদ্দিন ও তাঁর ছেলে কলিমুদ্দিন কলকাতার মেটিয়াবুরুজে এক আত্মীয়বাড়িতে আছেন খবর পেয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তল্লাশি চালায়। সেখানে কাউকে না পেলেও ওই দিন রাতেই উত্তর ২৪ পরগনার ঘোলা থেকে কলিমুদ্দিন ধরা পড়ে। পুলিশ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে কলকাতার এক নার্সিংহোমে ভর্তি হন নাজিমুদ্দিন। বৃহস্পতিবার মহিষাদলের রামবাগ গ্রামে আত্মীয়বাড়িতে আসেন তিনি। রাতে সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে মহিষাদল থানার পুলিশ।
নাজিমুদ্দিন আগে সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সময় তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। তেরপেখ্যা বাজারে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতিও হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েতে জেতে তৃণমূল। তখন থেকেই নাজিমুদ্দিন বয়াল ১ পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতেন বলে খবর। এ নিয়ে বয়াল ২ পঞ্চায়েতের তৎকালীন প্রধান তথা ওই অঞ্চলের তৃণমূল নেতা সমরবাবুর সঙ্গে নাজিমুদ্দিনের বিরোধ শুরু হয়। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বয়াল ১ পঞ্চায়েতে দলীয় প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে বিরোধ চরমে পৌঁছয়। পঞ্চায়েতের ১০টি আসনেই নির্দল প্রার্থী দাঁড় করান নাজিমুদ্দিন। বিক্ষুব্ধ নির্দলরা ৬টি আসনে জিতেও যায়। তবে সংঘর্ষে ঘটনায় এক পঞ্চায়েত সদস্য গ্রেফতার হওয়ায় এবং চার জন পালিয়ে যাওয়ায় বিক্ষুব্ধরা বোর্ড গড়তে পারেনি। এর পরেই সমরবাবুর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন নাজিমুদ্দিন।
এ দিন আর এক অভিযুক্ত শেখ ওসমানকে হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় পুলিশ। এফআইআর-এ নাম থাকা ওসমান গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তারপর তাঁর জেল হেফাজত হয়। এ দিন বিচারক তাঁকে তিন দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন। |
|
|
|
|
|