ফোন করলেই বাজার থেকে বাড়িতে হাজির জিনিসপত্র। না কোনও নেট-বিপণি নয়, লেকটাউন বাজারে মিলছে এই সুবিধা। কারণ, বিপজ্জনক এ বাজারে আসতে ভয় পান অধিকাংশ ক্রেতা। অবস্থা এমনই যে রসিকতা করে বিক্রেতারা এ বাজারে হেলমেট পরে ঢোকার পরামর্শ দেন।
লেকটাউন মেন রোডে জলের ট্যাঙ্কের কাছে পুরনো এই বাজারের ভগ্নদশা। মাঝেমধ্যেই ছাদ থেকে চাঙড় খসে পড়ে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। বাজারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা। |
বাজার কমিটির অভিযোগ, বাজারের মেরামতির জন্য তারা অনেক বার পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। সামান্য কাজ হয়েছে। এই বাজারের উপরে লেকটাউন ও আশপাশের এলাকার অনেক বাসিন্দা নির্ভরশীল। রক্ষণাবেক্ষণ যে ঠিকমতো হয় না তা বাজারটি ঘুরে দেখলেই বোঝা যায়। বাজারের যে অংশে কংক্রিটের ছাদ সেখানে অধিকাংশ জায়গায় চাঙড় খসে পড়ে লোহার ঢালাই বেরিয়ে পড়েছে। লেকটাউন বাজার সমিতির সদস্যরা জানালেন, যখন তখন চাঙড় খসে পড়ে। অনেক বিক্রেতা স্টলেই রাত কাটান। এক বিক্রেতা বলেন, “এখানেই রাতে থাকি। মাথার উপর প্লাস্টিক ঝুলিয়ে রেখেছি। কিন্তু বড় চাঙড় খসলে কী হবে জানি না।” বাজারের এক দিকে কংক্রিটের ছাদ। অন্য দিকে, টিনের চালা। অভিযোগ, টিনের অবস্থাও খারাপ।
সেখান থেকে মাঝেমধ্যেই টিনের বড় টুকরো খসে পড়ে। দিন কয়েক আগেই বাজারের এক ক্রেতার গায়ে টিনের বড় টুকরো খসে পড়েছিল। বরাত জোরে তিনি বেঁচে যান। বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, “যে কোনও দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমরা নিজেরাই খরচ করে ভাঙা টিনের নীচে বাঁশের কাঠামো করে নিয়েছি। বাজারের যদি এই অবস্থা হয় তা হলে কোন ভরসায় ক্রেতারা বাজারে আসবেন?” |
বাজারে ঢুকতে গেলেও নর্দমার জল মাড়িয়ে ঢুকতে হয়। এই বাজারে নিয়মিত বাজার করতে আসা এক ক্রেতা বলেন, “শুধু বর্ষাকালই নয়, এখানে সব সময়ই নর্দমা উপচে পড়ে। বাজারে ঢুকতে গেলে জল পেরিয়ে ঢুকতে হয়। তাই কয়েক জন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলা আছে, ফোন করলে বাড়িতে জিনিস পাঠিয়ে দেয়। আমাকে শুধু রিকশা ভাড়া দিতে হয়।” এমন ব্যবস্থা করেছেন অনেক ক্রেতাই। বাজার সমিতির এক সদস্যের অভিযোগ, “বাজারের নর্দমা পরিষ্কারের জন্য পুরসভাকে বার বার অনুরোধ করা হয়েছে। কালেভদ্রে পুরসভার ঝাড়ুদার আসেন। ফলে আমরা এখন নিজেরাই পয়সা খরচ করে ঝাড়ুদার রেখেছি।” এক বিক্রেতা জানালেন, খদ্দের কমে যাওয়ায় কিছু বিক্রেতা বাজারের সামনের রাস্তায় পসরা নিয়ে বসছেন। ফলে বাজারে ক্রেতাদের সংখ্যা আরও কমে যাচ্ছে।
বাজারের এই দুরবস্থার কথা স্বীকার করে নিয়ে দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারপার্সন তৃণমূলের অঞ্জনা রক্ষিত বলেন, “বাজারের খোলনলচে বদলে ফেলা হবে। সামনের বোর্ড মিটিংয়েই টেন্ডার ডাকার বিষয়ে কথাবার্তা হবে। চেষ্টা করছি লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই ওয়ার্কওর্ডার বের করার। তা হলে ভোটের আগেই কাজ শুরু করে দেওয়া যাবে।” |