কেতুগ্রামে ন্যারোগেজ লাইনের ট্রেন থেকে নামিয়ে এক মহিলাকে ধর্ষণের মামলায় ফরেন্সিক রিপোর্ট আদালতে জমা পড়লেও সেটির খোঁজ মিলছে না। সোমবারের মধ্যে তাঁর এজলাসে সেটি জমা দেওয়ার জন্য কাটোয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতকে নির্দেশ (নম্বর ৩৬, ১১/২/২০১৪) দিয়েছেন ফাস্ট ট্র্যাক বিচারক পরেশচন্দ্র কর্মকার। রিপোর্টটি খুঁজে না পাওয়া গেলে মামলা বিলম্বিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
কাটোয়ার আইনজীবীদের থেকে জানা গিয়েছে, এর আগেও ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের তৎকালীন বিচারক সৈয়দ নেহাজুদ্দিন এডিজে আদালতের পেশকারের কাছে ফরেন্সিক রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু তিনি রিপোর্ট জমা দিতে পারেননি। খুঁজে দেখার জন্য এক মাস সময় চেয়েছিলেন। মামলার সরকারি আইনজীবী কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় বিষয়টি কাটোয়ার ফাস্ট ট্র্যাক বিচারকের নজরে আনেন। শুক্রবার তিনি বলেন, “ওই রিপোর্টে কী আছে, তা জানা খুবই জরুরি।” অভিযোগকারিণী বলেন, “আইনের মারপ্যাঁচ বুঝি না। আমরা চাই, দ্রুত বিচার শেষ করে শয়তানগুলোকে শাস্তি দেওয়া হোক।”
২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কাটোয়ামুখী আমোদপুর-কাটোয়া ন্যারোগেজ লাইনে (এখন ব্রডগেজের কাজ চলছে) পাচুন্দি ও গোমাই স্টেশনের মাঝে ট্রেন আটকে এক দল দুষ্কৃতী যাত্রীদের কাছে লুঠপাট চালায়। মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তার সামনেই এক বিধবা মহিলাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। পরে মা-মেয়ে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেন। আট অভিযুক্তের মধ্যে তিন জন জেল হেফাজতে রয়েছে। দু’জন পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। দু’জন জামিনে ছাড়া আছে। কায়েশ শেখ এখনও অধরা। অভিযোগকারিণী ও তাঁর মেয়ে ছাড়াও ট্রেনের চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও কয়েক জন যাত্রী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর পরে সাক্ষ্য দেবেন চিকিৎসক, পুলিশ, ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞেরা। আইজীবীদের একাংশের মতে, তখনই ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
কাঞ্চনবাবু রিপোর্টটির ব্যাপারে আদালতে প্রথম চিঠি দেন গত বছর ১৯ নভেম্বর। তার ভিত্তিতে তৎকালীন ফাস্ট ট্র্যাক বিচারক সৈয়দ নেহাজুদ্দিন এডিজে আদালতকে সেটি পেশ করতে বলেন। এডিজে আদালতের পেশকার লিখিত ভাবে এক মাস সময় চেয়েও রিপোর্ট পেশ না করায় গত ১১ ফেব্র্ুয়ারি কাঞ্চনবাবু ফের আবেদন জানান। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, ‘কাটোয়া আদালতে জিআর নম্বর ৭৯/১২ (জিআরপি এফআইআর নম্বর ৭/১২) গণধর্ষণ সংক্রান্ত মামলায় অভিযোগকারিণীর দেহরস, জামাকাপড় রাসায়নিক পরীক্ষা ও অভিযুক্তদের বীর্য পরীক্ষার ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির রিপোর্ট আশ্চর্যজনক ভাবে আদালতের কাছে নেই। অথচ কাটোয়া জিআরপির ওসি নিজে এসে কাটোয়া আদালতের জিআরও-র কাছে জমা দিয়েছিলেন।’
কাটোয়া জিআরপি-র তৎকালীন ওসি বাসুদেব হাজরা জানান, বেলগাছিয়ার ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবেটরিতে গিয়ে তিনি নিজে হাতে রিপোর্টটি নিয়ে এসেছিলেন। বর্তমানে অন্ডাল থানার ওসি বাসুদেববাবু বলেন, “অনেক দিনের ঘটনা। দিনক্ষণ মনে নেই, তবে রিপোর্টটি আদালতে জমা দিয়েছিলাম।” আদালতকে দেওয়া চিঠিতে কাঞ্চনবাবু লিখেছেন, ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর কাটোয়া জিআরপি-র ওসি তথ্য দিয়ে জানান, জানুয়ারিতেই আদালতে রিপোর্টটি জমা দিয়েছেন। কাটোয়ার এসিজেএম সেটি এডিজে আদালতে পাঠিয়ে দেয়। ওই বছর ৯ জানুয়ারি এডিজে আদালতের পেশকার রিপোর্টটি জমা করেন। সরকারি আইনজীবী বলেন, “এ রকম গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথি এক বছর ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, সেটাই আশ্চর্যের।” অভিযুক্ত পক্ষের অন্যতম আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই রিপোর্টে কী আছে জানতে পারলে আমাদেরও বিচার পেতে সুবিধে হবে।” |