পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রথম উইকেট পড়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার! শিকারি সেই মিচেল জনসন। শিকার জাক কালিসের জায়গায় দক্ষিণ আফ্রিকা দলে থাকা অলরাউন্ডার রায়ান ম্যাকলারেন।
কী রকম?
সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের চতুর্থ দিন। ব্যাট করছেন ম্যাকলারেন। আচমকাই জনসনের একটা এক্সপ্রেস গতির বাউন্সার তাঁর হেলমেটে আছড়ে পড়ে। প্রথমে অত টের পাওয়া যায়নি। কিন্তু বাউন্সার হজমের ঘণ্টা তিরিশেক পর গণ্ডগোল শুরু হয়। মাথায় যন্ত্রণা, বমি-বমি ভাব নানাবিধ উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। জোহানেসবার্গের এক ক্লিনিকে নিয়েও যাওয়া হয় ম্যাকলারেনকে। ডাক্তারদের সন্দেহ হয় যে মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আঘাত লাগলে যে ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, ম্যাকলারেনের ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ড ঘোষণা করে দেয়, ম্যাকলারেন দ্বিতীয় টেস্টে খেলছেন না। দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, “গত ২৪ ঘণ্টায় ম্যাকলারেনের অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। তবে আগামী চার-পাঁচ দিন তাঁকে নজরে রাখা হবে। চিকিৎসকরা নিয়মিত চেক আপ করবেন। পরের সপ্তাহে ঠিক করা হবে তৃতীয় টেস্টের দলে ম্যাকলারেনকে রাখা হবে কি না।” আপাতত ঠিক হয়েছে ব্যাটিং শক্তি বাড়াতে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে ফেরানো হতে পারে বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান ডিন এলগারকে। |
আহত ম্যাকলারেনের চিকিৎসা চলছে। |
গত কয়েক মাসে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেট বিশ্বে একটা প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন জনসনএই গ্রহের তিনিই কি ভয়ঙ্করতম ফাস্ট বোলার? অস্ট্রেলীয় কোচ ডারেন লেম্যান বলেছেন, “কোনও ফাস্ট বোলারকে এ রকম ভয়ঙ্কর বল করতে আমি আগে কখনও দেখিনি।” কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার মাইকেল হোল্ডিংয়ের মন্তব্য, বাইশ গজে নামলে ব্যাটসম্যানরা আগে যে ভয়টা পেত, সেটাই ফিরিয়ে এনেছেন জনসন।
চুপ করে থাকেননি অস্ট্রেলিয়ার আর এক প্রবাদপ্রতিম ফাস্ট বোলার জেফ টমসনও। টমসনের বক্তব্য, “অনেক দিন ধরে যে ফাস্ট বোলিংটা দেখছিলাম, সেটা স্রেফ বিরক্তি উৎপাদন করছিল। আমরা এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে এসেছি যখন আমাদের হাতে ওয়ার্ন ছিল। ভাবা যায়? লেগ স্পিন? কে লেগ স্পিন নিয়ে মাথায় ঘামায় বলুন তো? এখন হঠাৎ করে জনসন উঠে এসেছে আর সবাই ওকে ভালবাসছে।”
জনসনের এই উত্থানের জন্য টমসন কৃতিত্ব দিচ্ছেন তাঁর এক সময়কার সতীর্থ ডেনিস লিলিকে। টমোর কথায়, “বছর খানেক আগে ডেনিসের (লিলি) কাছে গিয়ে কয়েকটা ছোটখাটো জিনিস ঠিক করে নিয়েছিল জনসন। খুবই ছোটখাটো জিনিস। কিন্তু সেগুলোই ওকে নতুন এক বোলার করে তুলেছে।” |
কেন জনসন ভয়ঙ্কর |
• ঘণ্টায় ৮৫ মাইল গতিতে করা ডেলিভারি ব্যাটসম্যানের
কাছে পৌঁছতে সময় নেয় ০.৫২ সেকেন্ড। এই সময়ের মধ্যে
ব্যাটসম্যানকে বুঝে নিতে হয় বলের লেংথ, লাইন, সুইং কী হবে।
ঠিক করে নিতে হয় কোন শট খেলতে হবে। একবার চোখের
পলক পড়ার থেকে সামান্য বেশি ‘রিঅ্যাকশন টাইম’ পাওয়া যায়।
ব্যাটসম্যান ১৫০ মিলিসেকেন্ড সময় পায় বলটাকে দেখতে।
পরের ১০০ মিলিসেকেন্ডে শট খেলতে হয়। |
• বলের গতি ৯০ থেকে ৯৫ মাইল হয়ে যাওয়া মানে
বাইশ গজ পার হতে সময় লাগে মোটামুটি ০.৪৭ সেকেন্ড।
ব্যাটসম্যানের হাত থেকে আরও ০.০৫ সেকেন্ড চলে গেল।
এই ৫০ মিলিসেকেন্ডটাই মিচেল জনসন আর জিমি অ্যান্ডারসনের
মধ্যে তফাত। ব্যাটসম্যানের কাজটা দুটো কাঠি দিয়ে শূন্যে ওড়া
একটা মাছি ধরার মতোই কঠিন হয়ে যায়। সঙ্গে থাকে শারীরিক
আঘাত
পাওয়ার ভয়। যা অবেচেতন মনে ব্যাটসম্যানকে
ভুল শট খেলতে বাধ্য করে। |
(ক্রীড়া এবং মনোবিজ্ঞানীদের তত্ত্বের ভিত্তিতে) |
|