ভারতের কষ্ট হওয়া উচিত। এই নিয়ে দুটো বিদেশ সফরে দু’বার বোলাররা টিমকে জেতাতে পারল না। জোহানেসবার্গে সাড়ে চারশোর উপর টার্গেট রেখেও কোনও লাভ হয়নি। ওয়েলিংটনে ২৪৬ রানের লিড ধ্বংস হয়ে গেল। ভারতের বোলিং আক্রমণ কিন্তু ইতিমধ্যেই বিদেশের পরিবেশে নড়বড়ে হতে শুরু করেছে। স্টুয়ার্ট বিনির মতো কাউকে বিদেশের জন্য তৈরি করা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে দেওয়া উচিত।
গত কয়েক মাসে ভারতীয় ফাস্ট বোলারদের কাজের চাপ অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গিয়েছে। ওয়েলিংটনে শুধু একটা ইনিংসেই ইশান্ত, জাহির আর শামি প্রত্যেকে প্রায় পঞ্চাশ ওভার করে বল করেছে। বিকল্পও তো বেশি নেই। ওদের কেরিয়ার এখন খাদের ধারে দাঁড়িয়ে। আর টিমের ভাগ্য এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দুলছে। |
ব্রেন্ডন ম্যাকালাম
জানি না কোহলি (যিনি ৯ রানে ম্যাকালামের ক্যাচ ফস্কান) কোন ওয়াইন খায়। কিন্তু ব্যাপারটা শেষমেশ কাটাকুটি হয়ে গেল (স্পষ্ট এজ থাকলেও
এ দিন কোহলিকে আউট দেওয়া হয়নি)। ও আমার ক্যাচটা ফস্কাল দেখে খুব ভাল লেগেছিল। এখন টিমমেটদের সঙ্গে একটু বিয়ার খাব। |
|
ভারতের জন্য ছবিটা যে এত ধূসর হয়ে গেল, তার পিছনে রয়েছে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম নামক এক মানুষের অমানুষিক কৃতিত্ব। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক যেন হয়ে দাঁড়িয়েছিল ধৈর্য, বিশ্বাস আর দায়িত্বের মূর্তিমান প্রতীক। সঙ্গে আছে ওর মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া ফিটনেস। ওয়াটলিং আর নিশাম দুর্দান্ত ভাবে ওর পাশে দাঁড়াল ঠিকই, কিন্তু ম্যাকালাম যেন আলাদা জিনিস। সবাই যে ব্যাপারটাকে অসম্ভব বলে ধরে বসেছিল, ও ঠিক সেটাই করে দেখাল। ডন ব্র্যাডম্যানের পরপর দু’টেস্টে ডাবল ও ট্রিপল সেঞ্চুরির অনন্য নজিরও স্পর্শ করল ম্যাকালাম ৩০২ রানের ইনিংসে। ক্রিজে থাকা সময় আর রানের বিচারে এটাই কোনও নিউজিল্যান্ডারের সেরা স্কোর। কিন্তু ওর ট্রিপল সেঞ্চুরির কিংবদন্তি এ সব শুকনো পরিসংখ্যান ছাপিয়ে অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে। প্রায় হারতে বসা টেস্ট ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস বেশ কয়েকটা দেখেছি। তার মধ্যে এই ইনিংস অন্যতম সেরা।
ভারতের কথায় ফিরি। বিরাট কোহলির উপর ভর করে টেস্ট ম্যাচটা বাঁচাল ধোনিরা। আগের কয়েকটা ইনিংসে কম রানে আউট হওয়ার পর সেঞ্চুরি করল দিল্লির এই ব্যাটসম্যান। এই সফরে ভারতীয়দের মধ্যে ওর গড় সেরা। সত্যি, গত কয়েক মাসে বিরাট কোহলির মূল্য অনেক গুণ বেড়েছে। ইতিমধ্যেই ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারদের মধ্যে এক জন হয়ে গিয়েছে। |
ভারতের পরের বিদেশ সফর তিন মাস পরে। সফরটা কিন্তু বেশ কঠিন। ইংল্যান্ডে ওদের জন্য অপেক্ষা করে আছে পাঁচটা টেস্ট, পাঁচটা ওয়ান ডে নিয়ে। আর ওরা এমন একটা টিম যারা ভারতকে আগেও বেশ যন্ত্রণা দিয়েছে। তবে তার আগে এশিয়া কাপ আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একটু স্বস্তি পেতে পারে ভারত। তার পর মে পর্যন্ত আইপিএল-উচ্ছ্বাসে গা ভাসাবে ওরা। কিন্তু তার পরের ছবিটা নোংরা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।
সবাইকে নিজেদের তৈরি করতে হবে। যাতে যখন বড় মুহূর্তটা আসবে, তখন সেটার সদ্ব্যবহার করতে পারে। এই বছরের হাইলাইট কিন্তু ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া সফর। আর তার পর বিশ্বকাপ। গা ছেড়ে দেওয়ার সময় কিন্তু নেই। |
ব্যর্থ, তবু দুইয়ে ধোনিরা |
বিদেশে ধারাবাহিক ব্যর্থ। তবু আইসিসি-র র্যাঙ্কিংয়ের নিয়মে টেস্ট ক্রিকেটে দু’নম্বরেই রয়ে গেল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডে একটিও টেস্ট জিততে না পারার পরও। যদিও ১১৭ থেকে ১১২-য় নেমে গিয়েছে ভারতের রেটিং পয়েন্ট। কিন্তু ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করা অস্ট্রেলিয়াও র্যাঙ্কিংয়ে ধোনিদের নীচে। রেটিং পয়েন্টের তফাৎটা অবশ্য দাঁড়িয়েছে মাত্র এক। মাইকেল ক্লার্করা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চলতি টেস্ট সিরিজ ড্র রাখতে পারলে র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের উপরে চলে যাবে। ঘরের মাঠে ০-১ পিছিয়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা যদি পরের দুটো টেস্ট জেতে, তা হলে অস্ট্রেলিয়ার উপরেই থাকবে ভারত। আসলে গত দু’বছরে ঘরে-বাইরে ১৯টির মধ্যে ন’টি টেস্টে জয় পেয়েছে ভারত। সবক’টিই দেশের মাটিতে। হেরেছে সাতটিতে ও ড্র করেছে তিনটি। ফলে র্যাঙ্কিংয়ে দু’নম্বরেই থেকে গেলেন ধোনিরা। |
নিউজিল্যান্ড
প্রথম ইনিংস: ১৯২
ভারত
প্রথম ইনিংস: ৪৩৮
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ৫৭১-৬) |
ম্যাকালাম ক ধোনি বো জাহির ৩০২
নিশাম ন.আ. ১৩৭
সাউদি ক পূজারা বো জাহির ১১
ওয়াগনার ন.আ. ২
অতিরিক্ত ৩০
মোট ৬৮০-৮ ডিঃ।
পতন:১, ২৭, ৫২, ৮৭, ৯৪, ৪৪৬, ৬২৫, ৬৩৯।
বোলিং: ইশান্ত ৪৫-৪-১৬৪-০, জাহির ৫১-১৩-১৭০-৫,
শামি ৪৩-৬-১৪৯-২, জাডেজা ৫২-১১-১১৫-১,
রোহিত ১১-০-৪০-০, কোহলি ৬-১-১৩-০,
ধোনি ১-০-৫-০, ধবন ১-০-৩-০। |
ভারত
দ্বিতীয় ইনিংস |
মুরলী ক অ্যান্ডারসন বো সাউদি ৭
ধবন এলবিডব্লিউ বোল্ট ২
পূজারা ক ওয়াটলিং বো সাউদি ১৭
কোহলি ন.আ. ১০৫
রোহিত ন.আ. ৩১
অতিরিক্ত ৪
মোট ১৬৬-৩।
পতন: ১০, ১০, ৫৪।
বোলিং: বোল্ট ১৬-৫-৪৭-১, সাউদি ১৬-৩-৫০-২,
ওয়াগনার ১১-৩-৩৮-০, নিশাম ৫-০-২৫-০, অ্যান্ডারসন ৪-১-৬-০। |
|
|