|
|
|
|
|
দেশের মানুষ অজুহাত
নয়,
ফল চায় ধোনি অশোক মলহোত্র |
|
নিউজিল্যান্ড ৯৫-৫। রবিবার ভোররাতে এই স্কোর দেখে যখন অনেকে বলতে শুরু করেছিলেন, এই টেস্ট ভারতই জিতছে, তখনও মনটা খচখচ করছিল। কারণ, এই দলই তো দক্ষিণ আফ্রিকাকে চতুর্থ ইনিংসে ৪৫৮-র পাহাড়প্রমাণ টার্গেট দিয়েও টেস্ট জিততে পারেনি।
দেখলেন তো, শেষ পর্যন্ত হলও তাই। এই জায়গা থেকেও কী করে ম্যাচ না জেতা যায়, তা ধোনিদের কাছ থেকে শেখা উচিত। তার পরও ধোনি বলেছে, তার দলের বোলাররা ‘ফ্যান্টাস্টিক’ বোলিং করেছে! শুধু তা-ই নয়, এক ওয়েবসাইটে পড়লাম, ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নাকি এও বলেছে, ম্যাচের ফল নিয়ে সে ভাবে না, তার দল কেমন তৈরি হচ্ছে, তা নিয়েই বেশি ভাবে! পড়তে পড়তে হাসি ছাড়া কিছু আসছিল না। যারা নিশ্চিত জয় হাতছাড়া করতে পারে, যারা এক ইনিংসে বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের শুইয়ে দিয়ে পরের ইনিংসেই তাদের সামনে জিভ বের করে হাঁফাতে থাকে, তাদের ক্যাপ্টেনের মুখে এ সব কথা মানায়?
দেশের যে মানুষগুলো ওদের জন্য পাগল, যারা রাত জেগে টিভির সামনে বসে ওদের খেলা দেখেছে, গোগ্রাসে ওদের খবর পড়েছে, দেখেছে, তাদের প্রতি কি কোনও দায়বদ্ধতাই নেই ধোনিদের? দেশের মানুষ ওদের সাফল্য দেখতে চাইলে, সেটা কি বড় অন্যায়? আর যে ভাবে বিদেশের মাটিতে নিয়মিত মুখ থুবড়ে পড়ছে আমাদের দল, তাতে কি ক্রিকেটবিশ্বে ভারতের খুব সুনাম রটবে? হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য ভাবে হারার ব্যাপারে হয়তো সুনাম হয়েছে আমাদের। কিন্তু আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে নীচের দিকে থাকা নিউজিল্যান্ডের কাছেও সিরিজ হারতে হল ধোনিদের, এটাই খারাপ লাগছে। এ জন্য ধোনিকে তো আর কারও কাছে কোনও কৈফিয়ত দিতে হবে না। ওর মাথায় বোর্ডের বড় কর্তাদের আশীর্বাদ আছে যে। এটাই ওর সবচেয়ে বড় সুবিধা। |
|
পরপর দুই বিদেশ সফরে দেখা গেল, ধোনির দলে এমন কয়েকটা ব্যাপার আমদানি হয়েছে, যা বিস্ময়কর বললেও কম বলা হয়। প্রথমত, সচিন, রাহুল, লক্ষ্মণরা এই দলে নেই। অথচ দলের ব্যাটিংয়ে যে এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে, তা কিন্তু নয়। তবু ইতিবাচক ফল নেই। দ্বিতীয়ত, বোলাররা কোনও সিরিজে চারটের মধ্যে একটা ইনিংসে ভাল বল করছে। আবার কোথাও দু’টো ইনিংসে। ওরা যে ভাল বল করতে পারে, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, অথচ ওদের সামনে যথেষ্ট সুযোগ আসা সত্ত্বেও দলকে জেতাতে পারছে না। বিপক্ষকে ৯৫-৫ করে দেওয়ার পরও ড্র ও চতুর্থ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৫৮-র টার্গেট দেওয়ার পরও ড্র এই কারণেই। একে ধোনি ‘ফ্যান্টাস্টিক’ বোলিং বলছে! এদের টেস্টে কুড়িটা উইকেট তো ছেড়েই দিন, ধারাবাহিক দশটা উইকেট নেওয়ারও ক্ষমতা আছে কি না সন্দেহ। অথচ এই ধোনিই ক’দিন আগে তার পেসারদের মাথা খাটানোর পরামর্শ দিয়েছিল। দলের মধ্যে জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়েই কি এখন তার এই ভোলবদল?
তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম ক্যাপ্টেনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ধোনি এ সব কথা বলছে। কিন্তু গত তিন বছরে বিদেশে খেলা ১৪টা টেস্টের কোনওটাতেই জিততে না পারার লজ্জা দেশের মানুষ ভুলবে কী করে? তারা তো ফল চায়, সাফল্য চায়, অজুহাত নয়। দল গড়ার দোহাই দিয়ে তাদের প্রতি এ ভাবে দায়বদ্ধতা অস্বীকার করা যায়?
এই দলের সবচেয়ে কার্যকর বোলার শামি। ওর পারফম্যান্সই বলে দিচ্ছে সেই কথা। সবচেয়ে ধারাবাহিকও। ইশান্তকে শুধু টেস্টের জন্যই রাখার সিদ্ধান্তটা বহাল থাকুক। কিন্তু এ বার বোধহয় জাহির খানের টেস্ট জীবনের মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে। জাহির গ্রেট বোলার। অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে, ভারতীয় ক্রিকেটে ওর অবদান প্রচুর। কিন্তু এখন বোধহয় নির্বাচকদের ওকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে দেওয়া উচিত, এ বার বরং একটু অন্যদের জায়গা ছেড়ে দাও, প্লিজ। বল একটু পুরোনো হলেই জাহির নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। এমনকী গতি ও বাউন্সে ভরা উইকেটেও। দেশে ঈশ্বর পাণ্ডে, অশোক দিন্দা, উমেশ যাদব, অনুরিত সিংহদের মতো ভাল ভাল পেসার বসে রয়েছে। দল তৈরিকে যখন এতই গুরুত্ব দিচ্ছে ধোনি, তা ওদেরও পরখ করে দেখুক না।
এর পর ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সফর রয়েছে। সেখানেও হয়তো প্রায় একই দল নিয়ে যেতে হবে ধোনিকে। এ হল সেই দুই দেশ, যেখান থেকে পরপর আটটা টেস্ট হেরে ফিরেছিল ভারত। ওখানে আরও বড় পরীক্ষা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডে হওয়া ভুল ওখানে শুধরে নিতে না পারলে যে কপালে অনেক দুঃখ আছে, তা এখন নিশ্চয়ই আলাদা করে বলে দিতে হবে না। |
বিদেশে ক্যাপ্টেন ধোনির ব্যালান্স শিট |
টেস্ট ২৩,
জয় ৫
(নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে),
হার ১১, ড্র ৭। |
|
ধোনি উবাচ |
• আমাদের সমস্যা কোথায় হচ্ছে? দেখুন, এটা তো রান্না করার মতো কোনও ব্যাপার নয় যে বলে দিলাম, হ্যাঁ নুন কম হয়েছে। সেটাই সমস্যা...
• সব মিলিয়ে সফরটা ভাল ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর থেকেই আমরা উন্নতি করছি। এই টেস্টে ভাল পাল্টা লড়াই দিয়েছি।
• প্রায় আড়াই দিন ফিল্ডিং করতে হয়েছে আমাদের। বোলাররা যে ভাবে চ্যালেঞ্জটা নিয়েছে, তার প্রশংসা করতেই হয়। তৃতীয় নতুন বল নিয়েও ওরা উইকেটের জন্য ঝাঁপিয়েছে।
• অনেকেরই সন্দেহ ছিল যে আমরা কুড়িটা উইকেট নিতে পারব কি না। বিশেষ করে যেখানে স্পিনার উইকেট পাচ্ছিল না। কিন্তু প্রথম টেস্টে আর এই টেস্টের প্রথম ইনিংসেও আমরা বিপক্ষের সব উইকেট নিয়ে দেখিয়েছি। |
|
টুইটার-ঝড় |
• ধোনি বলেছে ভারতীয় বোলাররা যে ভাবে বল করেছে, দেখে ভাল লেগেছে। আমি নিশ্চিত, ম্যাকালামও তাই বলবে।
• নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষে শ্রীনিবাসনের কাছে ম্যাকালামের নামে একটি এফআইআর দায়ের করেছে ধোনি!
• ধোনিকে আর এক বছর অধিনায়ক রেখে দেওয়া হোক। তাহলেই ও নিশ্চিত ভাবে ভারতকে আট নম্বরে নিয়ে যাবে।
• পরের ইংল্যান্ড সফরের আগেই হয়তো ধোনি নেতৃত্ব ছেড়ে দেবে। বিরাটের উপর বিনিয়োগ করার সময় এসে গিয়েছে।
• নেতৃত্ব, উইকেটকিপিং, ব্যাটিং। তিন ফর্ম্যাটের ক্রিকেটেই এটা করতে হচ্ছে ধোনিকে। এর সঙ্গে রয়েছে আইপিএল। যে কোনও ক্রিকেটারকে নিঃশেষ করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। ধোনিও মনে হয় এর শিকার হচ্ছে।
দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রতিক্রিয়া |
|
|
|
|
|
|