প্রথম দিনে সাত বছরের মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা। পরের দিনই স্ত্রী আর দুই মেয়েকে ওষুধ ছিটিয়ে অজ্ঞান করে ফ্ল্যাটে হানা। তার পরে ছোট মেয়েটিকে ছাদে নিয়ে গিয়ে বেঁধে ফেলে রেখে দুষ্কৃতীরা উধাও।
সল্টলেকের শ্রাবণী আবাসনে সোম ও মঙ্গলবার দিনের বেলায় ঘটনাটি ঘটেছে রাজ্যের এক মন্ত্রীর পার্সোনাল সেক্রেটারি (পিএস) বা ব্যক্তিগত সচিবের চারতলার ফ্ল্যাটে। ওই অফিসারের স্ত্রী এবং তিন বছরের ছোট মেয়েকে বিধাননগরেরই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মন্ত্রীর ওই ব্যক্তিগত সচিব ডব্লিউবিসিএস অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্মকর্তা। খাস সল্টলেকের সরকারি আবাসনে হামলার এই ঘটনায় সেখানকার নিরাপত্তার ঘাটতি ফের বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে পুলিশের ভূমিকা।
ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশি সূত্রের খবর, ওই অফিসারের বড় মেয়ে আবাসনের কাছেই একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সোমবার দুপুরে ছুটির পরে এক মহিলা ওই স্কুলের গেটের সামনে গিয়ে মেয়েটিকে বলে, ‘তোমার বাড়ির লোক পাঠিয়েছে। আমার সঙ্গে চলো।’ মেয়েটির হাত ধরে সেই মহিলা তাকে চকোলেট-চিপসের লোভও দেখায়। তাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মেয়েটি কোনও মতে মহিলার হাত ছাড়িয়ে বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে। আশপাশের লোকজন দেখতে পেয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন। কিন্তু ওই মহিলাকে ধরা যায়নি। বাড়ি ফিরে মেয়েটি মাকে সব জানায়। অফিসার তখন অফিসে। খবর পেয়ে তাঁদের বাড়ি যান ওই ব্যক্তিগত সচিবের এক বন্ধু। তিনিও প্রশাসনের পদস্থ কর্তা। অভিযোগ দায়ের করা হয় সল্টলেক দক্ষিণ থানায়। মেয়েটির বর্ণনা অনুযায়ী মহিলার ছবি এঁকেছে পুলিশ।
২৪ ঘণ্টা কাটতে না-কাটতেই, মঙ্গলবার বিকেলে ওই পরিবারের উপরে ফের হামলা হয়। পুলিশ জানায়, কয়েক জন দুষ্কৃতী হঠাৎই ওই ব্যক্তিগত সচিবের ফ্ল্যাটে ঢুকে ওষুধ ছড়িয়ে দেওয়ায় তাঁর স্ত্রী এবং সাত আর তিন বছরের দুই মেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার পরে ছোট মেয়েটিকে ছাদে নিয়ে গিয়ে তার গায়ে লাল কালিতে অশ্লীল কথা লিখে দেয় দুষ্কৃতীরা। তার পরে পালায়। সন্ধ্যায় জ্ঞান ফেরার পরে অফিসারের স্ত্রী দেখেন, ছোট মেয়ে ঘরে নেই। খোঁজাখুঁজি করেও শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। খবর যায় পুলিশে। শেষ পর্যন্ত ছাদে শিশুটির খোঁজ মেলে। মা এবং ছোট মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে অফিসারের স্ত্রীর বক্তব্য নথিভুক্ত করে। দুষ্কৃতীরা শিশুটির উপরে অত্যাচার করেছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তার ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে।
সল্টলেক পুলিশ কমিশনারেটের পদস্থ কর্তারা রাতেই ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু পরপর দু’দিনের হামলার রহস্যভেদ হয়নি। লুঠপাটেরও প্রমাণ মেলেনি। রাজ্য প্রশাসনের একাধিক পদস্থ কর্তা, এমনকী বেশ কিছু পুলিশকর্তাও ওই আবাসনে থাকেন। গেটে নিরাপত্তারক্ষী থাকেন সব সময়েই। তা সত্ত্বেও দুষ্কৃতীরা কী ভাবে হামলা চালাল, সেই প্রশ্ন উঠছে। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এই হানাদারি কি না, মন্ত্রীর ওই ব্যক্তিগত সচিবের সঙ্গে কথা বলে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। রাতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওই অফিসার জানান, কারও সঙ্গে তাঁর শত্রুতা নেই। কে বা কারা কেন হামলা চালাল, তিনি তা বুঝতে পারছেন না।
খোদ মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবের বাড়িতে দিনের বেলায় এমন হামলায় বাসিন্দারা আতঙ্কিত। বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “ভয়ঙ্কর ঘটনা। আমরা স্তম্ভিত। আমাদের নিরাপত্তার হাল কী, এই ঘটনাই তার প্রমাণ!” সল্টলেকের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা। তবে ওই অফিসার যে-মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব, সেই শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “পুলিশ বিষয়টি দেখছে। এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার অবনতির কোনও ব্যাপার নেই।” |