সাদা ট্রাউজার্স-লাল ব্লেজার পরা বছর পনেরো-ষোলোর স্কুলছাত্রটিকে ফুলবাগানের রাস্তায় পার্কিং লটে নতুন একটি মোটরসাইকেলের চার দিকে ঘুর-ঘুর করতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল লালবাজারের গোয়েন্দাদের।
স্কুলের পোশাকে সে ওখানে কেন, ছুটির পরে কেন বাড়ি ফেরেনি, কেনই বা অন্যের গাড়িতে চড়ে বসছে গোয়েন্দাদের এত সব প্রশ্নবাণে ঘাবড়ে গিয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রটি কবুল করেই ফেলল, বাবার কাছে বায়না করেও মোটরসাইকেল কিনতে পারেনি। তাই নকল চাবি দিয়ে রাস্তার যে কোনও মোটরসাইকেলের লক খুলে সেটির উপরে প্রায়ই চড়ে বসে সে। এ দিক-ও দিক কিছুটা ঘুরে শখ মিটে গেলে তার পরে মোটরসাইকেলটিকে কখনও রাস্তার ধারের গ্যারাজে, কখনও ফুটপাথের পাশে ফেলে রেখে বাড়ি চলে যায়। তার পরে সেই মোটরসাইকেলের আসল মালিকের কী হল, তা নিয়ে আর মাথা ঘামায় না।
গাড়ি চুরির অভিযোগে গিরিশ পার্ক থানা এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্রকে সোমবার গ্রেফতার করেছে কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশ। তবে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ছাত্রটি কোনও গাড়ি চুরি ও পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত নয়। নিছক শখ মেটাতেই এমন কাণ্ড করত সে। মঙ্গলবার ছেলেটিকে জুভেনাইল আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে আড়িয়াদহের একটি আশ্রমে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। |
পুলিশ জানায়, গত সপ্তাহে ফুলবাগান থানা এলাকা থেকে দু’টি মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগ পেয়ে এলাকার কয়েকটি মোড়ে গোয়েন্দাদের নজরদারি করতে পাঠানো হয়। অভিযোগকারীরা জানিয়েছিলেন, তাঁদের গাড়ি চুরি হয়েছে দুপুর একটা থেকে দেড়টার মধ্যে। তার পরেই সোমবার ফুলবাগানে বড় একটি পোশাকের দোকানের সামনে ওই ছেলেটিকে পাকড়াও করেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের দাবি, ছাত্রটি সোমবার দুপুরে মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাঁদের দেখায়, সেখানে দু’টি মোটরসাইকেল রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছে। গত সপ্তাহে একই কায়দায় সে ফুলবাগান এলাকা থেকে ওই দু’টি মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়েছিল। গাড়ি দু’টির নম্বরের সঙ্গে ফুলবাগান থানায় করা অভিযোগের গাড়ির নম্বর দু’টি মিলে যায়।
গোয়েন্দারা জানান, ছাত্রটি সোমবার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার একটি গ্যারাজেও নিয়ে গিয়েছিল তাঁদের। সেই গ্যারাজের মালিক গোয়েন্দাদের জানান, ওই ছাত্রটি গত সপ্তাহে একটি গাড়ি নিয়ে গিয়ে তাঁকে বলে, গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে, সারিয়ে দিতে হবে। সারানোর পরে তিনি ভেবেছিলেন, টাকা জোগাড় করতে না পারায় হয়তো ছাত্রটি গাড়িটি নিয়ে যেতে পারছে না। গাড়ির নম্বর কলকাতা পুলিশের সব থানা এলাকায় পাঠিয়ে গাড়ির মালিককে খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। কারণ ওই ছাত্রটি গোয়েন্দাদের মনে করে বলতে পারেনি, কোন এলাকা থেকে সে ওই গাড়িটি নিয়েছিল।
এমন আর ক’টা কাণ্ড ঘটিয়েছে সে? গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় ছাত্রটি জানিয়েছে, মাস কয়েক ধরে সে এই ভাবে কমপক্ষে পাঁচটি মোটরসাইকেলে চড়েছে। কিন্তু বাকি দু’টি গাড়ি কোথা থেকে নিয়েছে বা কোথায় রেখে এসেছে তা মনে করতে পারছে না।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “হয়তে দুপুরে কোনও মোটরসাইকেল চালিয়ে সে সেই জায়গাতেই রেখে এসেছে, যেখান থেকে সে গাড়িটিতে চড়ে বসেছিল। গাড়ির মালিক তাই কিছু জানতেই পারেননি। আবার এমনও হতে পারে, কোনও ট্রাফিক গার্ড বেওয়ারিশ গাড়ি ভেবে সেটিকে গার্ডে রেখে দিয়েছেন। সব ট্রাফিক গার্ড ও থানায় এই ধরনের গাড়ির খবর দিতে বলা হয়েছে।” পুলিশ জানায়, ছেলের এই ‘আজব’ নেশার কথা জানতে পেরে যারপরনাই লজ্জিত ও হতাশ তার বাবা। তবে গোয়েন্দারা তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, ছাত্রটিকে মানসিক ভাবে সুস্থ করে তোলার কাজে তাঁরা সাহায্য করবেন। |