পরিচিত ব্যক্তির ফোন পেয়েই খাবার ফেলে বাজারে চলে গিয়েছিলেন আলমবাজারের বাসিন্দা আলু ব্যবসায়ী সুনীল সাউ। আর তার পরেই খুব কাছ থেকে তাঁর পেটে পরপর দু’টি গুলি করে দুষ্কৃতীরা। আলমবাজার মোড়ের খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে মঙ্গলবার এমনই তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে।
পাশাপাশি প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মাস দুয়েক ধরে বরাহনগর পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিরিঞ্চিকুঠি এলাকায় দুই ব্যক্তির সঙ্গে প্রোমোটিংয়ের কাজ শুরু করেছিলেন সুনীলবাবু। ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে সোমবার রাতের এই খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলেও মনে করছেন তদন্তকারীরা। খুনের জন্য পেশাদার খুনি ব্যবহার করা হয়েছিল বলেও ধারণা পুলিশের।
পুলিশ জানায়, সুনীলবাবুর দু’টি মোবাইলই বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। শেষ যে ফোনটি পেয়ে তিনি বাড়ি থেকে বেরোন, সেই কলটিও পরীক্ষা করে দেখছে পুলিশ। ওই ব্যক্তিকে গুলি করার পরেও অন্য মোবাইলে যে সব কল এসেছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনকী যে দুই ব্যক্তির সঙ্গে সুনীলবাবু প্রমোটিংয়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন তাঁদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, আলমবাজার বাজারে দীর্ঘ দিনের আলুর দোকান সুনীলবাবুর (৪০)। তিনি ওই বাজার সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। প্রতিদিনের মতো সোমবারও রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তিনি দোকান বন্ধ করে দেশবন্ধু রোডের বাড়িতে চলে যান। স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে এবং বাবা-মাকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন তিনি।
রাত ১০টা ১০ নাগাদ তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। সেই সময় তিনি খেতে বসেছিলেন। ফোনে সুনীলবাবুকে জানানো হয়, বাজারে মারামারি হচ্ছে। এ কথা শুনেই তাড়াহুড়ো করে খাবার ফেলে বাজারের সামনে চলে আসেন তিনি।
পুলিশ জানায়, রাত সওয়া ১০টা নাগাদ বরাহনগর জুট মিলের ছুটি হওয়ায় আলমবাজার মোড়ে বেশ ভিড় ছিল। সুনীলবাবু বাজারের গেটের কাছে এসে দাঁড়াতেই একটি মোটরবাইকে চেপে দুই যুবক তাঁর কাছাকাছি আসে। আশপাশের দোকানদারেরা জানিয়েছেন, আচমকা তাঁরা পরপর দু’টি গুলির আওয়াজ শোনেন। এর পরেই দেখেন সুনীলবাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ছটফট করছেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। তদন্তকারীরা জানান, গুলি করেই দক্ষিণেশ্বরের দিকে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা বরাহনগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রামকৃষ্ণ পাল। তিনি বলেন, “এসে দেখি ওই ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে ছটফট করছেন। কোনও মতে একটি ট্যাক্সি ধরে তাঁকে তুলে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।” পুলিশ জানায়, প্রথমে বাগবাজার এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই সুনীলবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকেরা। ওই ব্যক্তির পেটের বাঁ দিকে গুলি লেগেছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই পরিবারের সঙ্গে দেশবন্ধু রোডের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সুনীলবাবু। কয়েক বছর আগে বিরিঞ্চিকুঠি এলাকায় তিনি একটি পুরনো বাড়ি কিনেছিলেন। রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে সেখানেই ঘুমোতে যেতেন।
ওই রাতের ঘটনার পর থেকেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আলমবাজার এলাকায়। মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, আলমবাজার বাজার ও সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের টহলদারি চলছে। তবে রাত পর্যন্ত খুনের অভিযোগে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা নিতাই মণ্ডল বলেন, “জনবহুল এলাকায় এ ভাবে খুন, ভাবাও যায় না। পুলিশকে আমরা আইন-শৃঙ্খলার প্রতি নজরদারি বাড়াতে ডেপুটেশন দেব।” ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (ডিডি) পি সুধাকর দাবি করেন “কিছু সূত্র মিলেছে। তার উপর ভিত্তি করেই তদন্ত এগোচ্ছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি কিনারা করা যাবে।” |