চার দিন ধরে নিখোঁজ কলকাতার চেতলার বাসিন্দা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের পচাগলা দেহ মঙ্গলবার মিলল আরামবাগে দ্বারকেশ্বর নদে। সুরজিৎ সিংহ (২২) নামে ওই যুবকের দেহ এ দিন সকালে উদ্ধারের পরে ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ তাঁর এক সহপাঠিনীর বাবাকে গ্রেফতার করে। থানায় একটি খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন সুরজিতের বাবা শঙ্কর সিংহ।
|
সুরজিৎ সিংহ |
সুরজিৎ যাদবপুরে স্নাতকোত্তর বাংলার (সান্ধ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁর ওই সহপাঠিনী আরামবাগের সাজিডাঙার বাসিন্দা। পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে সুরজিতের বাবা শঙ্কর সিংহ জানিয়েছেন, মেয়ের সঙ্গে সুরজিতের বন্ধুত্ব মানতে পারেননি ছাত্রীটির বাবা শৈলেন জানা। তা নিয়ে তাঁর সঙ্গে সুরজিতের গোলমাল চলছিল। তার জেরেই সুরজিৎকে খুন করা হয়েছে।
এসডিপিও (আরামবাগ) শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, “ওই ছাত্রের দেহটি এতটাই ফুলে গিয়েছে, যে কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। শৈলেনবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” শৈলেনবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, “মেয়ের মুখে ওই ছাত্রের নাম কখনও শুনিনি। ও আমাদের বাড়িতেও কোনও দিন আসেনি।
আমি কেন ছেলেটিকে খুন করতে যাব?” ওই ছাত্রী এ দিন বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর মোবাইলও বন্ধ ছিল।
পুলিশ ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনের মতো গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা নাগাদ সুরজিৎ ছাত্র পড়াতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরোন। এর পর থেকেই তাঁর মোবাইল বন্ধ। রাত অবধি অপেক্ষা করেও ছেলে বাড়ি না ফেরায় শঙ্করবাবু চেতলা থানায় একটি নিখোঁজ-ডায়েরি করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ সুরজিতের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে জানতে পারে, রবিবার তিনি আরামবাগে ছিলেন। খবর দেওয়া হয় সুরজিতের পরিবারকে। কিন্তু চেতলা থানার পুলিশের সঙ্গে সোমবার আরামবাগে গিয়েও সুরজিতের খোঁজ পাননি শঙ্করবাবু। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ আরামবাগের কালীপুর এলাকায় দ্বারকেশ্বরের পাড়ের কাছে হাফ প্যান্ট এবং মোটা গেঞ্জি পরা একটি দেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন।
দেহটি সুরজিতের বলে শনাক্ত করেন শঙ্করবাবুই। তাঁর দাবি, “নিখোঁজ হওয়ার সময়ে ছেলের পরণে নীল জিনস্ ছিল। তা কোথায় গেল? আমার মেয়ে পূজার কাছে শুনেছি, সহপাঠী মেয়েটির সঙ্গে সুরজিতের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়ের বাবা তা মানেননি।
তাই এই খুন।”
সুরজিতের বোন পূজার দাবি, “গত দু’বছরে ওই মেয়েটি দাদার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। অবশ্য মাঝেমধ্যেই দু’জনের ঝগড়া হত। দাদার দেহ উদ্ধারের কথা জেনেই ওই মেয়েটিকে ফোন করি। কিন্তু ওর মোবাইল বন্ধ ছিল। অথচ, দাদা নিরুদ্দেশ হওয়ার পরে ও অনেকবারই ফোন করে দাদার খবর জানতে চেয়েছে। আমাদের দৃঢ় ধারণা, ও বা ওর পরিবার দাদার ক্ষতি করেছে।”
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সুরজিতের মোবাইলটি এখনও উদ্ধার করা যায়নি। সহপাঠীরা জানান, সুরজিতের ওই বান্ধবী তাঁদের কাছে দাবি করেছেন, নিখোঁজ হওয়ার আগে ফোন করে সুরজিৎ তাঁকে জানিয়েছিলেন, ১০০ টাকা নিয়ে তিনি বেরিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোথায়, সে কথা জানাননি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শেষ বার তাঁদের কথা হয়। তখন সুরজিৎ মেয়েটিকে জানিয়েছিলেন, তিনি হাওড়ায় রয়েছেন। |