জিটিএ প্রধানের পদ নিয়েও সক্রিয় মোর্চা
সুর নরম হয়েছিল আগেই। সোমবার আমজনতার ক্ষোভ এবং রাজ্যের প্রবল চাপের জোড়া ফলায় আরও কিছুটা পিছু হটল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এ দিন সন্ধ্যায় দার্জিলিঙে বিমল গুরুঙ্গের উপস্থিতিতে দলীয় বৈঠকের পরে মোর্চার ঘোষণা, পাহাড়বাসীর রসদে ঘাটতির কথা ভেবে আগামী ১৫ অগস্ট, বৃহস্পতিবার থেকে ১৮ অগস্ট পর্যন্ত বনধ তুলে নেওয়া হল। তবে আজ, মঙ্গলবার ও আগামী কাল, বুধবার পাহাড়বাসীকে ঘর থেকে বার না-হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জনতা-কার্ফুর সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে তারা।
যে জিটিএ-র প্রধান পদ ছেড়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন বিমল গুরুঙ্গ, সেই জিটিএ প্রসঙ্গও এ দিন এসেছে মোর্চা নেতৃত্বের মুখে। গত শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নতুন জিটিএ প্রধান নির্বাচিত না-হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। মোর্চা সূত্রে এ দিন বলা হয়, ১৬ তারিখ জিটিএ-র সভা ডাকা হবে। সেখানেই ঠিক হবে পরবর্তী চিফ এগজিকিউটিভের নাম। যে উদ্যোগকে মুখ্যমন্ত্রীর চাপের মুখে গুরুঙ্গদের আরও এক দফা পিছু হটা হিসেবেই দেখছে রাজ্য প্রশাসন। প্রসঙ্গত, এর আগে গুরুঙ্গ নিজেও ছেড়ে আসা জিটিএ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন।
স্কোয়াশের জন্য মারামারি। দার্জিলিঙের সিংমারিতে মোর্চার
সদর দফতরের সামনে সোমবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
মোর্চার বনধ তোলার সিদ্ধান্তকে এ দিন স্বাগত জানিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে একই সঙ্গে জনতা কার্ফুর নাম করে যে ভাবে পাহাড়কে অচল করে রাখার চেষ্টা গুরুঙ্গরা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে মহাকরণের কর্তারা ক্ষুব্ধ। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, “কোনও অছিলায় পাহাড়ের জনজীবন অস্বাভাবিক করতে দেওয়া হবে না।”
মোর্চার উপরে চাপ বজায় রাখতে এ দিন এক দিকে যেমন আরও ১২ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য, তেমনই গ্রেফতার করা হয়েছে দলের প্রথম সারির বেশ কয়েক জন নেতানেত্রীকে। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, এ দিন গ্রেফতার হয়েছেন মোট ২২ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জন জিটিএ সদস্য এবং মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্য রয়েছেন। সব মিলিয়ে এ দিন পর্যন্ত নানা পুরনো মামলায় ধৃত মোর্চা নেতা-কর্মীর সংখ্যা ২২৫ ছাড়িয়ে গিয়েছে।
রাজনৈতিক ভাবেও মোর্চা যে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, তা সোমবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। মোর্চার ডাকা সর্বদল বৈঠকে তৃণমূল, সিপিএম ও জিএনএলএফ যোগ দেয়নি। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস (পাহাড়) যোগ দিলেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ওঁরা কংগ্রেসের প্রতিনিধিই নন! অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরএম, বিজেপি (পাহাড়)-সহ আরও কয়েকটি গোর্খা সংগঠনের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। বৈঠকে ঠিক হয়, আগামী দিনে একটি পৃথক মঞ্চ গড়ে সকলে মিলে আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করা হবে। মঞ্চের নাম ও আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করতে ১৬ অগস্ট ফের সকলে মিলে বৈঠকে বসবে। বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধিরা মোর্চার নেতানেত্রীদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ তুলে ‘পুলিশ-রাজ’ কায়েম করার অভিযোগে সহমত হন বলে মোর্চা নেতাদের দাবি।
পাহাড়ের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আজ, মঙ্গলবার আবার শিলিগুড়িতে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকরণ সূত্রের খবর, মোর্চার ডাকা সর্বদল বৈঠকের পরে দার্জিলিঙের পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যাতে চটজলদি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই জন্যই বাসুদেববাবুকে পাঠানো হচ্ছে। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকেরও আজ শিলিগুড়ি পৌঁছনোর কথা। পাহাড়ে পরিবহণ ও রসদ সরবরাহের বিষয়ে বৈঠক করবেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অনির্দিষ্ট কালের বনধের নবম দিনের মাথায় কার্শিয়াঙের পানিঘাটায় গিয়ে চাল-ডাল-আনাজ বিলির কথা ঘোষণা করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বিকেল ৪টে নাগাদ মন্ত্রীর ওই ঘোষণায় গোটা এলাকা হাততালির আওয়াজে ভেসে যায়। এর ঘণ্টা তিনেকের মাথায় দলের সদর দফতরে ফের বৈঠকে বসেন গুরুঙ্গরা।
মোর্চার অন্দরের খবর, দলীয় বৈঠকে প্রথমে দিল্লির প্রসঙ্গ ওঠে। সেখান থেকে ফেরা প্রতিনিধিরা কয়েক জন জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কেন্দ্র কোনও ভাবেই রাজ্য সরকারকে এতটুকুও ক্ষুণ্ণ করতে চাইছে না। এর পরে নেতাদের একাংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেন, দ্রুত বনধ তোলার কথা ঘোষণা না-করলে রাজ্যের মন্ত্রীরা পাহাড়ে রসদ বিলি শুরু করলে পরিস্থিতি অন্য দিকে গড়াতে পারে। এমনকী, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগে আদালত অবমাননার দায়ে পড়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন অনেকে। আদালত অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার হলে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে কি না, সেই প্রসঙ্গও ওঠে।
মোর্চা সূত্রের খবর, প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আলোচনার পর রোশন গিরিকে বনধ তোলার কথা ঘোষণার দায়িত্ব দেন গুরুঙ্গ। একই সঙ্গে ‘মুখরক্ষা’র উপায় খুঁজতে দু’দিন পাহাড়ে ‘জনতা-কার্ফু’র সিদ্ধান্ত বহাল রাখার কথাও ঘোষণা করতে বলা হয় তাঁকে। দলীয় সূত্রেই জানা দিয়েছে, এতে এক দিকে যেমন মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সময়সীমা মানা হবে, তেমনই কিছুটা হলেও নিজেদের জেদ বজায় রাখার ইঙ্গিতও পাহাড়বাসীকে দেওয়া যাবে বলে মোর্চার শীর্ষ নেতাদের একাংশ মনে করছেন। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “১৫ অগস্ট থেকে ১৮ অগস্ট পর্যন্ত বনধ তুলে নেওয়া হল। তার পরে কী হবে, তা ১৬ অগস্ট আলোচনায় বসে ঠিক করা হবে। মঙ্গলবার ও বুধবার পাহাড়ে ‘জনতা-কার্ফু’র ডাক দেওয়া হয়েছে।”
রাজ্য সরকার এবং মোর্চা, দু’পক্ষের পদক্ষেপেই পাহাড়ের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে বলে ফের অভিযোগ করেছে বিরোধী বামফ্রন্ট। রাজ্য সরকারের কাছে সর্বদল বৈঠক ডাকার দাবিও ফের তুলেছে তারা। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশকে অছিলা করে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটা এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আরও ইন্ধন জোগাবে। সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক করে মোর্চা যে প্রস্তাব নিয়েছে, তাতেও বোঝা যাচ্ছে উভয় পক্ষই প্ররোচনা সৃষ্টি করছে।” রাজ্য সরকারের দায়িত্ব বেশি বলে মন্তব্য করে তাদেরই সর্বদল বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন সূর্যবাবু। তবে তাঁর কথায়, “রাজ্যের এই ব্যাপারে ইচ্ছা নেই বলেই মনে হয়।” গুরুঙ্গদের দাবি বা পাহাড়ে টানা বনধ কোনওটাই যে তাঁরা সমর্থন করেন না, তা ফের বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আলোচনার ব্যাপারে কেন্দ্র কেন তৎপর হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন সূর্যবাবু।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.