নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে কেন্দ্রের কোনও প্রতিনিধি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন না বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশ্বাস দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
সম্প্রতি পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়ার পরে রোশন গিরি-সহ মোর্চার বেশ কয়েক জন নেতা দিল্লি গিয়ে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম, কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার, গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা কেউই গোর্খাল্যান্ডের দাবি এবং মোর্চার ডাকা অনির্দিষ্টকাল বন্ধকে সমর্থন না-করলেও রাজ্যকে এড়িয়ে এই আলোচনাকে কেন্দ্রের ‘বাজে খেলা’ আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, এ নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লিখেছিলেন তিনি।
৩১ জুলাই লেখা সেই চিঠির জবাবেই মমতাকে আশ্বাস দিয়েছেন মনমোহন। তাঁর বক্তব্য, কোনও বিষয়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়ে যাওয়ার পরে তা নিয়ে আর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সুযোগ সংবিধানগত ভাবেই নেই। ফলে গুরুঙ্গ যে রাজ্যকে এড়িয়ে শুধু দিল্লির সঙ্গে আলোচনা চালানোর কথা বলছেন, তা বাস্তবে সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আধিকারিকেরা।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্র-রাজ্য-মোর্চার ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতেই গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠন করা হয়েছিল।
রাজ্য সরকার জিটিএ ব্যবস্থাকে পুরোমাত্রায় কায়েম করতে চায়। সে জন্য মোর্চা নেতাদের সঙ্গে বার বার আলোচনা করেই এগোনো হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও গোটা বিষয়টা জানানো হয়েছে। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “আমার কাছে এটা বিস্ময়ের এবং বিরক্তির, যখন শুনি যে বেশ কয়েক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেখা করার জন্য মোর্চা নেতাদের সময় দিয়েছেন। দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছেন। রাজ্য সরকারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এই সাক্ষাৎপর্ব চলেছে।” স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসাররাও বিষয়টি জানতেন কি না, সে বিষয়ে তাঁর সংশয় আছে বলে চিঠিতে লিখেছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পরেই মোর্চা নেতারা বলতে শুরু করেছেন যে, ভারত সরকারের সঙ্গে তাঁদের চুক্তি হয়েছে। এবং সেই কারণে আন্দোলন জোরদার করা হবে। বিষয়টিতে নজর দিতে অনুরোধ করে মমতা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘এমন অনৈতিক বৈঠক
করা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের আপনি নিরস্ত করুন।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “আমি আপনার চিঠি নিয়ে খোঁজখবর করেছি। কাজের সুবিধার জন্য মোর্চা নেতাদের সঙ্গে দিল্লির কিছু যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের ক্ষমতার পরিধির মধ্যে ঢুকে পড়ার কোনও বাসনা বা তাতে উৎসাহ দেওয়ার কিছু নেই। জিটিএ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন কোনও কাজেও দিল্লির কোনও আগ্রহ নেই।” প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের বলে দেওয়া হয়েছে মোর্চা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে হলে তা রাজ্যকে জানিয়েই করতে হবে। বৈঠকে আলোচিত সব বিষয়ও রাজ্যকে জানানো হবে। মমতার সঙ্গে দেখা করে দার্জিলিঙের বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তরফে এক জন প্রতিনিধি পাঠানোর ভাবনাচিন্তাও চলছে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্রে খবর।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতাকে বিপাকে ফেলার জন্য গুরুঙ্গকে মদত দেওয়ার কোনও অভিপ্রায়ই তাদের নেই।
কারণ, গোর্খাল্যান্ডের দাবির সঙ্গে উত্তর-পূর্বের একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি জড়িয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। যা গোটা দেশের পক্ষেই অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ফলে এ ব্যাপারে কেন্দ্র সাবধানী পদক্ষেপই করবে। |