হুগলি জেলার ৭২টি পঞ্চায়েত এই আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত ১০০ দিন প্রকল্পের কোনও কাজই শুরু করেনি।
গত শুক্রবার জেলা প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে বিডিওদের। প্রকল্পটির উৎকর্ষসাধনে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসকদের কাছেও ওই বার্তা পাঠানো হয়েছে। জেলার ১৮টি ব্লকের ২০৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৫টি ব্লকের ৭২টি পঞ্চায়েতের এই হাল নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার পুলক সরকার বলেন, “যখন জেলায় একশো দিনের প্রকল্পে আরও বেশি শ্রমদিবস সৃষ্টির উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে, তখন ৭২টি পঞ্চায়েতে কী কারণে একেবারেই কাজ হয়নি তা আমরা জানতে চাইব। অসুবিধা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৮টি ব্লকের মধ্যে মাত্র আরামবাগ, হরিপাল এবং শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়ায় সব ক’টি পঞ্চায়েতে কাজ শুরু হয়েছে। বাদবাকি বেশির ভাগ ব্লকেই কাজ শুরু করা যায়নি।
বিডিওরা কী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন? পুড়শুড়ার বিডিও সমর দত্ত বলেন, “তহবিলের অভাব তো ছিলই, তা ছাড়াও বিদায়ী পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ কাজ করাতে উদ্যোগী ছিলেন না।” তারকেশ্বরের বিডিও সুমন মজুমদারের বক্তব্য, “গত আর্থিক বছরের শেষে জেলার প্রতিটি ব্লকের প্রায় ৩-৫ কোটি টাকা করে বকেয়া ছিল। চলতি আর্থিক বছরের শুরু এপ্রিলে আমরা যে টাকা পেলাম, তা গত আর্থিক বছরের পুরো দেনাই মিটল না। টাকার অনিশ্চয়তায় আমরা কাজ করাতে সাহস পাইনি। তা ছাড়া, বিদায়ী প্রধানেরাও ঝুঁকি না নিয়ে হাল ছেড়ে দিলেন। যখন কাজ করানোর মতো হাতে টাকা এল, তখন পঞ্চায়েত ভোট প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” একই কথা বলেছেন ধনেখালির বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়, গোঘাট ২ বিডিও শিবপ্রিয় দাসগুপ্ত, খানাকুল ২ বিডিও অনুপকুমার মণ্ডল প্রমুখ। আর যে তিনটি ব্লকে কাজ করানো হয়েছে সেগুলির মধ্যে আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুই বলেন, “টাকার অসুবিধা থাকায় মজুরি দিতে দেরি হতে পারে বলে শ্রমিকদের বোঝানো হচ্ছে।”
বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধানেরা প্রধানত তহবিলের অভাবকেই দায়ী করেছেন। পুড়শুড়ার কেলেপাড়া পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান সিপিএমের অনুপ মান্না বলেন, “কাজের জন্য টাকাই তো ছিল না। তারপরেই ভোট এসে গেল।” কাজ না হওয়া অন্য পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধানদের অনেকেরই বক্তব্য প্রায় একই রকম।
তবে কাজ না হওয়া পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। পুড়শুড়ার কেলেপাড়া পঞ্চায়েত এলাকারই কেলেপাড়া গ্রামের বিভূতি রায় বলেন, “যে সময়টা একশো দিনের মূল কাজের সময়, সেই এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত কোনও কাজই হল না। এ বার বর্ষায় বুড়ি ছোঁয়া করে গুটি কয়েক গাছ লাগানো হবে। আমরা শ্রমিকরা যেমন কাজ পেলাম না, তেমনি গ্রাম উন্নয়নেরও কিছু কাজ হয়নি।” |