বৈদ্যবাটিতে গ্রেফতার মহিলা-সহ ২
মালিককে না জানিয়েই বিক্রি জমি
মালিক দেখলেন, তাঁর জমি ঘিরে ফেলছেন অন্য লোক। রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে তাঁর চোখ কপালে। সেখানে আবিষ্কার করলেন, জমি সত্যি সত্যিই তাঁর নামে নেই। উপায়ান্তর না দেখে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন জমির মালিক। পুলিশের তদন্তে ঝুলি থেকে বেড়াল বেরলো। দেখা গেল, জাল কাগজপত্র দাখিল করে বেহাত হয়ে গিয়েছিল ভদ্রলোকের বসতজমি। বেআইনি ভাবে ওই জমি কেনার অভিযোগে এক ল’ক্লার্ককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হয়েছেন এক মহিলাও।
ঘটনাস্থল, শ্রীরামপুর মহকুমার বৈদ্যবাটি। বছর খানেক ধরে এই মহকুমা জুড়ে একের পর এক জমি জালিয়াতির হদিস পেয়েছে পুলিশ। এই ঘটনাটি তালিকায় নবতম সংযোজন। এর ফলে জমি-জালিয়াত চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের লোকজনের যোগসাজসের অভিযোগ ফের সামনে চলে এল। শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক জয়সি দাশগুপ্ত বলেন, “জমি-জালিয়াতির বিষয়টি প্রশাসন কঠোর হাতে দমন করার চেষ্টা করছে। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে সব ক্ষেত্রেই আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বৈদ্যবাটিতে জিটি রোডের ধারেই ৪ কাঠা জমি রয়েছে অজিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পুলিশকে তিনি জানান, মাসখানেক আগে তাঁর জমি ঘিরে দিতে শুরু করেন প্রতিবেশী অমিতকুমার মান্না।
অমিতবাবু শ্রীরামপুর আদালতের ল’ক্লার্ক। তিনি দাবি করেন, ওই জমি তিনি কিনেছেন জনৈক উত্তম অধিকারীর কাছ থেকে। শ্রীরামপুরের রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে অজিতবাবুর কাছে সব পরিষ্কার হয়। অজিতবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৯ জুলাই শ্রীরামপুর থানা মোট সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করে। কাগজপত্রে দেখা যায়, উপানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক জন ওই জমির ওয়ারিশ সেজে ২০০৭ সালের ২৮ নভেম্বর তা বিক্রি করেছেন জনৈক উত্তম অধিকারীকে। ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর উত্তম আবার সেই জমি বেচেছেন অমিতকে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, জমি কেনাবেচার একটি চক্র এর পিছনে কাজ করেছে। ওই চক্র অজিতবাবুর মা প্রভাতীদেবীর মৃত্যুর জাল শংসাপত্র দাখিল করে। দেখা যায়, যে সময়ের শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে, তখন প্রভাতীদেবী দিব্যি বেঁচে ছিলেন। উপানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে কারও হদিস কাগজপত্রে লেখা ঠিকানায় পাওয়াও যাচ্ছে না। এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, “যাবতীয় কাগজপত্র জাল করা হয়েছে। নিজের অজান্তেই সর্বস্বান্ত হয়ে যেতে বসেছিলেন বৃদ্ধ অজিতবাবু।” গত মঙ্গলবার রাতে অমিতকে গ্রেফতার করেন শ্রীরামপুর থানার আইসি তথাগত পাণ্ডে। কৃষ্ণা সাউ নামে এক মহিলাকেও ধরা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, প্রতারণা, ষড়যন্ত্র-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, জমি রেজিস্ট্রি করানো কঠিন নয়। এ ক্ষেত্রে খুব একটা খোঁজ নেওয়া হয় না। আইনের ফাঁক গলেই একের পর এক জমি আসল মালিকের হাত থেকে জমি-হাঙরদের কব্জায় চলে আসছে।
বছর খানেক আগে শ্রীরামপুরের পেয়ারাপুরে একই ভাবে জাল কাগজপত্র তৈরি করে একটি জমি আত্মসাতের অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সিআইডি ঘটনাটির তদন্ত চালাচ্ছে। ডানকুনির মোল্লাবেড়ে অশোক সরকার নামে এক নিখোঁজ যুবকের ৩ একর ৬০ শতক জমি বেহাত হয়ে যায়। চণ্ডীতলার নৈটি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সুশান্ত কোলের বাবার নামে থাকা জমিও হাতিয়ে নিয়েছিল জালিয়াতেরা। সব ক্ষেত্রেই চক্রের লোকজন ক্রেতা সেজে রেজিস্ট্রি অফিসে কাগজপত্র তৈরি করেছে। মৃত লোককে জীবিত সাজানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। কয়েকটি ক্ষেত্রে নিকিতা কাটারিয়া নামে এক মহিলার নাম জমির ক্রেতা হিসেবে রয়েছে। এই নামের কারও হদিস পায়নি পুলিশ।
তদন্তকারীদের দাবি, সরকারি কিছু লোকজনের সঙ্গে যোগসাজসেই অবৈধ উপায়ে জমি বিক্রির ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে বলে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের জেরায় জানিয়েছে ধৃতেরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.