উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
কামারহাটি
নরকবাস
কোথাও ৪০০ মিটার দূরের শৌচাগারে রাত ১০টাতেও লাইন দিতে হয়। কোথাও ঘরের মধ্যেই গবাদি পশু থাকে। এই হাল কামারহাটি পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দিরা কলোনি ও রবীন্দ্রনগর বস্তির।
কামারহাটি পুরভবনের কাছেই রবীন্দ্রনগর বস্তি। দাতিয়া খালের দু’পাশ মিলিয়ে এ বস্তিতে মোট ১০৪টি পরিবার বাস করেন। খালের পূর্ব পাড়ে দরমার ঘুপচি ঘরে ৬৮টি পরিবার বাস করেন। কোনওটি টালির, কোনওটিতে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া। এর তলা দিয়ে গিয়েছে জলের লাইন। লাইন সারাতে মাঝেমধ্যে ঘর ভাঙতে হয়। বর্ষায় খাল উপচে জল ঢুকে যায়। কয়েকটি ঘরে গবাদি পশুও রয়েছে। এখানে প্রায় তিনশো বাসিন্দার জন্য ৪০০ মিটার দূরে মাত্র তিনটি শৌচাগার রয়েছে। মহিলাদের জন্য আলাদা কোনও শৌচাগার নেই।

ইন্দিরা কলোনি
এই বস্তিতেই খালের পশ্চিম পাড়ে ৩৬টি পরিবার বাস করে। অধিকাংশই দরমা ঘর। বর্ষায় চাল ফুটো হয়ে জল পড়ে। কয়েকটি ঘর বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়েছে। মাঝেমধ্যে নিকাশি আটকে যায়। মশা-মাছির উপদ্রবে জেরবার হন বাসিন্দারা। জল সরবরাহের লাইনে নোংরা জল ঢুকে যাওয়ায় মাঝেমধ্যেই বস্তিতে নানা পেটের রোগ ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। মহিলারা খালের উপরে পলিথিনে ঘেরা শৌচাগার ব্যবহার করেন। বাসিন্দা নীলুরঞ্জন দাসের কথায়: “কাউন্সিলরের উদ্যোগে কিছু কাজ হলেও বিএসইউপি প্রকল্পে স্বল্প খরচের বাড়ি তৈরি হয়নি।”
বরাহনগর রেল স্টেশনের কাছে ইন্দিরা কলোনি বস্তি। এখানে বেশ কিছু খাটাল চলে। ঘরের মধ্যেই গবাদি পশু থাকে। খাটালের বর্জ্যে ঘন ঘন নিকাশি আটকে যায় বলে অভিযোগ। তখন তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মশা-মাছির তীব্র সমস্যা। কিছু বাসিন্দা নিজেদের খরচে টালির চালের পাকা বাড়ি করে নিয়েছেন।
কিন্তু বাকিরা দরমার ঘরে বাস করেন। এখানেও বিএসইউপি প্রকল্পে কোনও কাজ হয়নি। বাসিন্দা দেবাশিস বারিক বললেন, “এই বস্তিতে ৭৬টি পরিবার রয়েছে। ৮-১০টি খাটাল চলে। খাটালের বর্জ্যে নিকাশি আটকে যায়। বার বার পুরসভাকে বলেছি। কিন্তু, কোনও কাজ হয়নি।”

রবীন্দ্রনগর

ইন্দিরা কলোনি
১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের দেবযানী চক্রবর্তী বলেন, “রবীন্দ্রনগরের বেশ কিছু পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। সাংসদ তহবিলের অর্থের রাস্তা, নর্দমা আর আলোর কাজ হচ্ছে। রাজীব আবাস প্রকল্পে স্বল্প খরচে বাড়ি তৈরিরও চেষ্টা চলছে।”
কামারহাটির পুরপ্রধান সিপিএমের তমাল দে-র কথায়: “বস্তিগুলিতে নানা সমস্যা রয়েছে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। খাটাল তৈরির জন্য পুরসভা কাউকে অনুমতি দেয়নি। খাটাল মালিকদের আলোচনায় ডাকা হলেও তাঁরা আসেননি। বর্জ্যের জন্য আলাদা চেম্বার করতে বলা হয়েছিল, সেটাও করেননি। কিন্তু পুরসভার একার পক্ষে খাটাল উচ্ছেদ সম্ভব নয়। ফলে নিকাশির সমস্যা প্রায়ই হয়। জমির মালিকানা না থাকলে বিএসইউপি প্রকল্পে বাড়ি পাওয়া যায় না। তবুও চেষ্টা করছি।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.