উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
ডিভাইডারে বিপত্তি
রাস্তার তিন অবস্থা
রাস্তার মাঝখানে আচমকা নীল-সাদা পাঁচিল। কিছু দূর ছেড়ে নীল রঙা লোহার গার্ডরেল। ব্যস্ত সময়ে পথচারী আর গাড়ির ভিড়ে নাভিশ্বাস ওঠা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সরু রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য বসানো হয়েছিল এই ডিভাইডার আর গার্ডরেলগুলি। কিন্তু যান নিয়ন্ত্রণে এগুলো যেমন কার্যত অসুবিধার কারণ হয়েছে তেমনই দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।
প্রশাসনের বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর মতো দিনের বেলা ট্রাফিক পুলিশের নজরদারিতে ডিভাইডার আর গার্ডরেলগুলি যান-শৃঙ্খলা বাড়ালেও রাতে এগুলিই দুর্ঘটনা ঘটায়। গত তিন মাসে শুধু ব্যারাকপুর শহরে বসানো গার্ডরেলে ধাক্কা মেরে জখম হয়েছেন তিরিশ জনেরও বেশি মোটরবাইক আরোহী। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে নতুন করে তৈরি করা একটি ডিভাইডার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাইশ চাকার ট্রেলার। বাকিগুলিও মাঝেমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গাড়িচালকদের অভিযোগ, রাতে অনেক সময় আলো না থাকায় মাঝরাস্তায় বসানো কংক্রিটের ডিভাইডার বা গার্ডরেলগুলি নজরে পড়ে না। বিশেষত রাতে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দ্রুত গতিতে যাওয়ার সময় এই ডিভাইডার বা গার্ডরেলে ধাক্কা লেগে গাড়ির ক্ষতি হওয়ার ঘটনাও প্রায়ই ঘটে।
ব্যারাকপুরে কমিশনারেট গঠিত হওয়ার পরে ট্রাফিক ব্যবস্থাকেই প্রশাসনের মুখ বলে ঘোষণা করা হয়। ট্রাফিককে ঢেলে সাজার কথাও বলেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। ব্যস্ত রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গার্ডরেল বসানোর কাজ শুরু হয় তখন। কিন্তু রাতের অন্ধকারে যখন রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ থাকে না তখন একের পর এক দুর্ঘটনায় পুলিশের টনক নড়ে। বিশেষ বিশেষ সময়ে চেকিং করার পাশাপাশি এক্সপ্রেসওয়ে এবং বি টি রোডের মতো রাজ্য সড়ক ছাড়াও শিল্পাঞ্চলের ব্যস্ত রাস্তাগুলি থেকে গার্ডরেল সরিয়ে নেওয়া হয়। কারণ হিসাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ-ও জানানো হয় যে শিল্পাঞ্চলের রাস্তাগুলিতে ২৪ ঘণ্টা যে পরিমাণ গাড়ির চাপ থাকে তাতে রাস্তা আরও চওড়া না হলে এই গার্ডরেল বা ডিভাইডারের কারণে দুর্ঘটনা এড়ানো মুশকিল।
কিন্তু মাস তিনেক আগে ফের বেশ কয়েকটি জায়গায় নতুন করে ডিভাইডার ও গার্ডরেল বসানো হয়। এর মধ্যে ব্যারাকপুর-বারাসত রোড ও কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থল বা মসজিদ মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম জায়গায় লেন ভাগ করার ফলে মাঝেমধ্যে প্রবল যানজট হয়। পুলিশের দাবি চৌমাথাগুলোতে বেপরোয়া গাড়ি রুখতেই এই ব্যবস্থা। যে জায়গাগুলিতে এই ভাবে লেন ভাগ করা হয়েছে তার আশপাশে একাধিক স্কুল ও পানশালা থাকায় দিনের বেলা যেমন স্কুলপড়ুয়াদের রাস্তা পেরোতে হিমশিম খেতে হয়, তেমনই রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাইক চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এর নিয়ন্ত্রণ কী ভাবে হবে তার জবাব অবশ্য দিতে পারেননি পুলিশকর্তারা। ব্যারাকপুর কমিশনারেটে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য সিভিক পুলিশ নেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ফলে বহু জায়গাতে অরক্ষিত চৌমাথা নিয়ন্ত্রণ করে শুধুমাত্র এই গার্ডরেলগুলি। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘গার্ডরেল ও ডিভাইডারগুলিতে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কী করা যায় সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি। ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করছি।’’

ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.