পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মামলাতেও উঠল সিবিআই তদন্তের প্রশ্ন।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল এ দিন বলেন, কলকাতা হাইকোর্ট এর আগে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য নন্দীগ্রাম, রিজওয়ানুর সমেত একাধিক ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছে। তা হলে এ বার নিরপেক্ষ ভোটের স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিন বিচারপতি। হাইকোর্টের সেই এক্তিয়ার রয়েছে। তাঁর আরও বক্তব্য, রাজ্য সরকার না চাইলেও সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থের মামলা রয়েছে।
এই যুক্তির পাশাপাশি সমরাদিত্যবাবু তাঁর জবাবি সওয়ালে আরও একটি প্রশ্ন তুলেছেন। তা হল: রাজ্য সরকার আর জেলার পুলিশ সুপার কি আলাদা সংস্থা?
প্রসঙ্গটি উঠেছিল গত শুনানির দিনই। বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, রাজ্য সরকার প্রতি বুথে কত জন করে উর্দিধারী পুলিশ রাখছে? তার জবাবে এ দিন বিমলবাবু জানান, রাজ্য সরকার প্রতি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে দুজন করে উর্দিধারী পুলিশ রাখবে। ঘটনাচক্রে এর আগে মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, প্রতি বুথে দু’জন সশস্ত্র পুলিশ প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার শুনানির সময় সেই এসপি এবং বিমলবাবুর বক্তব্যের ফারাক তুলে ধরেন সমরাদিত্যবাবু। প্রতি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে দুই, তিন, এমনকী পাঁচটি পর্যন্ত বুথ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে যেখানে পাঁচটি বুথ, সেখানে মোট দশ জন সশস্ত্র পুলিশ থাকার কথা। মুর্শিদাবাদ, যেখানে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে সব থেকে বেশি রক্তক্ষয় হয়েছিল, সেখানকার এসপি এমনটাই বলেছিলেন। কমিশনও সেটাই বলছে। কিন্তু এজি-র হিসেব ধরলে ওই ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে দু’জন সশস্ত্র পুলিশ কর্মী হলেই যথেষ্ট।
পাশাপাশি সমরাদিত্যবাবুর আরও যুক্তি, ডিজি সিএপিএফ চেয়েছেন। পুলিশ সুপারেরা প্রতি বুথে অন্তত দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ চেয়েছেন। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে একটি সাংবিধানিক স্বশাসিত সংস্থা নিরপেক্ষ, অবাধ মুক্ত নির্বাচনের স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি করেছেন। এজি জানান, কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে রাজ্যের ১৭২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে। ২০০৩ ও ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগেনি। সমরাদিত্যবাবু উত্তরে বলেন আগের দু’বারে লাগেনি, তাই এ বারে লাগবে না এটা শিশুসুলভ বক্তব্য। কমিশনের কাজ, বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করে ঠিক করা, কোন বাহিনী লাগবে। সেটারও কিছু পদ্ধতি আছে। জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আলোচনা করে তার পরেই পরিস্থিতি বিচার করা হয়।
রাজ্যের বুথের সংখ্যা ৫৭ হাজারের বেশি। প্রতি বুথে দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ থাকলে লাগবে ১ লক্ষ ২০ হাজার। এর পরে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা, প্রার্থীদের নিরাপত্তা, ব্যালট বাক্স পাহারা এ সবের জন্য আরও বাহিনীর প্রয়োজন। তাই কমিশন ১ লক্ষ ৭৬ হাজার নিরাপত্তা কর্মী চেয়েছে। রাজ্যের যা আছে, তা দিয়ে এই কাজ হবে না। তাই ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী অর্থাৎ ৮০ হাজার নিরাপত্তা রক্ষী চাওয়া হয়েছে। রাজ্যের যা আছে, তার সঙ্গে এই ৮০ হাজার যোগ হলে তবেই প্রতি বুথে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী দেওয়া সম্ভব। ভোটদাতারা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, এটা নিশ্চিত করা কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
|