সরকারের সিদ্ধান্তে প্রশ্নও
দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে জেলায় জেলায় সাফল্যের প্রদর্শনী
দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে তৃণমূল সরকারের সাফল্যের ছবি তুলে ধরতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার রাজ্য জুড়ে প্রদর্শনী আয়োজনের পরিকল্পনা করেছেন। তাঁর নির্দেশ বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তির আকারে বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। রাজ্য প্রশাসনের একাংশের মতে, পানাগড়ের মাটি উৎসবের পরে এ হল সরকারের আর এক ‘বিকেন্দ্রীকৃত উৎসব।’ আর্থিক সঙ্কটকালে এ হেন উৎসব-প্রদর্শনীর পিছনে ঢালাও খরচের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
২০১১-র ২০ মে পশ্চিমবঙ্গের মসনদে শপথ নিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। গত বছর সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজ্য সরকার বই প্রকাশ করেছিল। পাশাপাশি ‘প্রগতি উৎসব’-এর আসর বসেছিল কলকাতার মিলনমেলা প্রাঙ্গণে। প্রথম বর্ষপূর্তিতে রাজ্যের অন্য কোথাও তেমন কোনও সরকারি উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়নি। তা হলে এ বার কেন? মহাকরণের কর্তাদের একাংশের মতে, এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন। গার্ডেনরিচ বা প্রেসিডেন্সি-কাণ্ড সহ কয়েকটি ঘটনার জেরে সরকার অস্বস্তিতে ছিল। তার উপরে সম্প্রতি সারদার মতো অর্থলগ্নি সংস্থাকে ঘিরে উদ্ভুত সঙ্কট তা আরও বাড়িয়েছে। এ দিকে রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন যে কোনও দিন হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূল সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে রাজ্যের সর্বত্র ‘উন্নয়ন ও সাফল্যের’ প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী জোর দিতে চাইছেন।
তাই বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানকে শুধু কলকাতার গণ্ডিতে বেঁধে না-রেখে ‘সাফল্য প্রদর্শনীর’ লক্ষ্যে বেছে নেওয়া হয়েছে মূলত জেলাগুলিকে। মুখ্যসচিবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের দু’বছর পূর্ণ হবে ২০ মে। কিন্তু এই উপলক্ষ্যে জেলায় জেলায় প্রদর্শনী শুরু হয়ে যাবে ৫ মে থেকে। আজ, শুক্রবারই যাতে জেলা প্রশাসন প্রদর্শনীর জায়গা চিহ্নিত করার কাজে নামে, সেই নির্দেশও রয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। প্রদর্শনীগুলি চলবে টানা সতেরো দিন, ২১ মে পর্যন্ত। ৩০টি জায়গায় প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। কী থাকবে সেখানে? রাজ্য প্রশাসনের এক মুখপাত্র জানাচ্ছেন, গত দু’বছরে সরকারের বিভিন্ন দফতর কী কাজ করেছে, তাতে সাফল্য কতটা এসেছে, আগামী পরিকল্পনা কী প্রদর্শনীতে সবই তুলে ধরা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ: প্রদর্শনীস্থলে ফি সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে, যাতে সামিল করতে হবে স্থানীয় শিল্পীদের। ৯ মে প্রতিটি প্রদর্শনীতে ঘটা করে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনেরও নির্দেশ রয়েছে।
কোন দফতর কোথায় প্রদর্শনী সাজাবে, বিজ্ঞপ্তিতে তা-ও বলে দিয়েছেন মুখ্যসচিব। কী রকম? যেমন, কলকাতার মেয়ো রোডে গাঁধীমূর্তির সামনে থাকবে ক্রীড়া, যুবকল্যাণ, শ্রম ও আবাসন দফতরের প্রদর্শনী। স্বরাষ্ট্রের প্রদর্শনী পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে। শিল্প ও তথ্য-প্রযুক্তিকে ব্যারাকপুর-নৈহাটির মধ্যে কোনও জায়গা বেছে নিতে বলা হয়েছে। পুর-অর্থ-ভূমির অনুষ্ঠান হবে খড়দহ-পানিহাটির মধ্যে। বর্ধমানে কৃষি, সিঙ্গুরে পঞ্চায়েত, হাওড়া ময়দানে পরিবহণ, সল্টলেকে স্বাস্থ্য এবং বারাসতে শিক্ষা দফতরের প্রদর্শনী চলবে। ক্ষুদ্রসেচ থাকবে পানাগড়ে, পার্বত্য বিষয়ক দফতর দার্জিলিঙে, ক্ষুদ্রশিল্প উলুবেড়িয়ায়। জলপাইগুড়িতে বন, বোলপুরে পর্যটন, রানাঘাটে নগরোন্নয়ন ও ক্যানিংয়ে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। সব প্রদর্শনীর খরচ জোগাবে সংশ্লিষ্ট দফতর। সুষ্ঠু ভাবে কাজ পরিচালনার লক্ষ্যে এক জন করে নোডাল অফিসার নিযুক্ত করতে হবে।
প্রশ্ন উঠেছে, আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত সরকার এত টাকা জোগাবে কোথা থেকে? রাজ্য প্রশাসনের একটি মহলের ব্যাখ্যা, জনসংযোগমূলক কাজে যুক্ত কিছু কিছু দফতরে প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য পরিকল্পনা খাতে টাকা ধরা থাকলেও অধিকাংশ দফতরের তেমন সংস্থান নেই। তাই তাদের পরিকল্পনা-বহির্ভূত খাত (মূলত বেতন, পেনশনের জন্য নির্দিষ্ট) থেকে টাকা জোগাতে হবে, বা অন্য খাতের বরাদ্দ ছেঁটে সেই টাকায় প্রদর্শনী করতে হবে। এ ছাড়া উপায় নেই।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.