নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ |
এ যেন উলটপুরাণ। দিনের আলো ফুটলেই নির্জন হয়ে আসছে নগর। বেলা যত গড়াচ্ছে ততই শুনশান পথঘাট। দোকান বাজারে নেই ক্রেতার ভিড়। স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড বা খেয়াঘাটে নিত্যযাত্রীদের চেনা জমাট ভিড়টা বেশ হালকা। দেশি বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে জমজমাট মায়াপুর, নবদ্বীপের প্রতিটি দুপুরই এখন যেন বন্ধের দুপুর। পর্যটক দূরে থাক, নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া পথে নামছেন না স্থানীয় মানুষজনও।
এক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত বেড়ে চলা গরমের দাপটে বিপর্যস্ত নবদ্বীপ মায়াপুরের পর্যটনও। সপ্তাহ শেষের পর্যটক যাঁরা কম দূরত্ব থেকে দু’এক রাতের জন্য বেড়াতে আসেন কিংবা ভিন রাজ্যের পর্যটকদের বাস বোঝাই বড় দল কার্যত অদৃশ্য। যার প্রভাব হোটেল থেকে স্থানীয় বাজার প্রকট।
মায়াপুরের প্রধান আকর্ষণ ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘‘এই গরমে পর্যটকের আসা ৭৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। দোলের পরেও অন্যান্য কিছু উৎসবের জন্য কিছু পর্যটক ছিলেন। কয়েকদিন আগেও কিন্তু চার পাঁচদিন ধরে শুনশান। এই গরমে দেশের মানুষই যখন আসছেন না, তখন বিদেশিদের তো প্রশ্নই ওঠে না।’’ বেঙ্গল হোটেলিয়ার্সের মায়াপুরের সম্পাদক প্রদীপ দেবনাথ বলেন, “গত শনি-রবি একদম ফাঁকা গিয়েছে। মে দিবসের ছুটি থাকায় বুধবার নিয়ে একটা প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু একজনও আসেননি। এখন মায়াপুর দেখলে চিনতে পারবেন না।’’ |
শুধু রবিবার বলে নয় যে কোন ছুটির দিনেই পর্যটকদের আপাতত দেখা মিলবে না বলেই অনুমান হোটেল ব্যবসায়ীদের। পর্যটকহীন এই মরসুমে বাধ্য হয়েই হোটেলের ভাড়া কমিয়ে দিয়েছেন মালিকেরা। শুধু পর্যটনকেন্দ্রের হোটেলগুলিতেই ভিড় কমছে এমন নয়, কাজের প্রয়োজনে জেলা সদরে রাত্রিবাস করা মানুষের সংখ্যাও কমছে। হোটেল মালিকদের রাজ্য সংগঠনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, “কৃষ্ণনগরের হোটেলে সাধারণত কাজের প্রয়োজনে মানুষ রাত্রিবাস করেন। গরম পড়ার সঙ্গে কমে গিয়েছে তার সংখ্যাও।’’
গরমের হাত থেকে রেহাই পায়নি প্রাণীরাও। কৃষ্ণনগরের বারোদোলের মেলায় আসা সার্কাসের প্রাণীদের ঠান্ডা রাখতে নাজেহাল সার্কাস কর্তৃপক্ষ। ম্যাকাও এবং কুকুরের খাঁচার সামনে বসানো হয়েছে স্ট্যান্ড ফ্যান। অন্যদিকে জলহস্তির চৌবাচ্চায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় জল বদলে তাকে ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কাজের সময় বদলে ফেলেছেন নির্মাণ কর্মীরাও। নবদ্বীপ পুরসভার এক ঠিকাদার প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, “ ভোর ছ’টা থেকে দুপুর দুটো অথবা বিকেল চারটে থেকে রাত বারোটা, কাজগুলো এই সময়ের মধ্যেই হচ্ছে।’’ নদিয়া জেলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “রোদের তাপ বাড়ার কারণেই সাধারণ সময়ে ক্রেতারা কম বেরোচ্ছেন।” মুচকি হেসে তাঁর সংযোজন, ‘‘ অন্যান্য ক্ষেত্রে একটু মন্দা থাকলেও এসি, সফট ড্রিঙ্ক থেকে পাখা, ছাতা, টুপি, রোদচশমার মতো গরম ও রোদ ঠেকানোর সরঞ্জামের বিক্রি কিন্তু যথেষ্ট ভাল।’’ |
নবদ্বীপ-মায়াপুর |
• হোটেলের ভাড়া কমে গিয়েছে অর্ধেক।
• নবদ্বীপ-মায়াপুরে গরমে পর্যটকের সংখ্যা কমে গিয়েছে ৭৫ শতাংশ।
• নির্মাণকর্মীরা তাঁদের কাজের সময় বদলে নিয়েছেন।
• বিক্রি বাড়ছে গরম ও রোদ ঠেকানোর সরঞ্জামের।
• সার্কাসের প্রাণীদের ঠাণ্ডা রাখার জন্য নাজেহাল সার্কাস কর্তৃপক্ষ।
• মঠ, মন্দিরে ভক্তদের আনাগোনাও নিতান্তই কম। |
|