নিজস্ব সংবাদদাতা • মালবাজার |
কুলচুম খাতুন আর মহম্মদ ফয়জল। এই দুই ভাইবোনকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ির চুইয়াবস্তির দম্পতি মহম্মদ জসিয়ার আর ফতেমা বেগম। কুলচুম আর ফয়জল দুইজনেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। কুলচুমের বয়স ১২ বছর। সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ১০ বছরের ফয়জল পড়ছে চতুর্থ শ্রেণিতে। মহম্মদ জসিয়ার পেশায় দিনমজুর। এই দুই সন্তান ছাড়াও দম্পতির আরও একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। তারা অবশ্য সুস্থ। কুলচুম, ফয়জলের জন্মের পরেই থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’র সংসারে দুটি ছেলেমেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়ে ওই দম্পতির।
দুই সন্তানকে নিয়মিত রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু আর কত দিন পারবেন তা নিয়েই এখন অনিশ্চতা বাঁসা বাধছে। ফতেমা বেগম জানান, প্রতিমাসেই ছেলে মেয়েকে নিয়ে শিলিগুড়ি ছুটতে হয়। যাতায়াত, চিকিৎসা, রক্ত জোগাড় করা-সহ সব মিলিয়ে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে যায়। |
কুলচুম ও আফজল। —নিজস্ব চিত্র |
টাকার জোগাড় হতে দেরি হলেই ছেলে মেয়ে দুটো নেতিয়ে পড়তে থাকে। প্রশাসন স্তরে ঘুরে সাহায্য মেলেনি।”
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ডুয়ার্স সফরের সময় তাঁর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টাও করেন জসিয়ার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়নি। তাঁর আক্ষেপ, “১২ কিমি দূরে থাকা মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য ব্যবস্থা নেই। তা থাকলে প্রতি মাসে বাড়তি খরচ করে ৪৫ কিমি দূরের শিলিগুড়ি ছুটতে হত না। মুখ্যমন্ত্রীকে সব বলতাম।”
সপ্তম শ্রেণিতে পড়া কুলচুমের বরাবরই পড়াশুনো করতে ভালো লাগে। সে ওদলাবাড়ির সুনীল দত্ত স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ে। কুলচুম জানায়, শরীরে রক্ত কমে গেলেই আমার ও ভাইয়ের খুব ঘুম পায়। পড়ায় মন বসে না। হাঁটতেও ইচ্ছা করে না। তখন বাবা-মা শিলিগুড়ি নিয়ে যায়। জসিয়ারের বক্তব্য, “সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় তেমন খরচ না লাগলেও আনুসঙ্গিক যাতায়াত খরচের জন্যে মাসে অন্তত দু হাজার টাকা লাগে। সরকারি অনুদান না পেলে তাঁর পক্ষে সংসার চালিয়ে দু’টি ছেলেমেয়ের চিকিৎসা চালানো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আর কতদিন পারব না জানি না। এর পরে ছেলেমেয়ে দুটোর কী হবে তা ঈশ্বরই জানেন।” |