পোড়া বস্তিতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পুরমন্ত্রী
ত ২০ নভেম্বর মহেশতলার ওই বস্তির আগুনে চার বছরের নাতিকে হারিয়েছিলেন ওমিছা বিবি। সাড়ে তিন মাস হন্যে হয়ে ঘুরেও এখনও মেলেনি তার ‘ডেথ সার্টিফিকেট’।
রবিবার রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রীকে নাগালে পেয়ে তাই একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন ষোলো বিঘা বস্তির ওই প্রৌঢ়া। এ দিন দুপুরে ওই পোড়া বস্তিতে পৌঁছে বাসিন্দাদের ক্ষোভের ‘আঁচ’ ভালই টের পান পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। অভিযোগ, ৩৬ ঘণ্টা পরেও প্রশাসনের তরফে সাহায্য বলতে মিলেছে শুধু ত্রিপল আর খাবার। বাঁশ নেই, তাই বাসিন্দারা অনেকেই ত্রিপল টাঙিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করতে পারেননি।
এ দিন দুপুরে বিধ্বস্ত ওই বস্তি পরিদর্শনে গিয়ে সরকারকে বিঁধেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী একে ছোট ঘটনা বলছেন। কাউকে আড়াল করতে বা প্রোমোটিং-এর জন্যই কি এটা বলা হয়েছে?” ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি দীপাদেবী অগ্নিকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তেরও দাবি জানান। দীপাকে লক্ষ করে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান দেন তৃণমূল সমর্থকেরা। শনিবার ঘটনাস্থলের আশপাশে তৃণমূল কর্মীদের দেখা না গেলেও এ দিন সকাল থেকে দলীয় পতাকা হাতে হাজির ছিলেন শ’খানেক তৃণমূল কর্মী।
ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের কথা বলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও। তিনি বলেন, “মহেশতলায় আগুন লাগানো হয়েছে। ঝুপড়িবাসীদের উচ্ছেদ করতেই তা ঘটানো হয়েছে। অভিসন্ধিমূলক এই কাজের তীব্র নিন্দা করছি।” মুখ্যমন্ত্রীর ‘ছোট ঘটনা’র মন্তব্য বস্তিতেও সমালোচনার মুখে পড়েছে। এলাকার কয়েক জনের মন্তব্য, “আগুনে এখানকার সবাই পুড়ে মরলে কি বড় ঘটনা হত?”
পুড়ে যাওয়ার পরের দিন মহেশতলা বস্তিতে। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র
গার্ডেনরিচ কাণ্ডের পরে কিছুটা অন্তরালে চলে যাওয়া পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন আড়াইটে নাগাদ মহেশতলায় যান। সঙ্গে ছিলেন মহেশতলার পুর-চেয়ারম্যান দুলাল দাসের স্ত্রী তথা বিধায়ক কস্তুরী দাস। ছিলেন মেটিয়াবুরুজের বিধায়ক মমতাজ বেগম এবং গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে বিতর্কে চলে আসা কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলও। মন্ত্রীর সামনে ক্ষোভ দেখাতে থাকা রাকিয়া বিবি, শাহিদা বিবিদের পুরমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই আমি এসেছি।” তাঁর আশ্বাস, সোমবার থেকেই পোড়া বস্তির বাসিন্দাদের জন্য ‘অগ্নিরোধক’ বাড়ি তৈরি শুরু হবে। বসবে নলকূপও। লাগোয়া কেএমডিএ-র জমিতেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হবে। ফিরহাদের কথায়, “এ জমির কিছুটা রেলের, কিছুটা কেএমডিএ-র। তবে যারই জায়গা হোক, গরিবদের বাসস্থান গড়ে দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশও তা-ই।” সোমবারই এলাকায় পুলিশ-ফাঁড়ি চালু হবে বলেও জানান পুরমন্ত্রী। এ সবের মধ্যেই স্থানীয় কয়েক জন অভিযোগ করেন, “পুর-চেয়ারম্যান দুলাল দাসের নেতৃত্বেই আগুন লাগানো হয়েছে। আগের বারও একই ঘটনা ঘটেছে। বারবার আগুন লাগানো হচ্ছে এই বস্তিতে।” তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিও তোলেন বাসিন্দারা। ক্ষোভ প্রশমনে মন্ত্রী বলেন, “সরকার এ বার ঘরগুলো এমন ভাবে তৈরি করে দেবে, যাতে আগুনে না পোড়ে।”
মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হতে পারেননি মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, “আগের অগ্নিকাণ্ডের পরে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঝুড়ি-ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন। কিছুই হয়নি। এ বার মন্ত্রীর কথায় ভরসা করি কী করে?” নাতির ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ না-পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে ওই সময়েই ববির সামনে আসেন ওমিছা বিবি। ইমতিয়াজের মা সাবিনারও অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনই এর জন্য দায়ী। পাশে দাঁড়ানো পুলিশকর্তাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন পুরমন্ত্রী।
প্রায় একঘণ্টার ‘সফরে’ পুরমন্ত্রী বস্তির যে দিকেই গিয়েছেন, সেখানেই তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় পুর-বোর্ড চেয়ারম্যান দুলাল দাসের বিরুদ্ধে নালিশ শুনেছেন। সতর্ক পুরমন্ত্রী বলেন, “থানায় এফআইআর কেউ করতেই পারেন। প্রশাসন তা দেখবে। পুলিশ, দমকল, ফরেন্সিক সকলেই তদন্ত করবে। এ নিয়ে আমার কিছু জানা নেই। বলারও নেই।”
শনিবার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং এ দিন দীপা দাসমুন্সির পরিদর্শনকে এক হাত নেন ফিরহাদ। তাঁর দাবি, রাজনীতি করতেই তাঁরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। যা সাহায্য করার, তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই করবেন বলে বস্তিবাসীদের জানিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী ফিরহাদ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.