প্রতি মুহূর্তে আশা-আশঙ্কায় দুলছে শেয়ার বাজার। একদিন চরম নিরাশায় পতন, তো পরের দিনই নতুন আশায় ভর করে উত্থান। লগ্নিকারীরা দিশেহারা। এই রকম বাজারে লগ্নিতে ঝুঁকিও প্রবল। ১৯ তারিখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমাবে কি না, তা এখন বাজারের কাছে বড় প্রশ্ন। যখনই অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান সুদ হ্রাসের পক্ষে সওয়াল করছে, তখন বাজার উঠছে। পরের দিনই হয়তো মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান জল ঢেলে দিচ্ছে সব আশায়। মঙ্গলবার সুব্বারাও বলবেন শেষ কথা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত ছোট মেয়াদে বাজারের গতিপথ ঠিক করে দেবে। মঙ্গলবার বাজারের কাছে কতটা মঙ্গলময় হয়, তা-ই এখন দেখার।
বাজারের কাছে পরের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ২০১২-’১৩ সালের কোম্পানি ফলাফল এবং বর্ষার আগাম ইঙ্গিত। ১৫ মার্চ ছিল আগাম কর জমা করার শেষ দিন। জমার পরিমাণ দেখে অনুমান করা যেতে পারে, কোন কোম্পানি কী রকম ফলাফল পেশ করবে। মাসখানেকের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে ফলাফল প্রকাশের পালা। পাশাপাশি, আবহাওয়া দফতরের প্রাথমিক খবর হল, এ বার বর্ষা স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকতে পারে এবং খরা পরিস্থিতির সম্ভাবনা নেই। ভারতীয় অর্থনীতিতে এ খবরের গুরুত্ব অপরিসীম। আরও নিশ্চিত খবর পাওয়া যাবে আগামী মাসের শেষে। অর্থাৎ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতির পর বাজারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বর্ষা এবং কোম্পানি ফলাফল।
মার্কিন অথর্নীতিতে অনিশ্চয়তা কমার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব বাজারে ক্রমাগত কমছে সোনার দাম। এর আঁচ এসে লেগেছে ভারতেও। ৩২ হাজার থেকে দাম নেমে এসেছে ২৯ হাজারের ঘরে। এতে মেয়ের বাবারা খুশি হলেও লগ্নি হিসাবে যাঁরা গত এক বছরে সোনা কিনেছিলেন, তাঁরা কিছুটা হতাশ। লক্ষণীয়, দাম পড়েছে ভারতে বিয়ের মরসুমেও। এখন চৈত্র মাস। চাহিদায় ভাটা পড়ার সম্ভাবনা। ফলে দাম আরও একটু কমতেই পারে।
অন্য দিকে দাম এতটা নেমে আসায় চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা নতুন করে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে ভাল ফসল উঠলে সোনা কেনার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। খবর আসছে, সম্প্রতি দাম কমায় গ্রামাঞ্চলে চাহিদা বেড়েছে ১০ থেকে ১৫%। বর্ষা ভাল হলে চাহিদা উপরের দিকেই থাকবে। ফলে আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে সবার প্রিয় এই হলুদ ধাতুর দাম।
আর্থিক বছর শেষ হতে আর দু’সপ্তাহও বাকি নেই। যাঁদের কর সাশ্রয়ের জন্য এখনও লগ্নি করা হয়ে ওঠেনি, তাঁদের তা সেরে ফেলতে হবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই। চাকরিজীবীরা সঞ্চয় সেরে ফেললেও স্বনির্ভর মানুষের অনেকেই বসে আছেন একদম শেষ বেলায় লগ্নি করবেন বলে। ৮০সি ধারার অধীনে যা যা প্রকল্প আসার কথা ছিল, তা সবই এসে গিয়েছে বাজারে।
বছরের একদম শেষ দিকে এলআইসি এনেছে কর সাশ্রয়কারী একক প্রিমিয়াম প্রকল্প ‘জীবন সুগম’। করের সুবিধা পাওয়া যাবে ৮০ সি এবং ১০ (১০ ডি) ধারায়। অর্থাৎ লগ্নির সময়ে করছাড় এবং প্রাপ্তির সময়ে করমুক্ত আয়। কেনা যাবে ৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে। মেয়াদ ১০ বছর। পলিসি চালু থাকাকালীন কোনও গ্রাহকের মৃত্যু হলে নমিনি পাবেন পলিসি অঙ্কের ১০ গুণ পরিমাণ টাকা। জীবিত থাকলে মেয়াদ শেষে গ্রাহক পাবেন মেয়াদ পূর্তিকালীন অঙ্ক (ম্যাচিওরিটি সাম অ্যাশিওর্ড)। যেমন ৮ বছর বয়সে কারও নামে যদি ১ লক্ষ টাকা মূল্যের পলিসি নেওয়া হয়, তবে তার জন্য এককালীন প্রিমিয়াম পড়বে ৫৫,০৮১ টাকা। মেয়াদ শেষে পাওয়া যাবে করমুক্ত ১ লক্ষ টাকা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে প্রিমিয়ামের অঙ্ক। যেমন ৪৫ বছর বয়সে কেউ যদি ১ লক্ষ টাকার পলিসি নেন, তবে তাঁকে প্রিমিয়াম দিতে হবে ৭৫,৬৫৮ টাকা। ১.৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি মূল্যের পলিসি কিনলে হাতে আসবে কিছু বেশি টাকা। মেয়াদ শেষে প্রাপ্য পলিসি অঙ্ক ছাড়াও পাওয়া যেতে পারে ‘লয়্যালটি অ্যাডিশন্স’। পলিসি জমা রেখে ঋণ নেওয়ার সুবিধা মিলবে। দেখা যাচ্ছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাল রকম বেড়ে উঠছে প্রিমিয়ামের অঙ্ক। ফলে কমতে পারে আকর্ষণ। কিন্তু এক দিকে কর ছাড় এবং অন্য দিকে পলিসির ১০ গুণ অঙ্ক ঝুঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অনেকটাই সামাজিক সুরক্ষা দেবে গ্রাহককে। তবে ঝুঁকির মেয়াদ আরও ৫/১০ বছর বেশি হলে (অর্থাৎ যে-সময়ে মানুষের জীবনে সত্যিকারের ঝুঁকি থাকে) প্রকল্পটির আকর্ষণ হয়তো বাড়ত। বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৪৫ হওয়ায় বহু কর্মরত মানুষ এর সুযোগ নিতে পারবেন না। যাঁদের জীবনের ঝুঁকি কম, তাঁরাই এই পলিসির আওতায় আসবেন।
কর সাশ্রয়ের পালা শেষ হওয়ার পরপরই প্রস্তুতি নিতে হবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার। জোগাড় করতে হবে টিডিএস সার্টিফিকেট। আয়কর দফতরের ওয়েবসাইটে দেখে নিতে হবে কেটে নেওয়া করের তথ্য ফর্ম ‘২৬ এ’- তে উঠেছে কি না। না হলে ওঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবর্তন আসছে রিটার্ন-এর ফর্ম-এ। এ মাসের শেষে প্রকাশ করা হবে নতুন ফর্ম। হয়তো দিতে হবে নতুন তথ্য ও সব রকম সম্পদের বিবরণ। অর্থাৎ এ বার রিটার্ন ফাইল করতে হবে সব কিছু ভাল করে দেখেশুনে। |