রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ। অশক্ত হাতে ভর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। লোকজনের কাছে ইশারায় দু’টো খাবার ভিক্ষা করছিলেন। দেখে আর থাকতে পারলেন না তরুণী। বৃদ্ধকে তুলে নিলেন তাঁর গাড়িতে। সোজা হাজির হলেন শুলিপুকুরের একটি নার্সিংহোমে। বৃদ্ধকে ভর্তি করালেন সেখানে। তার কয়েক দিন বাদে নার্সিংহোম থেকে তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন তাঁর বোন মর্জিনা বিবির সেই পরিচিত আশ্রয়ে। বৃদ্ধের নাম শেখ সিরাজুল। বাড়ি বাঁকুড়ার ইন্দাসে। আর তরুণীর নাম সাবা মির্জা। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার স্ত্রী। এই প্রথম নয়, এর আগেও বেশ কয়েক জন পথ চলতি অসহায় মানুষকে তুলে নিয়ে এসে সুস্থ করে তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। সাহায্য পেয়েছেন স্বামীরও। জানালেন সাবা। |
গত ১১ মার্চ সিরাজুলবাবু ওরফে সুকুর মল্লিককে কোনও রকমে হেঁটে হেঁটে বাজেপ্রতাপপুর রেল ব্রিজ পার হতে দেখেন সাবা। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান শুলিপুকুরের ওই নার্সিংহোমে। মানসিক ভাবেও খানিকটা ভারসাম্যহীন ছিলেন। চিকিৎসায় অবশ্য সেরে উঠছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে সেখানেই ভর্তি ছিলেন গলসির রামগোপালপুরের বাসিন্দা খাদেজা বিবি। তিনি আবার সিরাজুলের বোন মর্জিনা বিবির প্রতিবেশী। তিনি চিনতে পারেন সিরাজুলকে। তড়িঘড়ি খবর দেন মর্জিনাকে, দাদার সন্ধান মিলেছে। শনিবার সকালে মর্জিনা এসে নিয়ে গিয়েছেন তাঁর দাদাকে।
কী হয়েছিল সিরাজুলের? মর্জিনা জানান, পেশায় সীবনশিল্পী সিরাজুল। প্রায় দশ বছর আগে স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। তার পর থেকেই মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন সিরাজুল। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক মাত্র ছেলেও কিছু উপার্জন করেন। তবে ঘরের মায়া ছেড়েছেন সিরাজুল। মাঝে মধ্যেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়তেন। হন্যে হয়ে রাস্তা দিয়ে ঘুরতেন। বারে বারে তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখতেন মর্জিনা। তবে দশ মাস আগে ফের তাঁর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান সিরাজুল। শনিবার সকালে দাদাকে দেখতে পেয়ে আনন্দিত তিনিও। এত দিনে খানিকটা হলেও সুস্থ হয়েছেন সিরাজুল। চিনতে পেরেছেন তাঁর বোনকে। এ দিন বোনকে নিয়ে ফেরার পথে ঠোঁট কেঁপে উঠল বৃদ্ধের। শুধু হাত নাড়ালেন। সাবা বললেন, “দরকার হলে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন।” ওষুধ আর ফল কেনার টাকাও দিলেন কিছু। জেলার এসপি সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বললেন, “এই নিয়ে আমরা রাস্তা থেকে পাঁচ মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিতে পেরেছি। সবাইকেই রাস্তা থেকে উঠিয়ে এনেছিল সাবা।” সাবা বলেন, “কাউকে রাস্তায় এমন করে ঘুরে বেড়াতে দেখলে কষ্ট হয়। চেষ্টা করি, ওঁদের জন্যে কিছু করার।” |